6.4 C
London
December 23, 2024
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্ব হারিয়েছে ভারতের হাসপাতালগুলো

বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধের কারণে ভারতের রোগীর সংখ্যা ২৫–৪০ শতাংশ কমে গেছে। গত আগস্টে ছাত্র–জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এখনো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি অস্থির অবস্থায় রয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সব কর্মীকে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশন। সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া। এর প্রভাবে ভারতের চিকিৎসা পর্যটন খাতে নেমেছে ধস।

দেশটির চিকিৎসা খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে চিকিৎসার জন্য আসা বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। বাংলাদেশিদের আসা কমে যাওয়ায় তারা যেসব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেন, সেখানে রোগীর সংখ্যা ২৫-৪০ শতাংশ কমে গেছে। যা তাদের আয়েও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

ভারতীয় রেটিং এজেন্সি কেয়ারএজ রেটিংসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভারতের মোট চিকিৎসা পর্যটনে বাংলাদেশের অবদান ৫০-৬০ শতাংশ।

বাংলাদেশিরা চিকিৎসা নিতে যান—এমন হাসপাতালগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে অ্যাপোলো হসপিটালস এন্টারপ্রাইজ (এএইচইএল)। হাসপাতালটি জানায়, বছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশি রোগীদের থেকে আয় ২৭ শতাংশ কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক রোগী থেকে আয়ের পরিমাণ গত বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ কমে গিয়েছে।

এএইচইএলের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মধু শশীধর বলেন, বাংলাদেশে অস্থিরতার কারণে ভারতে রোগী আসার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। সেখান থেকে আসা বেশির ভাগ রোগীই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা রুটিন চেকআপের জন্য আসতেন। অন্যদেরও তেমন জটিল রোগ দেখা যেত না। এখন রোগী আসা শুরু হলেও গত বছর এ সময় বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ রোগী আসতেন, সে অবস্থায় এখনো ফেরা সম্ভব হয়নি।

ভারত সরকার বাংলাদেশি নাগরিকদের এখন শুধু জরুরি ভিসা দিচ্ছে। এ অবস্থায় এ দেশ থেকে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীর সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। দেশটির বেশির ভাগ হাসপাতালের চিত্র বর্তমানে এ রকম।

ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম হাসপাতাল মনিপাল হাসপাতালের মোট আয়ের প্রায় ১০ শতাংশ আসে আন্তর্জাতিক রোগীদের কাছ থেকে। এই হাসপাতালের দুটি শাখা রয়েছে কলকাতা ও বেঙ্গালুরুতে। দুই শাখা মিলিয়ে মোট আন্তর্জাতিক রোগীর প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশ বাংলাদেশি।

মনিপাল হাসপাতালের প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা (চিফ অপারেটিং অফিসার) কার্তিক রাজাগোপাল বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে প্রচুর বাংলাদেশি রোগী আসেন। গত জুলাইয়ের পর থেকে রোগীর সংখ্যা কমতে থাকে। গত সেপ্টেম্বর মাসের পর থেকে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা কমে শতকরা ৫০-৬০ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে আমাদের আন্তর্জাতিক রোগীর মধ্যে ৬০ শতাংশ বাংলাদেশি।’

এ ছাড়া ম্যাক্স হেলথকেয়ারের মোট আয়ের ৯ শতাংশ আসে আন্তর্জাতিক ব্যবসা থেকে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে তাদের আন্তর্জাতিক ব্যবসা ১৮ শতাংশ বাড়লেও বাংলাদেশের বাজার থেকে তাদের আয় বেশ কমে গিয়েছে। হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে বাংলাদেশে তাদের একটি কার্যালয় রয়েছে।

হাসপাতালটির সিনিয়র ডিরেক্টর ও চিফ সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং অফিসার আনাস আব্দুল ওয়াজিদ বলেন, ম্যাক্স হেলথকেয়ারের মোট আন্তর্জাতিক আয়ে বাংলাদেশিদের অবদান প্রায় ৫ শতাংশ। তবে দেশটিতে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকটের কারণে এই আয় ৫০ শতাংশ কমে গিয়েছে।

গত মাসে বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা বলেছিলেন, বর্তমানে শুধু জরুরি ভিত্তিতে ভিসা দেওয়া হচ্ছে, কারণ মানবসম্পদ সংকট রয়েছে। তবে দেশটির হাসপাতাল খাতে এর তেমন বড় প্রভাব পড়বে না বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এ খাতে চিকিৎসা পর্যটনের অবদান ৩ থেকে ৫ শতাংশ।

ভারতের ইমিগ্রেশন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশটিতে চিকিৎসা নিতে ৬ লাখ ৩৫ হাজার পর্যটক গিয়েছিলেন। এর মধ্যে, প্রায় ৩ লাখ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার ছিলেন বাংলাদেশিই।

এম.কে
১৯ নভেম্বর ২০২৪

আরো পড়ুন

‌‘দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় মন্দির পাহারা দেবে মাদ্রাসা ছাত্ররা‌’

দুই বছর আগে থেকেই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পনা, সম্মতি আছে শেখ হাসিনার!

প্রথমবারের মতো এস আলম গ্রুপের বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে