বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তে কমিটি গঠন করছে সরকার। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে এই কমিটি গঠন করা হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আজ মঙ্গলবার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, কমিটি গঠন করার পরে কত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে সে বিষয়ে পরবর্তীতে জানানো হবে। কমিটিতে সদস্য থাকবেন ৫ থেকে ৯ জন।
এর আগে গত রোববার হাইকোর্টকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখনই কমিশন গঠন করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে দুটি মামলা বিচারাধীন থাকায় কমিশন গঠন থেকে আপাতত সরে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই অসন্তোষ জানাতে থাকেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন একটি তদন্ত প্রয়োজন বলে ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমসহ অনেকে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে আমি প্রথম থেকেই বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে সোচ্চার ছিলাম এবং এখনো রয়েছি।
উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রথমবার এবং গত ৪ নভেম্বর বিজিবি সদর দপ্তর পরিদর্শনকালে দ্বিতীয়বার ঘোষণা দিই। শুধু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে নয়, একজন সাধারণ নাগরিক ও সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সদস্য হিসেবে আমি শুরু থেকেই বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার দাবি করে আসছি।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনগণের অধিকার, সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর।
প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও সচিবের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত ড. নাসিম আহমেদসহ বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত চেয়ে আন্দোলন শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিডিআর হত্যার পুরো ঘটনার তদন্তে কমিশন গঠনের কথা সামনে আসে।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ ঘটনায় রাজধানীর লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে এসব মামলা নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যা মামলায় ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। পরে আরও ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। রক্তক্ষয়ী ওই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে বাহিনীটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
এম.কে
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪