ইংল্যান্ডের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব সংকট আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, কারণ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসার জন্য আবেদন কমে যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষা খাতের সূত্রগুলো সতর্ক করেছে যে টিউশন ফি বৃদ্ধি সত্ত্বেও ইংল্যান্ডের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব সংকট প্রকট আকারে দেখা দিবে।
এই বছর ব্রিটিশ সরকার দেশীয় শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি £৯,৫৩৫ পাউন্ড করেছে, যা গত আট বছরে প্রথম বৃদ্ধি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনো সংকটপূর্ণ, এবং আরও কোর্স বন্ধ হওয়া ও কর্মী ছাঁটাইয়ের বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।
ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স বৃদ্ধি অনেক প্রতিষ্ঠানকে আর্থিকভাবে আরও ক্ষতির সম্মুখীন করেছে বলে জানা গেছে।
কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন ফি কাঠামো কার্যকর করতে পারবে না, ফলে তারা শুধুমাত্র নতুন শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ পাবে। একটি সূত্র জানিয়েছে, “ ফি বৃদ্ধি স্বাগত জানানো হলেও, এটি মূলত কোনো কাজেই আসবে না।”
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এক বছরে অধ্যয়ন ভিসার জন্য আবেদন ১৩% কমেছে, যার মূল কারণ শিক্ষার্থীদের পরিবারকে সঙ্গে আনার ওপর নতুন বিধিনিষেধ। বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আসা আয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশীয় শিক্ষার্থীদের কোর্স ও গবেষণার জন্য ভর্তুকি দিতে ব্যবহার করে।
গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রতি বছর £৫.৩ বিলিয়ন এবং দেশীয় স্নাতক শিক্ষার জন্য প্রায় £১.৭ বিলিয়ন ঘাটতি পূরণ করতে হয়, যা বছর বছর বাড়ছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রিজেট ফিলিপসন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যে পড়তে আসার আহ্বান জানিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন।
উপাচার্যরা এখন সরকারের বিদেশি শিক্ষার্থী নীতিতে আরও কঠোর ও নেতিবাচক ভাষায় বিরোধিতা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এটি শিক্ষামন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে উত্তেজনার কারণ হতে পারে।
এই খবরের মধ্যেই নতুন গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে, যা দেখায় যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আগমনে জনসাধারণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই। বরং ৬১% মানুষ চান যে বর্তমান অভিবাসন হার অপরিবর্তিত থাকুক বা আরও বাড়ুক। ব্রিটিশ ফিউচার থিঙ্কট্যাঙ্কের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাত্র ২৫% মানুষ বিদেশি শিক্ষার্থী অভিবাসন কমাতে বা বন্ধ করতে চায়, যা যুক্তরাজ্যের মোট অভিবাসনের প্রায় ৪০%।
তবে প্রতিবেদনে আবাসন সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণা পরিচালক হিদার রল্ফ বলেছেন, “অভিবাসন বিতর্ক আরও সংবেদনশীল ও বিভাজনমূলক হয়ে উঠছে, তাই বিশ্ববিদ্যালয় ও তাদের প্রতিনিধিদের জনসমর্থন ধরে রাখার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে।”
হায়ার এডুকেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক নিক হিলম্যান বলেন, দেশীয় শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি বৃদ্ধির পরেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংকট কমেনি। তিনি যোগ করেন, “ফি বৃদ্ধি আসলে কোনো পার্থক্য আনেনি, কারণ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স বৃদ্ধির ফলে এর সম্পূর্ণ অর্থ কিংবা বেশি চলে যাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনা করলে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।”
তবে উপাচার্যরা কিছু ইতিবাচক দিক দেখছেন। শিক্ষামন্ত্রী ব্রিজেট ফিলিপসনের সাম্প্রতিক বক্তব্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল, যা অনেকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইউনিভার্সিটিজ ইউকে ইন্টারন্যাশনালের উপ-পরিচালক হ্যারি অ্যান্ডারসন বলেন, “যুক্তরাজ্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্রধান গন্তব্য, যা আমাদের উচ্চশিক্ষা খাতের শক্তি ও সুনামকে প্রতিফলিত করে। এই শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাফল্যে অবদান রাখে না, বরং প্রতি বছর যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে £৪১.৯ বিলিয়ন যোগ করে।”
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রতি কঠোর নীতি যুক্তরাজ্যের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে, কারণ এটি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল শিক্ষা গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
রাসেল গ্রুপের বেন মুর বলেন, “যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জনপ্রিয়তা সত্যিকারের সাফল্যের গল্প হিসেবে দেখা উচিত। জনগণের মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য শক্তিশালী সমর্থন রয়েছে, এবং আমরা শিক্ষামন্ত্রীর ইতিবাচক বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। তবে এটি অবশ্যই একটি স্থিতিশীল ও সহায়ক অভিবাসন নীতির মাধ্যমে সমর্থিত হওয়া উচিত।”
শিক্ষা বিভাগের মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলেও তারা এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫