TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

প্রতিষ্ঠাতা পৃষ্ঠপোষকদের দাসপ্রথায় সম্পৃক্ততা, ক্ষমা চাইল দ্য গার্ডিয়ান

উনিশ শতকের শুরুর দিকে যখন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের যাত্রা শুরু হয়েছিল, ওই সময় এর প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষকদের কেউ কেউ ট্রান্স আটলান্টিক দাসপ্রথার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ তথ্য সামনে আসায় দুই শতকের বেশি সময় পর ক্ষমা চেয়েছে সংবাদমাধ্যমটির কর্তৃপক্ষ।
সেই সঙ্গে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য একটি তহবিল করেছে দ্য গার্ডিয়ান। ১ কোটি ২৩ লাখ ডলারের এই তহবিলের অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বর্তমান বংশধরদের জন্য দশকজুড়ে ব্যয় করা হবে। গার্ডিয়ানের মালিক স্কট ট্রাস্ট এ তথ্য জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যে ১৮২১ সালে গার্ডিয়ানের যাত্রা শুরু হয়। তখন সংবাদমাধ্যমটির নাম ছিল ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান। সাংবাদিক ও তুলা ব্যবসায়ী জন এডওয়ার্ড টেইলর ছিলেন গার্ডিয়ানের প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে টেইলরের পাশে দাঁড়ান ১১ জন স্থানীয় ব্যবসায়ী। তারা প্রত্যেকে ১০০ পাউন্ড করে অর্থ সহায়তা দেন টেইলরকে। তাদের দেওয়া সেই অর্থেই যাত্রা শুরু হয় গার্ডিয়ানের।
ওই সময় টেইলরকে যারা অর্থসহায়তা দিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই দাসপ্রথার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন—এই অভিযোগ বেশ পুরোনো। গার্ডিয়ানের প্রতিষ্ঠাতা জন টেইলর ও সংবাদমাধ্যমটির প্রতিষ্ঠাকালীন পৃষ্ঠপোষক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দাসপ্রথার কোনো সম্পর্ক ছিল কি না, তা জানতে ২০২০ সালে একটি স্বাধীন গবেষণা শুরু হয়।
গতকাল মঙ্গলবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম দ্য স্কট ট্রাস্ট লিগেসিস অব এনস্লেভমেন্ট রিপোর্ট। এতে বলা হয়েছে, টেইলর নিজে এবং গার্ডিয়ান প্রতিষ্ঠায় অর্থ দিয়ে সহায়তা করা ১১ জনের মধ্যে অন্তত নয়জন দাসপ্রথার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। যেহেতু তারা বস্ত্রশিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাই এর সুবাদে দাসপ্রথার সঙ্গেও সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন।
ওই সময় ম্যানচেস্টারে ওকদেন অ্যান্ড টেইলর নামে একটি তুলা প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠান এবং টেইলর অ্যান্ড কো নামে একটি তুলা বাণিজ্য কোম্পানির অংশীদার ছিলেন টেইলর। টেইলর অ্যান্ড কো–আমেরিকান দাসদের উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ তুলা আমদানি করত।
যুক্তরাজ্যের নটিংহাম ও হাল ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা দাসপ্রথার সঙ্গে গার্ডিয়ানের প্রতিষ্ঠাতা টেইলরের সম্পৃক্ততা চিহ্নিত করেছেন। তারা দেখিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলাইনা ও জর্জিয়ার উপকূলীয় এলাকায় তুলা উৎপাদনের সঙ্গে টেইলরের যোগসূত্র ছিল। গবেষকেরা একটি বিল খুঁজে পেয়েছেন। তাতে স্পষ্ট হয়েছে, টেইলরের কোম্পানি ওই অঞ্চল থেকে তুলা আমদানি করত। ওই বিলে তুলাখেতের মালিক ও দাসমালিকদেরও নাম রয়েছে।
গার্ডিয়ানের প্রতিষ্ঠাকালীন পৃষ্ঠপোষকদের একজন ছিলেন ব্যবসায়ী স্যার জর্জ ফিলিপস। তিনি জ্যামাইকার হ্যানোভারে একটি আখের খামারের অংশীদার ছিলেন। তার খামারের নাম ছিল সাকসেস সুগার প্ল্যানটেশন। এ ব্যবসায় দাসপ্রথার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ প্রতিবেদন প্রকাশের পরপর গার্ডিয়ানের মালিক স্কট ট্রাস্ট ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ও দাসদের বর্তমান বংশধরদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি গার্ডিয়ানের প্রথম দিকের সম্পাদকীয় অবস্থানের জন্যও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
স্কট ট্রাস্ট জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, দক্ষিণআমেরিকা এবং আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের খবর আরও বেশি প্রচার-প্রকাশ করবে গার্ডিয়ান।
এ জন্য নতুন সম্পাদকীয় নীতিমালা করা হবে। এ ছাড়া ক্যারিয়ারের মধ্য পর্যায়ে থাকা কৃষ্ণাঙ্গ সাংবাদিকদের বৈশ্বিক ফেলোশিপ দেবে সংবাদমাধ্যমটি। গার্ডিয়ান ফাউন্ডেশনের আওতায় দেওয়া হবে প্রশিক্ষণ।

আরো পড়ুন

ব্রিটেনে দেউলিয়া হওয়ার পথে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের ৩ কোম্পানি

নিউজ ডেস্ক

রানির কুচকাওয়াজে বাধা দেওয়ায় গ্রেফতার ২

ফস্টার কেয়ারারের ঘাটতিঃ যুক্তরাজ্যে গুরুতর সংকটের হুঁশিয়ারি বার্নার্ডোসের