এখানে এখন আমরা কেউ নিরাপদে নেই। যেখানেই বিদেশি পাচ্ছে, সেখানেই মারছে। এখানে পুলিশ আছে, কিন্তু তারা আমাদের কাউকে সাহায্য করছে না’
শনিবার ১৮ মে বিকেলে এ কথাগুলো বলেন কিরগিস্তানে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী এক শিক্ষার্থী। তিনি জানান, কিরগিস্তানের স্থানীয়রা বাংলাদেশী, ভারতীয়, পাকিস্তানি ও মিশরীয়সহ সকল বিদেশী শিক্ষাথীদের উপর শুক্রবার রাতে আক্রমণ করেছে। এই আক্রমণে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজন বিদেশী নাগরিক নিহত হয়েছেন ও অনেকে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে শুনতে পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। যদিও এ বিষয়ে তারা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেননি। এসব হামলার প্রতিবাদে পাকিস্তানের কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ সমাবেশও হয়েছে।
বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা বলছেন, বর্তমানে কিরগিস্তানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতসহ প্রায় ১০টি দেশের ১৫ হাজারের মতো শিক্ষার্থী আছে। তবে এর মাঝে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ২০০ জনের বেশি।
বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের এক তৃতীয়াংশ, মানে আনুমানিক ৩০০ জন দেশটির সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও বাকি প্রায় সবাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।
বাংলাদেশী শিক্ষার্থী আফরিন আক্তার অনন্যা বলেন, ‘আমরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে নিরাপদে আছি। কিন্তু যারা প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করছে, তারা নিরাপদে নাই।’
তিনি জানান, ‘গতকাল রাত ৮টার দিকে হামলার ঘটনাটি ঘটে। তারপর রাতভর কিরগিস্তানের রাজধানী বিশকেককের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে ঢুকে স্থানীয়রা আক্রমণ করে। তারা প্রাইভেট হোস্টেলগুলোতে ঢুকে ছেলে-মেয়ে কিছু ভেদাভেদ না করে সবার গায়ে হাত তুলেছে। এমনও শুনতেছি যে এখন পর্যন্ত অনেকেই ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এদের মাঝে বাংলাদেশী আছে কি না, জানি না। আর ছয় জনের মতো মারা গেছে, কোন কোন দেশের তা জানি না এখনো।’
তিনি আরো বলেন, তবে ‘নিহতদের একজনের মুখমণ্ডল বাংলাদেশীর মতো বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু আমরা কনফিউজড।’
এই শিক্ষার্থী আরো জানান যে হোস্টেলের পরিবর্তে যারা বাসায় থাকছেন, তারা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা যেন ঘর থেকে বের না হয়। কারণ বাইরে বের হলেই স্থানীয়দের সাথে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। তবে আজকের রাতটা গতকাল রাতের মতো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে কি না, সে নিয়ে আমরা আতঙ্কিত।’
কিরগিস্তানে অধ্যয়নরত একাধিক দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের বিবাদের বিষয়ে বিবিসি কথা বলেছে এবং তাদের কাছে ঘটনার সূত্রপাত সম্বন্ধে জানতে চেয়েছে।
তারা প্রত্যেকেই বলেছেন যে তারা নিশ্চিত নন যে কী ঘটেছে। তবে তারা ‘শুনেছেন’ যে মিশরের কিছু নাগরিকদের সাথে কিরগিস্তানের স্থানীয়দের সাথে ঝামেলা তৈরি হয়েছে এবং তারপরই এই অবস্থা।
কিরগিস্তানে যেহেতু বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই, তাই উজবেকিস্তানে অবস্থিত বাংলাদেশী দূতাবাস থেকে কিরগিস্তান সংক্রান্ত সবকিছু দেখভাল করা হয়।
উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন যে তারা ইতোমধ্যে অনেক বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, এই ঘটনার কারণে এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশী শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছে বা মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে, এমন কোনো রিপোর্ট আমরা কারও কাছ থেকে পাইনি। তবে শিক্ষার্থীদের মাঝে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং ‘তারা এখনো প্যানিকড’।
কিরগিস্তানের জাতীয় সংবাদ সংস্থা ‘কাবার’ জানিয়েছে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে জাতিগত সহিংসতা উসকে দেয়ার চেষ্টার নিন্দা করেছে দেশটির মন্ত্রীসভা।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও হত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোকে মিথ্যা হিসেবে উল্লেখ করেছে সেদেশের মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ কার্যালয় থেকে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব অপরাধের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করছে এবং সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা হবে।
কাবার তাদের প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করেছে যে দেশটির রাজধানী বিশকেকের বুডিনোগো সড়কের একটি হোস্টেলের কাছে মারামারির পর পুলিশ চারজন বিদেশীকে আটক করেছে। পরে আটক হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা আইনে মামলা করা হয়েছে।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
১৯ মে ২০২৪