TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

টিউলিপ সিদ্দিককে পদ থেকে না সরানোয় ক্ষুব্ধ যুক্তরাজ্য রাজনীতিবিদেরা

যুক্তরাজ্যে বেশ কয়েকদিন হতে লেবার সরকারের মন্ত্রী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত টিউলিপ সিদ্দিক নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। তবে টিউলিপ সিদ্দিক এখনও তার বিরুদ্ধে উঠা সমালোচনার মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। তিনি দাবি করেন যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি মিথ্যা এবং তাকে দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) এখনও যোগাযোগ করে নাই।

নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ, যিনি গত বছর থেকে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি যুক্তরাজ্যে টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রপার্টিগুলো জালিয়াতি ও আত্মসাৎ তদন্তের অংশ হিসেবে পরীক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি টিউলিপ সিদ্দিককে পুরো জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশে গত বছর এক বিদ্রোহে ক্ষমতাচ্যুত সরকার প্রধান শেখ হাসিনার ভাগ্নি। টিউলিপ সিদ্দিকের খালা দুর্নীতি ও “মানবতাবিরোধী অপরাধে” অভিযুক্ত বলেও জানা যায়।

টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পত্তি দুর্নীতি দমন কমিশন (ACC) দ্বারা তদন্ত করা উচিত কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে ইউনুস বলেন, “অবশ্যই” কমিশনকে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।

তিনি আরও বলেন, যদি সম্ভব হয়, আওয়ামী লীগ-সম্পর্কিত ব্যক্তিদের দ্বারা কেনা সম্পত্তি ফেরত আনা উচিত। “এটাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্দেশ্য। কীভাবে সেগুলো ফেরত আনা যায়। কারণ এটি জনগণের অর্থ। আর যখন আমি জনগণের কথা বলি, আমি ধনী লোকদের কথা বলছি না, আমি সাধারণ মানুষের কথা বলছি।”

প্রধানমন্ত্রী সালমান রহমানের পুত্র শায়ান রহমান সম্পর্কে রসিকতা করে বলেন, যিনি একজন বিলিয়নিয়ারের পুত্র এবং মানি-লন্ডারিংয়ের জন্য তদন্তাধীন। তিনি আবার যুক্তরাজ্যের রাজকীয় দাতব্য প্রতিষ্ঠানে £২৫০,০০০ পাউন্ড দান করেছেন। অবৈধ অর্থ লেনদেনের অন্যায্য সুবিধা পাওয়ার জন্যই এই দান।

ইউনুস বিদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সহায়তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। ব্রিটেনের জাতীয় অপরাধ সংস্থা (NCA), যা এফবিআই-এর সমতুল্য, অক্টোবর মাসে ঢাকায় সফর করেছিল। একটি সূত্র জানিয়েছে, সংস্থাটি অনুরোধ করা হলে যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি জব্দ করার চেষ্টা করতে পারে।

ইউনুস সম্প্রতি একটি সরকারি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এলিটরা প্রতিবছর দেশ থেকে বিলিয়ন পাউন্ড পাচার করেছে। কিছু অর্থ দিয়ে সম্পত্তি কেনা হয়েছে। তিনি বলেন, “এটি চুরি নয়, এটি ডাকাতি।”

শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা লন্ডনে যে সম্পত্তি ব্যবহার করেছেন, তা এই পরিস্থিতির অংশ কিনা জানতে চাইলে ইউনুস বলেন, “অবশ্যই, তারাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে সরাসরি ডাকাতি করেছে। এর বাইরে আর কিছু নয়।”

তিনি আরও বলেন, “যদি দূর্নীতিতে একজন ইউকে পার্লামেন্ট সদস্য জড়িত হন, তবে এটি অবশ্যই একটি বড় বিষয়। আমরা আগের প্রশাসনকে সবকিছু দূর্নীতি করে নিয়ে যেতে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তাই আমরা এখন স্বস্তি বোধ করছি শেখ হাসিনার পরিবারের দূর্নীতি সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।”

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রসারে তিনি বলেন, “দুর্নীতি শব্দটি খুবই নরম। দেশটি পুরোপুরি ধ্বংস করে গেছে শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার শাসনামলে সততা বা স্বচ্ছতার কোনো ধারণাই ছিল না। তারা সততা ও স্বচ্ছতার ধারণাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে।”

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর বার্ষিক দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশ ১৪৯তম অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া এবং রাশিয়ার নিচে বলে জানা যায়।

টিউলিপ সিদ্দিক প্রসঙ্গে, কনজারভেটিভ বিরোধী দলের নেতা কেমি ব্যাডনক বলেছেন যে, স্যার কেয়ার স্টারমারের টিউলিপ সিদ্দিককে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এটি একটি কূটনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে। ব্যাডনক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী তার মান এবং সততার প্রতি প্রতিশ্রুতিকে বড় বিষয় বলে প্রচার করেছেন। কিন্তু টিউলিপ সিদ্দিক ইস্যুতে তার দুর্বল নেতৃত্ব দেখা যায়। কেয়ার স্টারমার যতটা দাবি করেন, ততটা সততার বিষয়ে উদ্বিগ্ন নন।”

সূত্রঃ দ্য টাইমস

এম.কে
১২ জানুয়ারি ২০২৫

আরো পড়ুন

বিলেতে বাড়ি কেনাবেচাঃ  বিল্ড টু রেন্ট প্রপার্টি 

ব্রিটেনে তিন মাসে ৪ হাজারে বেশি অভিবাসী, নতুন রেকর্ড

যুক্তরাজ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ গ্রেফতার ৯০