TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

পক্ষপাতদুষ্ট জানার পরও যুক্তরাজ্যে মুখ শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহারে চাপ পুলিশ বাহিনীর

যুক্তরাজ্যের পুলিশ বাহিনী এমন একটি মুখ শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহারে চাপ প্রয়োগ করেছে, যা নারীদের, কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য পক্ষপাত দেখায়—যদিও এই ঝুঁকি সম্পর্কে সরকার ও বাহিনী এক বছরেরও আগে থেকেই অবগত ছিল। প্রযুক্তির একটি উন্নত সংস্করণ পক্ষপাত কমাতে সক্ষম হলেও পুলিশ বাহিনীর অভিযোগ ছিল—এতে “সম্ভাব্য সন্দেহভাজন” শনাক্ত হওয়ার হার কমে যায়।

হোম অফিস সম্প্রতি স্বীকার করেছে, ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরির (NPL) পর্যালোচনায় ব্যবহৃত মুখ শনাক্তকরণ সিস্টেমে বর্ণ, বয়স ও লিঙ্গ–ভিত্তিক বৈষম্য দেখা গেছে। এই অ্যালগরিদম কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় ব্যক্তিদের এবং নারীদের ভুলভাবে ‘ম্যাচ’ করার প্রবণতা দেখিয়েছে, শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি হারে। কিছু সেটিংসে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের ভুল শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা শ্বেতাঙ্গ নারীদের তুলনায় প্রায় ১০০ গুণ পর্যন্ত বেশি দেখা গেছে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রথম জানানো হয়—সিস্টেমটি পক্ষপাতদুষ্ট। এ কারণে ন্যাশনাল পুলিশ চিফস’ কাউন্সিল (NPCC) নির্দেশ দেয়, সম্ভাব্য ম্যাচ শনাক্তের ক্ষেত্রে কনফিডেন্স থ্রেশহোল্ড বাড়াতে হবে, যাতে পক্ষপাত উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত এক মাসের মধ্যেই বাতিল করা হয়—কারণ বিভিন্ন পুলিশ বাহিনী অভিযোগ করে উচ্চ থ্রেশহোল্ডে “তদন্ত-সহায়ক লিড” নাটকীয়ভাবে কমে যাচ্ছে। নতুন নিয়মে সম্ভাব্য ম্যাচ পাওয়া অনুসন্ধান ৫৬% থেকে কমে ১৪%-এ নেমে আসে।

NPCC নথিতে স্বীকার করা হয়েছে, বাড়তি থ্রেশহোল্ড পক্ষপাত কমালেও “অপারেশনাল কার্যকারিতা” ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাহিনী অভিযোগ করে, “একসময় কার্যকর থাকা একটি কৌশল সীমিত ফল দিচ্ছে।” ফলে পক্ষপাত কমানোর সিদ্ধান্ত বাতিল হয়, এবং পুলিশ আগের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সেটিংস ব্যবহারে ফিরে যায়।

এদিকে সরকার মুখ শনাক্তকরণ প্রযুক্তির ব্যবহার আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নিয়ে ১০ সপ্তাহের একটি জনপরামর্শ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। পুলিশিং মন্ত্রী সারাহ জোন্স প্রযুক্তিটিকে “ডিএনএ শনাক্তকরণের পর সবচেয়ে বড় অগ্রগতি” বলে উল্লেখ করেছেন।

তবে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা এবং মানবাধিকারকর্মীরা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মেট পুলিশের মুখ শনাক্তকরণ ব্যবহারের সাবেক স্বাধীন পর্যালোচক প্রফেসর পিট ফুসি বলেন, “মুখ শনাক্তকরণ কি তখনই ‘উপকারী’ হয়, যখন ব্যবহারকারীরা জাতিগত ও লিঙ্গ–ভিত্তিক পক্ষপাত মেনে নেয়? সুবিধার যুক্তি মৌলিক অধিকারকে অগ্রাহ্য করার মতো যথেষ্ট নয়।”

পুলিশ রেস অ্যাকশন প্ল্যানের স্বাধীন তত্ত্বাবধান বোর্ডের চেয়ার আবিমবোলা জনসন বলেছেন, “নতুন প্রযুক্তি এমন পরিবেশে চালু হচ্ছে যেখানে জাতিগত বৈষম্য, দুর্বল নজরদারি এবং অপর্যাপ্ত তথ্য সংরক্ষণ ইতোমধ্যেই রয়েছে। রেস অ্যাকশন প্ল্যানের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবে প্রয়োগ হচ্ছে না।”

হোম অফিস জানিয়েছে, নতুন একটি অ্যালগরিদম ইতোমধ্যে নির্বাচিত হয়েছে, যা “পরিসংখ্যানগতভাবে উল্লেখযোগ্য কোনো পক্ষপাত” দেখায় না। এটি আগামী বছর পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে। দপ্তর বলছে, প্রতিটি ধাপে মানবীয় পর্যবেক্ষণ থাকবে এবং যাচাই ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

মানব ও মাদক পাচারকারীদের নতুন কৌশলঃ ছোট নৌকায় অভিবাসী দিয়ে হেরোইন পাচার

ব্রিটিশ পুলিশ আর বিএমডব্লিউর গাড়ি পাবে না

লন্ডনে মাইগ্রান্ট হোটেলে ছুরি নিয়ে হামলার অভিযোগে তরুণী গ্রেপ্তার