TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

নাগরিকত্বের শপথে নতুন শুরুঃ অভিবাসন বিতর্কের মধ্যেই ব্রিটিশ হওয়ার গর্ব

কেমব্রিজশায়ারের নিউ শায়ার হলে প্রায় প্রতি সপ্তাহের মতোই অনুষ্ঠিত হচ্ছে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব প্রদান অনুষ্ঠান। A1(M) সড়কের পাশের এই ভবনে জড়ো হন বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষরা, যারা দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া পেরিয়ে আজ নিজেদের ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন। কৌতূহল, উত্তেজনা ও আবেগের মিশেলে এই অনুষ্ঠান অনেকের জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

 

দুটি নাগরিকত্ব অনুষ্ঠানে প্রায় ৩০ জন অংশগ্রহণকারী রাজা ও দেশের প্রতি আনুগত্যের শপথ বা ধর্মনিরপেক্ষ অঙ্গীকার পাঠ করেন। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর আনুষ্ঠানিক ছবি তোলা হয়। অংশগ্রহণকারীদের কেউ এসেছেন কাজের জন্য, কেউ শিক্ষার টানে, আবার কেউ ভালোবাসার কারণে যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ফিলিপাইন থেকে আসা ৩৮ বছর বয়সী নার্স সিডনি জানান, নাগরিকত্ব পাওয়া তার জীবনের সবচেয়ে আবেগঘন অর্জনগুলোর একটি। ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে আসার পর নানা চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে আজ তিনি নিজেকে গর্বিত ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে দেখছেন। তার মতো অনেকেই উন্নত জীবন, পারিবারিক নিরাপত্তা ও পেশাগত সুযোগের খোঁজে যুক্তরাজ্যকে বেছে নিয়েছেন।

এনএইচএস ইংল্যান্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির নার্সদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এশীয় বংশোদ্ভূত, বিশেষ করে ভারত ও ফিলিপাইনের নাগরিক। ইস্ট অব ইংল্যান্ড অঞ্চলে এই হার আরও বেশি। ব্রেক্সিট-পরবর্তী অভিবাসন ব্যবস্থায় দক্ষ কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়ায় এশীয় অভিবাসনের সংখ্যা বেড়েছে, যা স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করা দেশগুলোর তালিকা পড়ার সময় উপস্থিত সবাই বিস্মিত হন। ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা ও ক্যারিবিয়ান—বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা মানুষের উপস্থিতি যুক্তরাজ্যের বহুজাতিক বাস্তবতাকেই তুলে ধরে। রাশিয়া থেকে আসা শিক্ষক এভিলিনা বলেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর নাগরিকত্ব পাওয়া তার জন্য স্বপ্নপূরণের মতো। তিনি মনে করেন, সমাজে একীভূত হওয়া এবং অবদান রাখাই অভিবাসীদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।

রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন অভিবাসন নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা চলছে, তখন এসব নতুন নাগরিকদের অনেকেই বৈধ অভিবাসন ও অবদানের স্বীকৃতি না পাওয়ায় হতাশ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সমর্থকেরা বলেন, যুক্তরাজ্য বরাবরই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এবং এই বৈচিত্র্যই দেশের শক্তি।

ক্যামব্রিজশায়ার কাউন্টি কাউন্সিলর পিটার ম্যাকডোনাল্ড বলেন, অবৈধ অভিবাসন নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও বৈধভাবে আসা নতুন নাগরিকদের অবদান উপেক্ষা করা ঠিক নয়। স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে জনবল সংকট মোকাবিলায় অভিবাসীরা অপরিহার্য ভূমিকা পালন করছেন। তাদের স্বাগত জানানো এবং গর্বের সঙ্গে নাগরিক হিসেবে চলার সুযোগ করে দেওয়াই সমাজের দায়িত্ব।

কাউন্টি কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ক্যামব্রিজশায়ারে ২,২৮৬ জন নতুন ব্রিটিশ নাগরিক হয়েছেন। কাজ, শিক্ষা কিংবা ভালোবাসা—যে কারণেই আসুন না কেন, এই মানুষগুলোর গল্প যুক্তরাজ্যের সমসাময়িক অভিবাসন বাস্তবতার একটি মানবিক চিত্র তুলে ধরে।

সূত্রঃ বিবিসি

এম.কে

আরো পড়ুন

মুদ্রাস্ফীতির সময়ে অর্থনৈতিক দৈন্যতায় ভোগা পরিবার পাচ্ছেন বিশেষ সাহায্য

রেকর্ড পতনের পরও মাঝারি মেয়াদে যুক্তরাজ্যে অভিবাসন বাড়ার আভাস

লন্ডনে লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ: আটক ১৫০

অনলাইন ডেস্ক