TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

পর্নোগ্রাফিতে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে যুক্তরাজ্য সরকার

নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধের অংশ হিসেবে অনলাইনে শ্বাসরোধ বা গলা টিপে ধরার দৃশ্যযুক্ত পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য সরকার। সংসদে চলমান Crime and Policing Bill-এর সংশোধনী অনুযায়ী, এই ধরনের ভিডিও প্রকাশ ও সংরক্ষণ উভয়ই অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরকারি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মূলধারার অনেক পর্ন সাইটে গলা টিপে ধরার দৃশ্য এখন “অত্যন্ত সাধারণ” হয়ে উঠেছে। এর ফলে তরুণদের মধ্যে এ ধরনের সহিংস আচরণকে “স্বাভাবিক” হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নতুন আইনের অধীনে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে এই কনটেন্ট সনাক্ত ও মুছে ফেলতে হবে, না হলে Ofcom তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারবে।

বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি বিভাগ (DSIT) জানিয়েছে, পর্নোগ্রাফিতে গলা টিপে ধরার দৃশ্য এখন থেকে “প্রায়োরিটি অপরাধ” হিসেবে গণ্য হবে, যা শিশু যৌন নির্যাতন ও সন্ত্রাসবাদী কনটেন্টের সমপর্যায়ে ধরা হবে।

প্রযুক্তি সচিব লিজ কেনডাল বলেছেন, “এ ধরনের কনটেন্ট দেখা বা শেয়ার করা শুধুই অশোভন নয়, বরং গভীরভাবে বিপজ্জনক। যারা এসব প্রকাশ বা প্রচার করে, তারা সহিংসতা ও নির্যাতনের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিচ্ছে—যার কোনো স্থান আমাদের সমাজে নেই।”

কনজারভেটিভ পার্টির ব্যারোনেস বার্টিন জানিয়েছেন, পর্নোগ্রাফি শিল্পে সরকারের “যথাযথ নজরদারির অভাব” বহুদিনের সমস্যা। তার নেতৃত্বে করা এক স্বাধীন প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর এক শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করেছিল—“যৌন সম্পর্কের সময় কীভাবে মেয়েদের গলা টিপে ধরা যায়।”

তিনি বলেন, “এটি কেবল শুরু, এখনো অনলাইনে অনেক সহিংস পর্নোগ্রাফি বৈধভাবে প্রচারিত হচ্ছে, যা অফলাইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সরকারকে এই সুযোগে অনলাইন ও অফলাইনের বৈষম্য দূর করতে হবে।”

২০১৯ সালে বিবিসি পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ১৮ থেকে ৩৯ বছর বয়সী ৩৮% নারী জানিয়েছেন, তারা যৌন সম্পর্কে গলা টিপে ধরা অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন।

ইনস্টিটিউট ফর অ্যাড্রেসিং স্ট্র্যাঙ্গুলেশনের প্রধান নির্বাহী বার্নি রায়ান বলেছেন, “গলা টিপে ধরা একটি ভয়াবহ সহিংসতা। এটি প্রায়ই গৃহ নির্যাতনে কাউকে নিয়ন্ত্রণ, ভয় দেখানো বা নীরব করানোর উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হয়।”

তিনি বলেন, “এ ধরনের পর্ন দৃশ্য নারীদের মধ্যে বিভ্রান্তিকর বার্তা ছড়ায় যে, এমন আচরণ নাকি স্বাভাবিক বা প্রত্যাশিত। বাস্তবে এটি নারীর প্রতি সহিংসতারই এক রূপ।”

এন্ড ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন কোয়ালিশনের পরিচালক আন্দ্রিয়া সাইমন বলেন, “এটি সহিংসতার স্বাভাবিকীকরণ বন্ধে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। কোনো নারীই এমন সহিংসতার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির জন্য সম্মতি দিতে পারেন না।”

তবে প্রচারক ও নারী অধিকারকর্মী ফিওনা ম্যাকেঞ্জি, যিনি “We Can’t Consent To This” নামের সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, এই নতুন আইনের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

তার দাবি, “এ ধরনের কনটেন্টের বিরুদ্ধে আইন আগেই ছিল, যেমন Criminal Justice and Immigration Act 2008, যেখানে জীবন-ঝুঁকিপূর্ণ বা চরম সহিংস দৃশ্যযুক্ত পর্ন সংরক্ষণকে অপরাধ বলা হয়েছে। কিন্তু এসব আইন কখনো কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হয়নি।”

তিনি বলেন, “পাঁচ বছর আগেই তরুণ নারীরা বলেছিল, সোশ্যাল মিডিয়া নারীর গলা টিপে ধরা দৃশ্যকে ‘আবেগের প্রকাশ’ হিসেবে বিক্রি করছে। পর্ন সাইটগুলো পুরুষদের কাছে এটিকে স্বাভাবিক করে তুলেছে, অথচ কোনো সাইটই এখনো আইনের প্রভাব টের পায়নি।”

তার মতে, “এইবার সরকার সত্যিই কিছু করতে পারে, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত বাস্তবে তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ না হয়, নতুন আইনও আগের মতো নিষ্প্রাণ থেকে যাবে।”

সরকার জানিয়েছে, এই নতুন সংশোধনী Obscene Publications Act 1959 এবং Criminal Justice and Immigration Act 2008-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হচ্ছে, যা বিদ্যমান আইন কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে।

সূত্রঃ বিবিসি

এম.কে

আরো পড়ুন

‘ভেঙে পড়েছে’ যুক্তরাজ্যের পারিবারিক পুনর্মিলন ব্যবস্থা

অভিবাসী স্থানান্তরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই রুয়ান্ডাকে যুক্তরাজ্যের তিন হাজার কোটি টাকা

ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সুদের হার নির্ধারণে নিয়েছে নতুন পদক্ষেপ