ভবিষ্যদ্বাণীর কথা বললেই প্রথমে যার কথা মনে পড়ে তিনি হলেন ফরাসি দার্শনিক মিশেল দে নস্ত্রাদামুস। প্রায় ৭৫০ বছর আগে তার দেওয়া অনেক ভবিষ্যদ্বাণীই পরবর্তী সময়ে প্রায় হুবুহু মিলে গেছে। হিটলারের উত্থান থেকে শুরু করে ৯/১১ নামে পরিচিত ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আল কায়দার যুক্তরাষ্ট্রে হামলা এমনকি ২০১৯ সালে শুরু হওয়া করোনা ভাইরাস সবই উল্লেখ ছিল তার ভবিষ্যদ্বাণীতে।
১৫৫৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তার বই ‘লেস প্রফেটিস’। তাতেই বলা ছিল পৃথিবী সম্পর্কে আগাম যত তথ্য। এমনকি ২০২৪ সাল কেমন যাবে সে কথাও বলে দিয়েছিলেন সাড়ে সাত শতক দূরে বসেই। নস্ত্রাদামুসের মতে, নতুন বছরে বিশ্বশক্তি হিসাবে বিপুল উত্থান হবে চীনের। যুদ্ধে জড়াবে পশ্চিম এশিয়ার এই দেশ। নস্ত্রাদামুস তার বইয়ে উল্লেখ করেছিলেন ‘যুদ্ধ ও নৌযুদ্ধের’ কথা।
বলেছিলেন, ‘ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে যাবে ‘লাল প্রতিপক্ষ/ আতঙ্কে ফেলবে মহাসমুদ্রকে।’ কেউ কেউ মনে করেন এই ‘লাল প্রতিপক্ষ’ বলতে তিনি চীনকে বুঝিয়েছেন। আর এখানে মহাসমুদ্র বলতে ভারত মহাসাগরকে বুঝিয়ে থাকতে পারেন।
আবার অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, নস্ত্রাদামুস তার ভবিষ্যদ্বাণীতে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর অন্তর্ভুক্তিতে চীনের সঙ্গে এশিয়ার ক্রমবর্ধমান সংঘাতের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে থাকতে পারেন।
ইতোমধ্যেই অনেক ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিক বৈশ্বিক শক্তি হিসাবে চীনের পরিবর্তনশীল গতিশীলতা ও উত্থান দেখতে শুরু করেছেন। এমনকি চীন দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ানের আশপাশের অঞ্চলে নৌ জাহাজের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার তার নৃশংস শক্তিও প্রদর্শন করেছে।
১৫০৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর ফ্রান্সের সেন্ট-রেমি-ডি প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন নস্ত্রাদামুস। ১৫৬৬ সালের ২ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
২০২৪ সালে ‘প্রচণ্ড সুনামি’ হবে বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন নস্ত্রাদামুস। যাতে ধ্বংস হয়ে যাবে সমগ্র কৃষিজমি। প্রাকৃতিক-ঝড়-ঝঞ্ঝা ছারখার করবে বিশ্ব! একদিকে যেমন দেখা দেবে খরা, অন্যদিকে হবে অতিবৃষ্টি। ইতোমধ্যে একটি ভয়ংকর জলবায়ু সংকটের মধ্যে থাকার প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ব।
ভবিষ্যদ্বাণীতে নস্ত্রাদামুস ২০২৪ সালে নতুন পোপের দেখা মিলবে দাবি জানিয়েছিলেন। বর্তমানে পোপের জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হবেন একজন তরুণ পোপ। বর্তমানে পোপ ফ্রান্সিসের বয়স ৮০-র ঘরে। ভুগছেন বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায়।
ভবিষ্যদ্বাণীতে নস্ত্রাদামুস আরও লিখেছিলেন ‘দ্বীপপুঞ্জের রাজা’র কথা। বলেছিলেন যিনি এই রাজার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন তার কোনো ‘রাজার চিহ্ন থাকবে না।’ বিশ্লেষক ও লেখক মারিও রিডিং এ সম্পর্কে বলেন, ‘দ্বীপপুঞ্জের রাজা’ বলতে নস্ত্রাদামুস ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের দিকে ইঙ্গিত করে থাকতে পারেন। ‘নিজের ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী উভয়ের ওপর ক্রমাগত আক্রমণের কারণে’ তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হতে পারে।
তবে এসব বিশ্বাস করার আগে এটিও মনে রাখা প্রয়োজন যে, নস্ত্রাদামুসের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। কারণ তার ভবিষ্যদ্বাণীর অনেক কিছুই অনুমাননির্ভর। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ভুলও প্রমাণিত হয়েছে তার কথা। যেমন তার ভবিষ্যদ্বাণীতে ১৯৯৯ সালে বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ ছিল।
আগাম বিশ্বের আরেক ভবিষ্যদ্বাণীদাতা বুলগেরিয়ার পৃথিবীখ্যাত নারী ভ্যাঙ্গেলিয়া পান্দেভা গুশতেরোয়া। যিনি সাধারণত ‘বাবা ভাঙা’ নামেই বেশি পরিচিত। বাবা ভাঙার জন্ম ১৯১১ সালের ৩ অক্টোবর বুলগেরিয়ার সুফিয়ায়। তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন ১৯৯৬ সালের ১১ আগস্ট। শোনা যায় বজ্রপাতের ফলে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন। তারপরই অলৌকিক শক্তির অধিকারী হন।
২০২৪ নিয়ে তার অন্যতম ভবিষ্যদ্বাণী ছিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর প্রাণঘাতী হামলার চেষ্টা। যে ঘটনায় জড়িত থাকবেন তার দেশেরই এক ব্যক্তি। এছাড়া আগামী বছরে ইউরোপে আরও বাড়বে সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা। একটি ‘বড়’ দেশ বিপজ্জনক জৈব অস্ত্র তৈরি করবে। বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের কথাও জানিয়ে গিয়েছিলেন বাবা ভাঙা। একাধিক বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেন তিনি। বিশ্বাসীদের দাবি, ইন্টারনেটের বাড়বাড়ন্তের জমানোর বহু আগে প্রয়াত হলেও সাইবার হামলার ভয়ংকর রূপের কথা বলে গিয়েছিলেন বুলগেরিয়ার দুনিয়াখ্যাত এই নারী। যা ঘটবে আগামী ২০২৪ সালেই।
সূত্রঃ রয়টার্স
এম.কে
৩০ ডিসেম্বর ২০২৩