আগামী বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি জোরদার করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সব ধরনের কাজ গুছিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ইসি তৎপর। প্রধান উপদেষ্টার ৫ বা ৮ আগস্টের ভাষণে নির্বাচনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা ইসির চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ইসি সূত্র জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির ৫ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটের সম্ভাবনা বেশি। সর্বাধিক রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে এবং ভোটের পর দুদিন ছুটি নিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবারকে ভোটের জন্য উপযুক্ত ধরা হচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলোও ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ভোটগ্রহণের দাবি জানাচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপি সহ অধিকাংশ দল দ্রুত নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে। রাজনৈতিক সচেতন নাগরিকরা আশা করছেন, দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। বহির্বিশ্বের দেশগুলোও একটি নির্বাচিত সরকারের জন্য অপেক্ষায় আছে, যা দেশের ব্যবসা ও কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, সংবিধানে কোনো পরিবর্তন না এলে প্রচলিত পদ্ধতিতেই ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। যদি ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ হয়, তাহলে ১১ বা ১৪ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভোটের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসি সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে ৩৯ আসনের সীমানা পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আপিল প্রক্রিয়া ১০ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। একই তারিখে হালনাগাদ ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করা হবে এবং ১২ দিনের মধ্যে তথ্য সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হবে।
নির্বাচনী সামগ্রী কেনা, পর্যবেক্ষক নিবন্ধন, নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫ এবং আচরণবিধির খসড়া চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের রদবদল শুরু হয়েছে এবং প্রশিক্ষণের জন্য ৯ লাখ কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।
ভোটের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৮ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবে। ক্ষতিগ্রস্ত ভোটকেন্দ্র মেরামত করে প্রায় ৪৬ হাজার কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। সাধারণত ভোটগ্রহণের ২৫ দিন আগে ভোটকেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, ইসির প্রস্তুতি ইতিমধ্যে দৃশ্যমান। সরকারের তরফ থেকে নির্দেশনা পেলে প্রস্তুতি আরও সহজ হতো, তবে বর্তমান সময়ের মধ্যেই ইসি পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার হবে বলে তারা মনে করছেন।
এম.কে
০৪ আগস্ট ২০২৫