কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম জিবি নিউজ (GB News)–এর নিয়মিত দর্শকরা অভিবাসনসংক্রান্ত বাস্তব তথ্যের চেয়ে ভুল ধারণাতেই বেশি বিশ্বাস করেন। জরিপে দেখা গেছে, ৮৪ শতাংশ জিবি নিউজ দর্শক মনে করেন দেশের নিট অভিবাসন বেড়েছে, যদিও সরকারি তথ্য অনুযায়ী গত বছর তা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
গবেষণাটি সম্প্রচার মাধ্যমের নিরপেক্ষতা ও জনগণের তথ্য-উপলব্ধি নিয়ে তৈরি করা হয়। সেখানে দেখা যায়, আইটিভি দর্শকদের মধ্যে ৭১ শতাংশ, বিবিসিতে ৬২ শতাংশ এবং চ্যানেল ৪–এর ৫১ শতাংশ অভিবাসন বৃদ্ধির ভুল ধারণা পোষণ করেন—তবে জিবি নিউজে এই হার সবচেয়ে বেশি।
এই ফলাফলকে কেন্দ্র করে আবারও সামনে এসেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের রাজনৈতিক প্রভাব ও নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক। সংস্কৃতিমন্ত্রী লিসা ন্যান্ডি বলেছেন, “রাজনৈতিক প্রচার ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ একসাথে মিশে যাচ্ছে, যা গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য বিপজ্জনক।” তিনি যোগ করেন, জনগণ সঠিক তথ্য ও উচ্চমানের নিরপেক্ষতা প্রত্যাশা করে, তাই গণমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
গবেষণায় আরও উঠে আসে, ব্রিটিশ জনমতের বড় একটি অংশ রাজনীতিবিদদের সমসাময়িক বিষয়ভিত্তিক টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনার বিরোধিতা করে। প্রায় ৫১ শতাংশ মানুষ এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে ‘না’ বলেছেন, যেখানে মাত্র ২৯ শতাংশ বর্তমান নিয়মের পক্ষে। অনিশ্চিতদের বাদ দিলে এই বিরোধিতার হার দাঁড়ায় ৬৪ শতাংশ।
এই ফলাফল অফকমের পূর্ববর্তী রিপোর্টের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, যেখানে বলা হয়েছিল “রাজনীতিবিদদের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা বন্ধ করা নিয়ে জনগণের মধ্যে কোনো ঐক্যমত নেই।” তবে নতুন গবেষণা দেখাচ্ছে, সাধারণ জনগণ চান রাজনীতিবিদরা সংবাদ বা চলতি ঘটনা নিয়ে সরাসরি উপস্থাপনায় না আসুক।
অন্যদিকে, জিবি নিউজের প্রধান নির্বাহী অ্যাঞ্জেলোস ফ্রাংগোপোলোস দাবি করেছেন, তাদের প্রতিষ্ঠান “কখনও রাজনীতিবিদদের সংবাদ উপস্থাপনায় ব্যবহার করেনি” এবং তারা শুধুমাত্র “বর্তমান ঘটনাভিত্তিক প্রোগ্রাম” পরিচালনা করেন। তবে গবেষণার ফলাফল নিয়ে অফকমের ওপর চাপ বাড়ছে—বিশেষ করে রাজনীতিবিদদের টিভি উপস্থাপনা নিয়ে পর্যালোচনা প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার দাবিতে।
কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিফেন কুশন, যিনি গবেষণাটি নেতৃত্ব দেন, বলেন, “এই ফলাফল অফকমকে পুনর্বিবেচনায় যেতে বাধ্য করবে। জনগণ আসলেই চায় না রাজনীতিবিদরা সংবাদ-সম্পর্কিত অনুষ্ঠান উপস্থাপন করুক।”
গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রিটিশ সম্প্রচার মাধ্যমে জনগণের আস্থা এখনো তুলনামূলকভাবে বেশি—৪৯ শতাংশ মানুষ টেলিভিশন ও রেডিওকে নির্ভরযোগ্য সংবাদ উৎস মনে করেন। বিবিসি সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য সংবাদমাধ্যম (১৮ শতাংশ আস্থা জিবি নিউজে)।
তবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সম্প্রচারের নিরপেক্ষতার প্রতি আগ্রহ কমছে। ৫০ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের ৭৬ শতাংশ মনে করেন সংবাদ ও চলতি ঘটনা সম্পর্কিত প্রোগ্রামগুলো সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকা উচিত, কিন্তু ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এই হার নেমে এসেছে ৫৭ শতাংশে।
এই গবেষণার জরিপটি ইউগভ (YouGov) পরিচালনা করেছে। গত ৫ থেকে ৬ অক্টোবর অনলাইনে পরিচালিত জরিপে প্রায় ২,০০০ জন প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণকারী অংশ নেন।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৫ অক্টোবর ২০২৫