নিউইয়র্ক সিটির ৪০০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন একজন মুসলিম প্রার্থী। ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচনে ৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানি বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন নিউইয়র্ক স্টেটের সাবেক গভর্নর এ্যান্ড্রু ক্যুমোকে।
গত ২৪ জুন অনুষ্ঠিত দলীয় নির্বাচনে জোহরান মামদানি পেয়েছেন ৪,০৮,৬১৭ ভোট, যেখানে ক্যুমো পেয়েছেন ৩,৩৯,৪৪১ ভোট এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন ব্র্যাড লেন্ডার, যার প্রাপ্ত ভোট ১,০৭,৩০২। তীব্র গরম ও ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা সত্ত্বেও ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো, যা প্রমাণ করে এই নির্বাচনের গুরুত্ব এবং জোহরানকে ঘিরে মুসলিম ও অভিবাসী সম্প্রদায়ের প্রত্যাশা।
উল্লেখযোগ্যভাবে, জোহরান মামদানি এর আগে ডেমক্র্যাটিক পার্টি থেকে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হয়ে রাজ্য সংসদে প্রথম মুসলিম প্রতিনিধি হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন। এবার তিনি বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী শহর নিউইয়র্কের মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার দিকেই এগোচ্ছেন।
নিউইয়র্ক সিটির ভোটারের প্রায় ৭০ শতাংশ ডেমক্র্যাটিক রেজিস্টার্ড হওয়ায় আগামী ৪ নভেম্বরের মূল নির্বাচনে তার বিজয় প্রায় নিশ্চিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে, বর্তমান মেয়র এরিক এডামস ডেমক্র্যাটিক দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। দুর্নীতির মামলায় জর্জরিত হওয়ার পর তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রকাশ্য সমর্থক হন এবং ফলস্বরূপ তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থান গ্রহণে ডেমক্র্যাটিক দলের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই কমে যায়।
নিউইয়র্কে বর্তমানে মুসলিম ভোটারের সংখ্যা দুই লাখের বেশি, এবং তাদের ৯০ শতাংশ যদি ভোট দেন, তাহলে জোহরানের জয় নির্ধারিত বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
জোহরানের পাশাপাশি ডিস্ট্রিক্ট ৩৯ থেকে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ। ২০২২ সালে প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে কাউন্সিলে নির্বাচিত হয়ে ইতিমধ্যেই তিনি ইতিহাস গড়েছিলেন।
জোহরানের বিজয়ে বাংলাদেশি-আমেরিকান ও বৃহত্তর মুসলিম কমিউনিটিতে বইছে আনন্দের জোয়ার। জ্যাকসন হাইটস, লং আইল্যান্ড সিটি, ব্রুকলিন, পার্কচেস্টার ও হিলসাইড জ্যামাইকার বিভিন্ন এলাকায় বিজয় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন—নিউইয়র্ক সিটির আগামী প্রশাসনে মুসলিম ও অভিবাসী সমাজের অধিকতর প্রতিনিধিত্ব এবং কল্যাণ নিশ্চিত হবে।
আগামী ৪ নভেম্বরের মূল নির্বাচনের আগে জোহরানের পক্ষে প্রচার জোরদার করতে বদ্ধপরিকর তার সমর্থকরা।
এম.কে
২৫ জুন ২০২৫