উত্তর ফ্রান্স থেকে ছোট নৌকায় যুক্তরাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করা শিশু ও নবজাতকদের উপর কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ব্যবহার এবং ডিঙ্গি নৌকা ছুরি দিয়ে কেটে দেওয়ার মতো সহিংস কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফরাসি বেসরকারি সংস্থা Project Play সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাজ্যে ছোট নৌকায় পারাপারের সংখ্যা ১৯,৯৮২-তে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি। এ বৃদ্ধির পেছনে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সরকারের কঠোর সীমান্ত নীতিকে দায়ী করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
তহবিলপ্রাপ্ত ফরাসি পুলিশ বাহিনী, যারা যুক্তরাজ্য সরকারের কোটি কোটি ইউরো সহায়তায় পরিচালিত, শিশুদের প্রতি আগ্রাসী আচরণ করছে বলে অভিযোগ। এক ১৩ বছর বয়সী শিশু সংস্থাটিকে জানিয়েছে, “পুলিশ ছুরি ও পিপার স্প্রে বের করে, তারপর বন্দুক। আমি তো শিশু, এটা কেন করছেন?”
২০২৪ সালকে শিশুদের জন্য সবচেয়ে মর্মান্তিক বছর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। অন্তত ১৫ জন শিশু চ্যানেল পার হতে গিয়ে মারা গেছে, যার মধ্যে তিনজন পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছে। তাদের বয়স তিন দিন থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। এই সংখ্যা গত চার বছরের মোট শিশুমৃত্যুর চেয়েও বেশি।
Project Play সরাসরি যুক্তরাজ্য সরকারের কঠোর নীতিকে এই সহিংসতা ও মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছে। সংস্থাটির এক কর্মী বলেন, “একবার একটি তিন বছরের শিশু খেলনার গাড়িগুলোকে পুলিশের মতো সাজিয়ে চিৎকার করছিল—সে ছিল পুরোপুরি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।”
ফরাসি রেড ক্রস ২০২৪ সালে ৮৭৯ জন অনাথ শিশুকে শনাক্ত করেছে, যাদের মধ্যে অনেকেই সুদানসহ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে এসেছে এবং পাচারকারীর অর্থ না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে লরির নিচে লুকিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করেছে।
ফরাসি এনজিও Utopia 56 জানিয়েছে, ৬৫৯টি ব্যর্থ পারাপারে ১১৩১ জন শিশু জড়িত ছিল, যার মধ্যে ২৬৮ জন ছিল একাকী।
প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, সীমান্তে সহিংসতা বন্ধ, স্বচ্ছ তথ্য প্রকাশ, ফরাসি পুলিশের জীবন্ত শিবিরে অভিযান নিষিদ্ধ, এবং যুক্তরাজ্যের অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি, উভয় দেশে নিরাপদ ও সহজ আশ্রয় প্রার্থনার পথ তৈরি করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
২০২৪ সালে যারা মারা গেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে: আবাদেহ, মোহাম্মদ, রুলা, সারা, আব্দুলআজিজ, মোহাম্মদ, ইশানউল্লাহ, সাবিলা, মেরি, মনসুর, মরিয়ম, সালাহ, এবং নামহীন আরও অনেক শিশু। Project Play এই প্রতিবেদনটি তাদের প্রতি উৎসর্গ করেছে।
এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য যুক্তরাজ্যের হোম অফিস এবং ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে যদিও কেউ প্রতিক্রিয়া জানায় নাই।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০২ জুলাই ২০২৫