হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হবার পর দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। এ সরকারে প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। ছাত্র-জনতার এক ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ গত ১৫ বছরের স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি লাভ করেছে। এই বিপ্লবকে ছাত্র-জনতার অভিপ্রায় ধরা হলেও এতে মূল চালিকা শক্তি ছিল এ দেশের শিক্ষার্থীরা। তাই দেশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহযোগিতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১৩ আগস্ট বিবিসি ‘ইউনূস: আই উইল হেল্প মেইক স্টুডেন্টস ড্রিম ফর বাংলাদেশ কাম ট্রু’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নতুন নেতা স্পষ্ট হয়েছে। এটি তার বিপ্লব ছিল না এবং এটি তার স্বপ্ন ছিল না। কিন্তু ড. ইউনূস যখন গত সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের থেকে ফোন পেয়েছিলেন তখন তিনি দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকার করেন। শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ৮৪ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের রাজনীতিতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল তা পূরণে ইউনূসকে দায়িত্ব নেয়ার আহ্বান জানায় শিক্ষার্থীরা।
তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশকে পুনর্গঠনের অঙ্গীকার করেন ইউনূস।
যমুনা স্টেট হাউসের কার্যালয়ে মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছিলেন, তিনি উপদেষ্টা হয়েছেন কেননা শিক্ষার্থীরা তাকে এই পদের জন্য অনুরোধ করেছিল। ইউনূস শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেন, এটা আমার স্বপ্ন নয় যে আমি উপদেষ্টা হব, এটা তাদের স্বপ্ন। তাই আমি তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাহায্য করছি। ইউনূস গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে হাসিনার পতনের পর ইউনূসের সামনে যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা নিয়ে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন তিনি।
নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন ইউনূস। সহিংসতায় চার শতাধিক মানুষের মৃত্যুর পর পুলিশ তাদের দায়িত্ব থেকে সরে যায়। পুরো বাহিনী ধর্মঘটে চলে গেলে কার্যত দেশে অস্থিরতা দেখা দেয়। এতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে না এসে উপায় ছিল না। বিক্ষোভের সময় দেশের বহু থানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। এই পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে জোর দেন ইউনূস।
তিনি বলেছেন, সবার আগে আইন-শৃঙ্খলা যাতে দেশের মানুষ শান্তিতে কাজ করতে পারে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী রাস্তায় ফেরায় সোমবার কিছুটা স্বাভাবিক পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে দেশের সব স্থানে পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। এক্ষেত্রে বৃহস্পতিবারের মধ্যে কাজে ফেরার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ পুরো দেশ থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল।
১৫ বছরের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী শাসনের পর দেশের পরিস্থিতি পুরো জগাখিচুড়ি হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইউনূস। বিগত দিনগুলোতে হাসিনা যেভাবে সরকার চালিয়েছে তাতে বোঝা যায় তিনি প্রশাসনের বিষয়ে কোনো জ্ঞান রাখেন না। এরপরেও বাংলাদেশ পুনর্গঠনে আশাবাদী ইউনূস।
তিনি বলেছেন, আমরা দেশে আছি, জনগণের জন্য একদমই নতুন মুখ হিসেবে। তবে আমরা শুধুমাত্র দেশের জন্যই আছি। কেননা অবশেষে দেশ থেকে মনস্টার পালিয়েছে। ইউনূসের মতে এখন সংস্কারই মুখ্য। কেননা গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কারের দাবিতেই রাজপথে নেমে এসেছিল শিক্ষার্থীরা। তারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরিদের জন্য বরাদ্দকৃত কোটা সিস্টেমের সংস্কার দাবি করেছিল। সেখান থেকেই একসময় সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হয়।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
১৩ আগস্ট ২০২৪