প্রথমবারের মতো মেয়েদের এশিয়ান কাপ ফুটবলে খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইতিহাসগড়া এই অর্জনের মধ্য দিয়ে লাল-সবুজের মেয়েরা প্রবেশ করেছে মূল আসরে, যা দেশের ফুটবলের জন্য এক অনন্য মাইলফলক। বাছাইপর্বে শতভাগ জয়ের পর আফিদা খন্দকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় দল ফিফার র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়েছে এক লাফে ২৪ ধাপ। বর্তমানে তাদের অবস্থান ১০৪তম।
বাংলাদেশ নারী ফুটবলের এই সাফল্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও প্রশংসা কুড়িয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান মেয়েদের এ অর্জনকে ঐতিহাসিক বলে আখ্যায়িত করেছে। অধিনায়ক আফিদা খন্দকার সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, “এই সাফল্য শুধু আমাদের নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি মেয়ের। এটি প্রমাণ করে বিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রম এবং ঐক্যের মাধ্যমে কী অর্জন করা যায়। তবে আমরা এখানেই থামব না। সামনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ আসছে, আমরা তা নিতে প্রস্তুত।”
আফিদার অনুপ্রেরণা এসেছিল পরিবার থেকেই। তার বাবা ছিলেন সাতক্ষীরার জেলা পর্যায়ের ফুটবলার। জীবিকার তাগিদে তাকে একসময় বিদেশে পাড়ি জমাতে হলেও দেশে ফিরে তিনি ছোট ব্যবসার পাশাপাশি শিশুদের জন্য একটি ফুটবল একাডেমি গড়ে তোলেন। সেই একাডেমির প্রথম দুই শিক্ষার্থী ছিলেন তার কন্যা আফিদা ও আফরা। আফিদা বেছে নেন ফুটবল, আর বড় বোন আফরা বিকেএসপি হয়ে গড়েন বক্সিং ক্যারিয়ার।
নিজের শুরুর দিনগুলো স্মরণ করে আফিদা বলেন, “ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা বাবার কাছ থেকেই পেয়েছি। তিনি চেয়েছিলেন প্রমাণ করতে, মেয়েরাও ছেলেদের মতোই ভালো ফুটবল খেলতে পারে। মাঠে তিনি ছিলেন কড়া কোচ, কখনোই আমাদের ছাড় দিতেন না। সেই পরিশ্রমের ফলেই আজ আমরা এখানে।” মাত্র ১১ বছর বয়সেই তিনি ডাক পান বাফুফের ট্রেনিং ক্যাম্পে।
পরিবারের সমর্থনকে যে কোনো সাফল্যের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করেন ১৮ বছর বয়সী এই অধিনায়ক। তিনি বলেন, “আমাদের সৌভাগ্য, আমরা বাবা-মায়ের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি। এই সমর্থনই আমাদের স্বপ্নকে বড় করেছে এবং অন্য মেয়েদের জন্যও অনুপ্রেরণা হবে।”
বাংলাদেশের মেয়েদের সাম্প্রতিক সাফল্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাক—এমন প্রত্যাশা আফিদার। তার বিশ্বাস, এশিয়ান কাপে অভিষেক কেবল শুরু। তিনি চান বিশ্ব ফুটবলে বাংলাদেশের প্রকৃত সামর্থ্য দেখাতে।
চলতি বছরের এপ্রিলে রাষ্ট্রীয় সফরে কাতারে গিয়েছিলেন আফিদা। সেখানে বিশ্বকাপের মাঠ এবং লিওনেল মেসিদের ব্যবহৃত ড্রেসিংরুম ঘুরে দেখেন। সে অভিজ্ঞতা তার স্বপ্নকে আরও বড় করেছে। আফিদা বলেন, “২০২২ বিশ্বকাপ টিভিতে পরিবারের সঙ্গে দেখার সময় মনে হয়েছিল, যদি আমি সেখানে থাকতে পারতাম! তখন অসম্ভব মনে হয়েছিল। কিন্তু সেই মাঠে দাঁড়িয়ে বুঝেছি—আমার আরও অনেক স্বপ্ন হয়তো নাগালের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।”
আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান কাপে অংশ নেবে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। লক্ষ্য আরও উঁচুতে, আর সেই স্বপ্ন বুকে নিয়েই প্রস্তুতি শুরু করেছে আফিদা খন্দকার ও তার সতীর্থরা।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২০ আগস্ট ২০২৫