ফাদার্স ডেতে যখন হাজারো সন্তান বাবাকে উপহার দিতে ব্যস্ত, তখন ২৭ বছর বয়সী কিয়েরান ইনেস জানেন, তার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহারটি তিনি পেয়েছেন নিজের বাবার শরীর থেকে—একটি কিডনি।
মাত্র ২৫ বছর বয়সে কিডনি বিকলের শিকার হন স্কটল্যান্ডের ওয়েস্ট লোথিয়ানের বাসিন্দা কিয়েরান। নিয়মিত ডায়ালাইসিস, জীবনের অনিশ্চয়তা এবং বহু স্বপ্ন থমকে গিয়েছিল এক মুহূর্তে। এরমধ্যে ছিল প্রেমিকা লারা রাসেলের সঙ্গে বিয়ের স্বপ্নটিও।
কিন্তু এক অদ্ভুত ভালোবাসার গল্পে মোড় নেয় তার জীবন। ৬৩ বছর বয়সী বাবা ব্রায়ান ইনেস নিজের একটি কিডনি ছেলেকে দান করেন। আর এই উপহারে কিয়েরানের জীবন বদলে যায় একদম।
“বাবা আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন,” বলেন কিয়েরান। “আমার এখন কোনো ভয় নেই। সবকিছু আমি করতে পারছি শুধুমাত্র তার জন্য।”
আগামী মাসেই কিয়েরান ও লারা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন আপহল শহরে। এরপর নিউইয়র্কে ‘মিনিমুন’ এবং অক্টোবরে স্বপ্নের হানিমুন ইতালিতে। এই সবই হতো না যদি তিনি এখনও ডায়ালাইসিসে থাকতেন।
ডায়ালাইসিসে থাকা অবস্থায় কিয়েরান নিজেকে বন্দি মনে করতেন। স্টেন্ট নিয়ে চলাফেরা, গোসল—সব কিছু কঠিন হয়ে উঠেছিল। চিকিৎসকরা জানান, লাইভ কিডনি ডোনেশনই তার দ্রুত মুক্তির একমাত্র পথ।
প্রথমে বিষয়টি বলা ছিল কষ্টকর, তবে তার প্রেমিকা লারা সাহস করে দুই পরিবারের মধ্যে অনুরোধ জানান। আটজন সদস্য সাড়া দেন, শেষ পর্যন্ত কিডনি ম্যাচ হয় কিয়েরানের বাবার সঙ্গে।
ব্রায়ান ইনেস, বিবিসি স্কটল্যান্ডের দীর্ঘদিনের ক্যামেরাম্যান, বলেন:
“সার্জারির ঝুঁকি ছিল, কিন্তু আমার ছেলেকে যেভাবে কষ্টে দেখছিলাম, মনে হলো কিছু একটা করতেই হবে। একবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আর পেছনে ফিরিনি।”
অপারেশনের পর দ্রুত সুস্থ হয়ে আবার কাজে ফিরেছেন ব্রায়ান। এখন তিনি গর্বিত বাবা এবং কৃতজ্ঞ সন্তানের এক অনন্য উদাহরণ।
এই ফাদার্স ডেতে কিয়েরানের আবেগময় স্বীকারোক্তি:
“আমি বাবাকে শুধু ভালোবাসি না—আমি তার কাছে চিরঋণী। তিনি আমাকে বাঁচিয়েছেন, আবার স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন।”
এটাই হয়তো সত্যিকারের ‘বাবার উপহার’—যা কোনো দোকানে কেনা যায় না, শুধু ভালোবাসা দিয়ে অর্জিত হয়।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
১৫ জুন ২০২৫