কম বেতনের অভিবাসী শ্রমিকরা গত এক দশকে বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ কাতারে তাদের চাকরি সুরক্ষিত করতে বিলিয়ন ডলার নিয়োগ ফি দিতে বাধ্য হয়েছে, দ্য গার্ডিয়ানের একটি তদন্তে এমনটি দেখা গেছে। আর এই ফি অনেক বেশি নেওয়া হয়েছে নেপাল ও বাংলাদেশের শ্রমিকদের কাছ থেকে।
কাতারে অভিবাসী হিসেবে কাজ করা বাংলাদেশি শ্রমিকরা ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ফি প্রদান করেছেন, যা ২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্তও হতে পারে। এদিকে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে নেপালি শ্রমিকরা ৩২০ মিলিয়ন থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার প্রদান করেছেন।
কাতারের স্বল্প বেতনের অভিবাসী শ্রমিকদের মোট খরচ এর থেকেও অনেক বেশি হতে পারে কারণ দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার অন্যান্য শ্রম-প্রেরণকারী দেশ থেকে শ্রমিকরাও উচ্চ ফি প্রদান করে।
বাংলাদেশ এবং নেপাল থেকে আসা অভিবাসী, যারা কাতারের ২ মিলিয়ন শক্তিশালী বিদেশি কর্মশক্তির প্রায় এক তৃতীয়াংশ, তারা সাধারণত যথাক্রমে ৩ হাজার থেকে ৪০০ ডলার এবং ১ হাজার থেকে ১৫০০ ফি প্রদান করে। এর মানে হল যে বাংলাদেশের অনেক কম মজুরি কর্মী – যারা মাসে ২৭৫ ডলারের মতো আয় করতে পারে – তাদের নিয়োগের ফি পরিশোধ করতে অন্তত এক বছর কাজ করতে হবে।
বিশ্বকাপ শুরু হতে আর মাত্র কয়েক মাস বাকি আছে। বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্রতম শ্রমিকদের শোষণের মাত্রা প্রকাশ কর পেল এরই মাঝে। এদের মধ্যে অনেকেই বিশ্বকাপ-সম্পর্কিত নির্মাণ এবং আতিথেয়তা প্রকল্পে নিযুক্ত ছিলেন।
গার্ডিয়ানের প্রাপ্ত তথ্যসমূহ বেশ কয়েকটি শ্রম অধিকার গোষ্ঠী দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে। এটি ২০১৪ এবং ২০২২ সালের মধ্যে অসংখ্য মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং শ্রম বিশেষজ্ঞের দ্বারা রিপোর্ট করা নিয়োগ ফি সম্পর্কিত ব্যয়ের উপর ভিত্তি করে অনুমান করা হয়েছে।
এদিকে বলা হচ্ছে, নিয়োগ ফি নেওয়া কাতারে বেআইনি। যদিও উপসাগরীয় সব দেশেই এটা সাধারণ ব্যাপার।
প্রায়শই শ্রম প্রেরণকারী দেশগুলিতে নিয়োগকারী এজেন্টরা কর্মীদের তাদের নিজস্ব নিয়োগের জন্য অর্থ প্রদানে বাধ্য করতে দেখা যায়। প্রস্থানের আগে শ্রমিকদের নিজ দেশে এজেন্টদের ফি প্রদান করা হয়।
এই ফি পরিশোধের জন্য শ্রমিকদের প্রায়ই উচ্চ সুদে ঋণ নিতে হয় বা জমি বিক্রি করতে হয়। মানবাধিকারকর্মীদের মতে, এটা তাদেরকে দাসত্বের ঝুঁকিতে ফেলে, এটা আধুনিক দাসত্বের একটি রূপ। কারণ, ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের চাকরি ছেড়ে যেতে পারে না।
৩০ মার্চ ২০২২
এনএইচ