পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শত শত মানুষের বিক্ষোভে রিফর্ম ইউকের নেতা নাইজেল ফারাজ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি মুখোশধারী বিক্ষোভকারীদের মিছিলকে “বিদেশি বাহিনীর আগ্রাসন” বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং ঘটনাটিকে “জীবনের অন্যতম ভয়ংকর দৃশ্য” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বিক্ষোভটি অনুষ্ঠিত হয় ইউকিপ (UKIP)–এর পরিকল্পিত কর্মসূচি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাতিলের প্রতিবাদে।
হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনের সামনে ফিলিস্তিনি ও বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিপুল জনতা “আল্লাহু আকবার” ও “জায়নিস্টরা আমাদের রাস্তাগুলো ছাড়ো” স্লোগান দেয়। অনেকেই £৫ দামে বিক্রি হওয়া কালো বালাক্লাভা মুখোশ পরে নিজেদের পরিচয় গোপন রাখেন। তারা জানান, নিজেদের কমিউনিটিকে “রক্ষা” করতেই এই প্রতিরোধমূলক মিছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ইউকিপের অনুমোদন না পাওয়া মিছিলের পাল্টা হিসেবে এই বিক্ষোভ ডাকা হয়েছিল।
ওয়েস্টমিনস্টারে সংবাদ সম্মেলনে নাইজেল ফারাজ বলেন, “এটা নিছক বিক্ষোভ নয়, এটা ভয় দেখানোর এক রূপ, যা গণহত্যা উস্কে দিতে পারে। হয়তো একদিন বিভ্রান্ত বামপন্থীরা বুঝবে তারা কত অদ্ভুত সঙ্গীর পাশে দাঁড়িয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “এটা ছিল যেন বিদেশি বাহিনী আমাদের রাস্তায় মার্চ করছে। কেউ যদি বলেন আমি ভুল বলছি, প্রমাণ দিন।”
তবে এই মন্তব্য আসে এমন এক সময়, যখন ফারাজের নিজের দল রিফর্ম ইউক বর্ণবাদ বিতর্কে তীব্র চাপের মুখে। দলের এমপি সারাহ পোচিন সম্প্রতি টকটিভিতে বলেন, “টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনগুলো কালো ও এশীয় মানুষে ভরে গেছে—যা আমাকে পাগল করে দিচ্ছে।” তার এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
পোচিন পরে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “আমার উদ্দেশ্য বর্ণবাদী ছিল না, আমি শুধু বলতে চেয়েছিলাম বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলো অতিরিক্ত ‘DEI’ (diversity, equity, inclusion) নীতিতে আচ্ছন্ন।” তিনি দুঃখ প্রকাশ করে জানান, “ভাষা ব্যবহারে ভুল হয়েছিল, ভবিষ্যতে আমি সতর্ক থাকব।”
নাইজেল ফারাজ ঘটনাটি নিয়ে বলেন, “আমি তার কথায় খুশি নই। তার বক্তব্যের মূল ভাবটা বুঝতে পারি, কিন্তু ভাষা ছিল কুরুচিপূর্ণ। যদি আমি মনে করতাম উদ্দেশ্য বর্ণবাদী, তাহলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতাম।” তিনি পোচিনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে অস্বীকৃতি জানান, যা নিয়ে দল ও সংসদে সমালোচনা তীব্র হয়।
প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, “এটা নিখাদ বর্ণবাদ, যা দেশকে বিভক্ত করবে। ফারাজ যদি মনে করেন এটি বর্ণবাদ নয়, সেটাই ভয়ংকর। আর যদি মনে করেন এটা বর্ণবাদ, তবু নীরব থাকা নেতৃত্বের ঘাটতি।” লেবার পার্টির চেয়ার আনা টারলি বলেন, “কালো ও এশীয় মানুষদের বিজ্ঞাপনে দেখে বিরক্ত হওয়া বর্ণবাদ ছাড়া কিছু নয়। ফারাজের উচিত পোচিনের দলীয় হুইপ প্রত্যাহার করা।”
লিবারেল ডেমোক্র্যাটসও সংসদে পোচিনের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব তোলে। দলের হোম অ্যাফেয়ার্স মুখপাত্র ম্যাক্স উইলকিনসন বলেন, “যদি রিফর্ম ইউকে সত্যিই বর্ণবাদবিরোধী হয়, ফারাজকে এখনই তা প্রমাণ করতে হবে।” কনজারভেটিভ পার্টির শ্যাডো হোম সেক্রেটারি ক্রিস ফিল্প বলেন, “পোচিনের মন্তব্য স্পষ্টতই ভুল এবং বর্ণবাদী, যদিও তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।”
রিফর্ম ইউকের অভ্যন্তরে এই বিতর্ক এবং টাওয়ার হ্যামলেটসের বিক্ষোভকে ঘিরে ফারাজের কঠোর মন্তব্যে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে আবারও জাতিগত বিভাজন, সহনশীলতা ও নেতৃত্ব নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে।
সূত্রঃ দ্য এক্সপ্রেস
এম.কে

