গত বছর পর্যটকদের ক্রুজ জাহাজে অভিবাসীদের থাকার ব্যবস্থা করে নেদারল্যান্ডস। জাহাজটিতে টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাব হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তদন্তে দেখা গেছে, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় ত্রুটির কারণে জাহাজের পানীয় জলে দূষিত জল মিশতে শুরু করেছিল।
প্রায় এক বছর আগে লিবার্টি অ্যান ক্রুজ জাহাজটিতে অসুস্থতার খবর প্রথম প্রকাশ হয়। ২০২২ সালের ৬ এপ্রিল ডাচ শহর হারলেমে নোঙর করা জাহাজটিতে আশ্রয়প্রার্থীরা জ্বর এবং পেটব্যথায় ভুগতে থাকেন।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছে যে অভিবাসীরা সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়েছেন।
জাহাজে আশ্রয় নেয়া মোট ৫২ জন আশ্রয়প্রার্থী এবং বোর্ডে থাকা ২০ জন কর্মী এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সবাই অসুস্থতা থেকে সেরে উঠেছেন৷ তবে আক্রান্তদের প্রায় এক তৃতীয়াংশকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। অন্তত সাড়ে তিনশ অভিবাসী মারাত্মক এই ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এসেছেন বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পরিসংখ্যান বলছে, এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমিতদের প্রতি একশ জনে একজন প্রাণ হারানোর ঝুঁকিতে থাকেন। পানিবাহিত এই ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে টিকা রয়েছে। কিন্তু তারপরও এই রোগ নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।
বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে এর অতিব্যবহার এবং অপব্যবহারের কারণে এই ব্যাকটেরিয়াও এখন অ্যান্টিবায়োটিক সহনশীল হয়ে উঠেছে।
এর ফলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা রোগীরা আরও গুরুতরভাবে আক্রান্ত হন এবং তাদের মারা যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
টাইফয়েড সংক্রমণের সময় সব আশ্রয়প্রার্থী এবং কর্মীদের অন্য স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। জাহাজটি খালি করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ প্রাদুর্ভাবের উৎস শনাক্ত করতে তদন্ত শুরু করে।
তদন্তে টাইফয়েডের ব্যাকটেরিয়া দূষিত পানি থেকে ছড়িয়ে পড়েছে, এমন আলামত তারা খুঁজে পান।কেনেমারল্যান্ড-হারলেমের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ আন্নে ডে ফ্রিস প্রাদুর্ভাবের তদন্ত দলের সদস্য ছিলেন। বার্তা সংস্থাকে তিনি জানান, দূষণের সঠিক উৎস “খুঁজে পাওয়া সহজ ছিল না।”
জলের ঠিক কোন ট্যাংকটি থেকে জীবাণু ছড়িয়েছে, তা শনাক্ত করতে অনেকবার তাদের জাহাজটি পরিদর্শন করতে হয়েছিল। জাহাজটির জন্য কোনও নকশা তাদের কাছে ছিল না।
পরে তারা খুঁজে পান বর্জ্য জল এবং পানীয় জলের ট্যাংকগুলোর মধ্যের প্রাচীর ক্ষয়ে গেছে। আইন অনুযায়ী পয়ঃনিষ্কাশনের ট্যাংক এবং পানীয় জলের ট্যাংক পাশাপাশি স্থাপন করার কথা নয়।