ওয়াশিংটনে ন্যাটো সম্মেলনের শেষ দিনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, উত্তরাধিকারের কথা ভেবে এই নির্বাচনে আমি নড়ছি না। যে কাজ শুরু করেছিলাম, তা শেষ করার জন্য এই নির্বাচনে আমায় লড়তে হবে। কাজের গতি কমে গেছে বলে আমি মনে করি না। তবে নির্বাচন থেকে সড়ে না দাঁড়ানোর জন্য বড়সর এক ধাক্কা খেয়েছেন বাইডেন, আটকে গেছে নির্বাচনের অনুদানের টাকা।
গতকাল শুক্রবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে বাইডেনের কয়েকজন প্রধান অর্থদাতা তার নির্বাচনী খরচ বহন করা স্থগিত করে দেবেন। ‘ফিউচার ফরওয়ার্ড পিএসি’তে অনুদান স্থগিত রাখবেন তারা। এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বড় অঙ্কের অর্থ আটকে যাওয়া বাইডেনের জন্য একটি বিশাল ধাক্কা।
গত জুনের শেষের দিকে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের বিতর্ক সন্তোষজনক না হওয়ায় এমন পরিস্থিতর মধ্যে পড়তে হলো বাইডেনকে। এ বিষয়ে ফিউচার ফরোয়ার্ড গ্রুপ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে গ্রুপটির একজন উপদেষ্টা আশা করছেন বাইডেনের প্রার্থিতা নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে গেলে দাতারা তাদের অনুদান পুনরায় শুরু করতে পারেন।
উল্লেখ্য, সিএনএন চ্যানেলে কিছুদিন আগেই মুখোমুখি বিতর্কে অবতীর্ণ হয়েছিলেন বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই বিতর্কসভায় শারীরিকভাবে যথেষ্ট তরতাজা ছিলেন না বাইডেন। উত্তর দেওয়ার সময় কথার খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন। বিতর্কসভার মধ্যে কার্যত ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি।
পরে অবশ্য তিনি বলেছেন, দীর্ঘ সফরের কারণেই ওই দিন তিনি খুব সুস্থবোধ করছিলেন না।
কিন্তু বাইডেনের আচরণ দেখে ডেমোক্র্যাটদের একাংশও তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। তারা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে বাইডেনের সরে দাঁড়ানো উচিত। আগামী চার বছর তিনি সুস্থভাবে সরকার চালাতে পারবেন না।
এদিকে বাইডেনের একজন দাতা বলেন, বিতর্কের পর থেকে ফিউচার ফরোয়ার্ড বেশ কয়েকবার তাদের কাছে অনুদান চেয়েছিল। কিন্তু তিনি এবং তার বন্ধুরা আপাতত কোনো টাকা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ফিউচার ফরোয়ার্ডের প্রেসিডেন্ট চ্যান্সি ম্যাকলিন জানান, তাদের কাছে যে সম্পদ রয়েছে তা দিয়েই প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে সর্বোত্তমভাবে সমর্থন করার চেষ্টা করা হবে।
আরো এক দাতা বিলিয়নেয়ার রিড হফম্যান আবার মন্তব্য করেন, দাতারা এভাবে টাকা আটকে রেখে ভুল কাজ করছেন। হফম্যানের পরামর্শদাতা রাই স্টুয়ার্ডও বলেছেন, এই মূহূর্তে অনুদান বন্ধ করা একটি ভুল সিদ্ধান্ত।
প্রধান দাতারা বাইডেনের জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে সন্দিহান হওয়ায় সুপার পিএসি অর্থের ঘাটতির মুখোমুখি হতে পারে। আগামী মাসে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনের পরে শুরু হওয়া বিজ্ঞাপনগুলোতে ইতিমধ্যে ২৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করার কথা ভাবছে তারা।
ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কের আগে ফিউচার ফরোয়ার্ড দাতাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করে জানিয়েছিল যে তারা নির্বাচনের জন্য ৭০০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করার লক্ষ্য নিয়েছে এবং ইতোমধ্যেই ৪৩০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে।
ট্রাম্পের প্রচারের অন্যতম বিষয় হলো ৮১ বছর বাইডেনের বয়স এবং শারীরিক অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে বাইডেনকে বার বার এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবারও তার অন্যথা হয়নি। ন্যাটো সম্মেলনের শেষ দিন সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে বাইডেনকে। সেখানেই তিনি বলেছেন, সরে দাঁড়ানোর প্রশ্নই উঠে না। যে কাজ তিনি শুরু করেছেন, সে কাজ শেষ করতে হবে তাকে। নইলে যে আমেরিকার স্বপ্ন তিনি দেখিয়েছেন, তা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন তিনি।
সূত্রঃ দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স
এম.কে
১৪ জুলাই ২০২৪