আবাসন সংকট ও অর্থনৈতিক চাপ যুক্তরাজ্যের তরুণদের দেশত্যাগের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলছে।যুক্তরাজ্যের স্থবির অর্থনীতি ও সাশ্রয়ী বাসস্থানের সংকট তরুণদের মধ্যে গভীর হতাশা তৈরি করেছে। ফ্রি-মার্কেট থিঙ্ক ট্যাঙ্ক অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউট (ASI)-এর জরিপে দেখা গেছে, ১৮-৩০ বছর বয়সী তরুণদের ২৮ শতাংশ হয় যুক্তরাজ্য ছাড়ার পরিকল্পনা করছে, নয়তো গুরুত্বসহকারে এ নিয়ে ভাবছে। আরও ৩০ শতাংশ স্বীকার করেছে তারা সামান্য হলেও এ বিষয়ে চিন্তা করেছে, যেখানে ৩৫ শতাংশের কখনো এমন চিন্তা হয়নি।
জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছে, অত্যধিক সরবরাহ সংকটগ্রস্ত আবাসন বাজার ও কঠিন আর্থিক পরিস্থিতি তাদের দেশে থাকার আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে। ৬৫ শতাংশ মনে করে আগামী পাঁচ বছরে সাশ্রয়ী মূল্যের বাসস্থান পাওয়া আরও কঠিন হয়ে উঠবে। অর্ধেক তরুণ মনে করে তাদের সমবয়সীরা ক্রমবর্ধমান ভাড়া ও স্থবির মজুরির কারণে জীবনযুদ্ধে হিমশিম খাচ্ছে। ASI-এর ডেটা ম্যানেজার এমা শুবার্ট সতর্ক করেছেন, “তরুণরা স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা অতিরিক্ত করের চাপে, বাসস্থানের সংকটে এবং অবমূল্যায়নের শিকার। রাজনীতিকরা এই সংকেত উপেক্ষা করলে দেশ প্রতিভা হারাবে।”
জরিপে দেখা গেছে, বিদেশে ক্যারিয়ার গড়ার আগ্রহী তরুণদের সংখ্যা বাড়ছে, যা যুক্তরাজ্যে ‘ব্রেইন ড্রেইন’ বাড়িয়ে তুলছে। দুবাই ও অস্ট্রেলিয়া তরুণদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে উন্নত জীবনযাত্রা ও অনুকূল কর্মসংস্থানের কারণে। ২০২৪ সালেই প্রায় ৪০,০০০ ব্রিটিশ দুবাইয়ে চলে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুবাইয়ে প্রথমবারের মতো গৃহক্রেতাদের জন্য সহজ শর্তের প্রকল্প চালু হয়েছে, যা প্রবাসী তরুণদের জন্য বাড়ি কেনা সহজ করেছে।
‘ডিজিটাল নোমাড’ ভিসার বিস্তার তরুণদের বিদেশে কাজের সুযোগ বাড়িয়ে তুলছে। এই ভিসা যুক্তরাজ্যের কোম্পানির জন্য বিদেশ থেকে কাজ করার অনুমতি দেয়, যা দেশত্যাগের প্রবণতা ত্বরান্বিত করছে। গবেষণা সংস্থা পাবলিক ফার্স্ট জানিয়েছে, এর ফলে যুক্তরাজ্য প্রতি বছর £৩ বিলিয়নের বেশি ভোক্তা ব্যয় হারাচ্ছে এবং সরকারি কোষাগারে সরাসরি ক্ষতি হচ্ছে অন্তত £৩২০ মিলিয়ন।
রিফর্ম ইউকের নেতা নাইজেল ফারাজ এই পরিস্থিতিকে ‘দুঃখজনক কিন্তু প্রত্যাশিত’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “উচ্চাভিলাষী তরুণ ব্রিটিশরা ক্রমবর্ধমানভাবে বিদেশে সুযোগ খুঁজছে। এটি চলতে পারে না। আমাদের অবশ্যই আগামী প্রজন্মকে উন্নতি, পরিবার গঠন এবং যুক্তরাজ্যে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার স্বাধীনতা দিতে হবে।”
সূত্রঃ সিটি এ এম
এম.কে
৩১ জুলাই ২০২৫