এক বছর আগে সাউথপোর্টে তিন কিশোরী হত্যার পর শুরু হওয়া সহিংস দাঙ্গা আজও গভীর ক্ষত রেখে গেছে উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডের মুসলিম কমিউনিটিতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো ভুয়া তথ্য ও অভিবাসনবিরোধী ঘৃণা উসকে দেয় এই সহিংসতা, যার পর থেকে মুসলিমরা বাস করছে ভয় ও নিরাপত্তাহীনতায়।
সান্ডারল্যান্ডের মসজিদে আনোয়ারে মদিনা এখন সিসিটিভি, ইস্পাতের দরজা ও গ্রিল দেওয়া জানালায় ঘেরা। “এটি কারাগারের মতো মনে হয়, অথচ মসজিদ কখনো এমন হওয়া উচিত নয়,” বলেন কোষাধ্যক্ষ জাফ ইকবাল। গত বছর হামলার রাতে তিনি চারজনের সঙ্গে ভেতরে আটকা পড়েছিলেন।
২০২৪ সালের আগস্টে সাউথপোর্টে নাচের ক্লাসে তিন কিশোরীকে হত্যা করে এক ব্যক্তি। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে তিনি নৌকা দিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থী ও মুসলিম। এই ভুয়া তথ্যের জেরে সাউথপোর্টসহ অন্যান্য শহরে মুসলিম কমিউনিটিগুলোর ওপর হামলা হয়।
সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, সাউথপোর্ট হত্যার পরের ছয় মাসে উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডে বর্ণবাদী ও ধর্মীয় ঘৃণাজনিত অপরাধ ৩৪% বেড়েছে। একই সময়ে ৩৬১টি ধর্মীয় উসকানিমূলক হামলা রেকর্ড হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সন্ত্রাসী হামলা বা রাজনৈতিক ইস্যুর পর ঘৃণাজনিত অপরাধ বাড়ছে।
মিডলসব্রো, হার্টলপুল, ডার্লিংটনে দাঙ্গার সময় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। শুধু মিডলসব্রোতেই প্রায় হাজার মানুষ অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়। বিক্ষোভকারীদের গাড়িতে আগুন দেওয়া ও বাড়ির জানালা ভাঙার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।
মিডিয়া কালচার্ডের প্রতিষ্ঠাতা আমজিদ খাজির বলেন, “গত ৫–১০ বছরে বর্ণবাদ স্পষ্টভাবে বেড়েছে। আমি নিজেও বর্ণবাদী গালাগালি সহ্য করেছি।” তিনি অভিযোগ করেন, কিছু রাজনীতিবিদ ও সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ঘৃণা উসকে দেন।
কমিউনিটি নেতারা সতর্ক করেছেন, দাঙ্গা সামাজিক সম্প্রীতির জন্য বড় হুমকি। ভুয়া খবর ও ভুল তথ্যের কারণে মুসলিমরা আজও ভয়ে বাস করছে।
“আমরা প্রতিদিন সংবাদ দেখে পরিবারকে সাবধান থাকতে বলি। যেন বাইরে কম যায়। আমরা ভয়ের এক চক্রে আটকা পড়েছি,” বলেন মি. খাজির।
মুসলিম কমিউনিটির অনেকে মনে করছেন, রাজনৈতিক পরিবেশ আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
জাফ ইকবাল ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “যদি নিজের শহরে নিরাপদ না হই, তবে কোথায় হব? আমি এখানে জন্মেছি, কাজ করি, তবুও এটি আমার শহর মনে হয় না।”
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
৩১ জুলাই ২০২৫