প্রপার্টি কেনার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়াকে বলা হয় মর্গেজ। প্রপার্টি ক্রয়ের পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে মর্গেজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই মর্গেজ পাওয়ার উপর নির্ভর করছে আপনি কী ধরনের প্রপার্টি এবং কত দামের প্রপার্টি কিনতে পারবেন। তবে বিভিন্ন কারণে মর্গেজ অ্যাপলিকেশন করার পর ল্যান্ডর কর্তৃক মর্গেজ অ্যাপলিকেশন রিফিউজ হয়ে থাকে। আজকে আমরা মর্গেজ অ্যাপলিকেশন রিফিউজ হওয়ার বিভিন্ন কারণ সমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করব।
এডভার্স ক্রেডিট হিস্ট্রি
প্রত্যেক মর্গেজ এপ্লিকেশন এর বিপরীতে ব্যাংক আবেদনকারীর ক্রেডিট হিস্ট্রি চেক করে থাকে। সেজন্য ভালো হয়, যদি আপনি নিজেই আপনার ক্রেডিট রিপোর্ট আগে দেখে নিন।আপনার ক্রেডিট রিপোর্ট এ যদি কোন ভূল তথ্য থাকে, তাহলে তা আগে থেকেই সংশোধন করে নিতে পারবেন। একটি ক্রেডিট রিপোর্ট এ মূলতঃ নাম,জন্ম তারিখ, বর্তমান ঠিকানা, পূর্বের ঠিকানা, ইলেক্টোরাল নিবন্ধন এবং বিগত ৬ বছরের ক্রেডিট হিষ্ট্রি লিপিবদ্ধ থাকে। কারও যদি কোন কোর্ট জাজমেন্ট অথবা লেনদেন ডিফল্ট থাকে, সেটিও ক্রেডিট রিপোর্ট এ রেকর্ড থাকে, কেউ যদি ক্রেডিট কার্ডের অথবা লোন এর নিয়মিত পেমেন্ট দিতে কখনও দেরি করেন অথবা কোন মাসে মিসড্ করেন তাহলে সেটিও ক্রেডিট রিপোর্ট এ রেকর্ড থাকে। অনেক সময় এই ক্রেডিট রিপোর্ট এ ভুল থাকতে পারে, যার দরুন আপনার মর্গেজ এপ্লিকেশন বাতিল হতে পারে। কারও যদি ক্রেডিট রিপোর্ট ভালো না থাকে, তাহলে অনেক হাইষ্ট্রীট ব্যাংক মর্গেজ দেয় না, তবে এক্ষেত্রে অনেক নন – হাইষ্ট্রীট ব্যাংক আছে যারা কিছুটা বেশি ইন্টারেষ্ট রেইট এ মর্গেজ দিয়ে থাকে।
অসম্পূর্ণ তথ্য প্রদান:
মরগেজ আবেদন ফর্মে ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য প্রদান করা হলে তা স্বাভাবিকভাবেই আবেদন রিফিউজ করার কারণ হতে পারে।
ইলেক্ট্ররাল রোল:
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি আপনার নাম স্থানীয় কাউন্সিলের ভোটার তালিকায় আপ-টু-ডেট রাখবেন। তাহলে ব্যাংক আপনার ক্রেডিট চেক করার সময় খুব সহজেই আপনার বর্তমান ঠিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবে।
নতুন ক্রেডিট জন্য সাম্প্রতিক অনেকগুলি অনুসন্ধান
ল্যান্ডাররা আপনাকে একজন উচ্চ-ঝুঁকির ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচনা করবে, যদি আপনি সম্প্রতি বেশকিছু নতুন ক্রেডিট পাওয়ার জন্য অ্যাপলিকেশন করেন। এমনকি যদি আপনি অফার করা সমস্ত ক্রেডিট গ্রহণ নাও করেন।
ব্যাংকরাপ্ট
Bankruptcy এর ধরন এবং এটির কারণের উপর নির্ভর করে, আপনাকে একটি প্রচলিত লোনের জন্য যোগ্য হওয়ার জন্য ডিসচার্জ পর দুই থেকে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে।
স্থিতিশীল ইনকাম
ল্যান্ডাররা আশ্বস্ত হতে চান যে আপনার ভবিষ্যৎ মর্গেজ পরিশোধের জন্য আপনার স্থির এবং নির্ভরযোগ্য আয় আছে। তাই মর্গেজ অ্যাপলিকেশন এর পূর্বে জবহোল্ডারগণ বর্তমান জবের নুন্যতম ৬ থেকে ৩৬ মাসের পে-স্লিপ এবং পি-৬০ সংগ্রহে রাখুন। সেলফ এমপ্লয়েডগণ নুন্যতম ২ বছরের SA302 এবং tax year overview সংগ্রহে রাখুন।
পে-স্লিপ এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট:
আপনি যদি পার্ট টাইম অথবা ফুল টাইম চাকরি করেন, তাহলে নূন্যতম সর্বশেষ তিন মাসের পে-স্লিপ এবং সর্বশেষ পি-৬০ এর কপি সংগ্রহে রাখুন। আপনি যদি নিয়মিত অথবা অনিয়মিত বোনাস পান, তাহলে বিগত ২ বছরের বোনাসের পে-স্লিপগুলোও সংগ্রহে রাখুন।
যে ব্যাংক একাউন্টে আপনার বেতন আসে এবং যে একাউন্টে আপনার নিয়মিত লেনদেন হয়, সেই একাউন্টের সর্বশেষ তিন মাসের স্টেটমেন্ট সাথে রাখুন। আপনার ডিপোজিট এর টাকা যে ব্যাংক একাউন্টে রাখেন, তার ছয় মাসের স্টেটমেন্টস সংগ্রহে রাখুন। আপনি যদি আপনার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন অথবা অন্য কারো কাছ থেকে ডিপোজিটের টাকা গিফট হিসেবে নেন, তাহলে দাতাদের কাছ থেকে তার আইডি, গিফট ডিক্লারেশন স্টেটমেন্ট এবং তার ব্যাংকের স্টেটমেন্টস এর কপি সংগ্রহে রাখুন।
ক্রেডিট হিস্ট্রি তৈরি করা
নিয়মিত বিভিন্ন লেনদেন এর মাধ্যমে ক্রেডিট হিস্ট্রি তৈরি করতে হবে। ক্রেডিট হিস্ট্রি কম বা না থাকলে, ক্রেডিট কোম্পানি আপনার অ্যাপলিকেশন সমূহ সহজে প্রসেস করতে পারেনা। এর ফলে ক্রেডিট স্কোর কম হয়।
ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন
ভাল ক্রেডিট স্কোর এর জন্য আপনার ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন কম রাখতে হবে। উদাহারনসরূপঃ আপনার ক্রেডিট কার্ড সর্বোচ্চ লিমিট হল ২০০০ পাউন্ড। আপনি যদি ১০০০ পাউন্ড খরচ করেন, তবে আপনার ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন হবে ৫০%। ভাল ক্রেডিট স্কোর এর জন্য সর্বদা ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন ৩০% রাখার চেষ্টা করতে হবে। আপনার যাবতীয় ক্রেডিট কার্ড এবং লোন পরিশোধ করে ফেলা অথবা কমিয়ে ফেলা। বিশেষ করে হাই ইন্টারেস্ট রেটে যেসব ডেবট রয়েছে তা কমিয়ে ফেলা।
বর্তমান ডেবট এর পরিস্থিতি
আপনার যদি অনেক লোন থাকে, তাহলে এটি মর্গেজ এর জন্য আপনার গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করবে।
আবেদনকারীর বয়স
মর্গেজ নেওয়ার বেলায় আবেদনকারীর বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আবেদনকারীর বয়স অবশ্যই ১৮ বছরের কম হতে পারবে না। তবে কোন কোন ব্যাংক এর ক্ষেত্রে সর্বনিন্ম বয়স ২১ বছরের কম হতে পারবে না।মর্গেজ এর মেয়াদ হতে হবে নূন্যতম ৫ বছর, অর্থাৎ এর চেয়ে কম মেয়াদে মর্গেজ নেওয়া যাবেনা। কেউ যদি রেসিডেনসিয়াল প্রপার্টি কেনে অর্থাৎ থাকার জন্য প্রপার্টি কেনে, সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে মর্গেজ এর মেয়াদ যেনো কোনভাবেই আবেদনকারীর বয়স ৭০ অতিক্রম না করে। যদি আবেদনকারীর পেনশন ফান্ড থাকে, তাহলে অবশ্য অনেক ব্যাংক মর্গেজ এর মেয়াদ আবেদনকারীর বয়স ৭০ অতিক্রম করলেও বিবেচনা করবে। যদি কেউ বাই-টু-লেট প্রপার্টি কেনে, সেক্ষেত্রে বেশিরভাগ ব্যাংক আবেদনকারীর বয়স ৮০ বছর পর্যন্ত অনুমতি দেয়।
ডিপোজিট:
বেশিরভাগ মর্গেজ প্রোভাইডাররা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিপোজিট (সাধারণত প্রপার্টি মূল্যের ১০-২০%) দাবি করে। যদি আপনার কাছে পর্যাপ্ত ডিপোজিট না থাকে, তবে আপনার মর্গেজ আবেদন প্রত্যাখ্যাত হতে পারে।
আবাসন ইতিহাস:
যদি আপনার পূর্ববর্তী কোন ভাড়া বা আবাসন সম্পর্কিত সমস্যা থাকে, যেমন বিল পরিশোধে অবহেলা, তাহলে তা মর্গেজ আবেদন প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ডেবট টু ইনকাম রেসিও (Debt-to-Income Ratio):
যদি আপনার মাসিক আয় এবং লোন অনুপাত বেশি হয়, অর্থাৎ আপনি যা আয় করেন তার তুলনায় লোনের পরিমাণ বেশি, তাহলে এটি মর্গেজ আবেদন প্রত্যাখ্যান করার একটি কারণ হতে পারে। ল্যান্ডার এর নিকট এই অনুপাতটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।
অনিয়মিত ট্রান্সফার:
আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যদি অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক ট্রান্সফার/লেনদেন হয়ে থাকে, বিশেষ করে যদি তা ল্যান্ডারের জন্য অস্পষ্ট হয়, তাহলে এটি সন্দেহের কারণ হতে পারে এবং আপনার মর্গেজ আবেদন বাতিল হতে পারে।
Repossessions
যদি অতীতে আপনার কোনো প্রপার্টি repossessed হয়ে থাকে, অর্থাৎ কোনো মর্গেজ পরিশোধ না করার কারণে মর্গেজ ল্যান্ডার আপনার বাড়ি বা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে, তাহলে এটি আপনার মরগেজ আবেদন রিফিউজ হওয়ার কারণ হতে পারে।
প্রপার্টির অবস্থান:
প্রপার্টির অবস্থান (যেমন, কর্মস্থল হতে অতিরিক্ত দূরবর্তী বা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে) ইত্যাদি কারণে মর্গেজ আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
অপরাধমূলক অতীত:
যদি আপনার অপরাধমূলক ইতিহাস থাকে, তবে এটি মরগেজ আবেদন বাতিল হওয়ার একটি বড় কারণ হতে পারে। ব্যাংক বা ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান আপনাকে ঋণ দেওয়ার সময় নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে এটি বিবেচনা করতে পারে।
মর্গেজ এফোরডেবিলিটি টেস্ট
আপনি যখনই কোন মর্গেজ লেন্ডারের কাছে মর্গেজ অ্যাপলিকেশন করবেন, তখন ল্যান্ডার প্রথমেই আপনার মর্গেজ এফোরডেবিলিটি এবং আপনার ইনকাম চেক করবে। তারা দেখবে আপনার বাৎসরিক ইনকাম কতো, আপনার ইনকামের স্ট্যাবিলিটি কেমন এবং আপনি মাসিক মর্গেজ পেমেন্ট ঠিক মত দিতে পারবেন কিনা। মর্গেজ এফোরডেবিলিটি টেস্ট এ একটি নির্দিষ্ট “Stress Interest Rate” এর মাধ্যমে মর্গেজ গ্রহীতার মাসিক মর্গেজ পেমেন্ট করার এফোরডেবিলিটি নির্ণয় করা হত। এর মাধ্যমে নির্ণয় করা হত মর্গেজ নেয়ার প্রথম ৫ বছরের মধ্যে ল্যান্ডার এর স্ট্যান্ডার্ড ভেরিয়েবল রেট এর চেয়ে ৩% বেশি যদি মর্গেজ ইন্টারেস্ট রেট বেড়ে যায়, তবে মর্গেজ গ্রহীতা মাসিক পেমেন্ট পরিশোধ করতে পারবে কিনা।
প্রপার্টি মার্কেট এবং মর্গেজ সম্পর্কে আপনাদের কোন মতামত বা জিজ্ঞাসা থাকলে নিন্মের ই-মেইল অথবা টেলিফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।
Email: info@benecofinance.co.uk
Tel: 02080502478