যুক্তরাজ্যে বায়ু দূষণের কারণে প্রতি সপ্তাহে ৫০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন, এবং দেশের ৯৯ শতাংশ জনগণ প্রতিদিন বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস।
প্রতিবেদন অনুসারে, বায়ু দূষণের কারণে বছরে ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটছে এবং দেশের অর্থনীতিতে এর ক্ষতি হচ্ছে ২৭ বিলিয়ন পাউন্ড। ডিমেনশিয়া ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব হিসেব করলে ক্ষতির পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে।
বায়ু দূষণ শুধু ফুসফুস নয়, শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গের ক্ষতি করছে — এমনকি কম মাত্রাতেও। গর্ভের শিশুর বিকাশ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, মানসিক স্বাস্থ্য ও স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়ছে।
এই দূষণের ফলে মানুষের গড় আয়ু প্রায় ১.৮ বছর হ্রাস পাচ্ছে, যা ক্যানসার ও ধূমপানের মতো প্রাণঘাতী কারণগুলোর কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ইংল্যান্ডের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা অধ্যাপক ক্রিস হুইটি বলেছেন, “বায়ু দূষণ এখনও আমাদের স্বাস্থ্যকে সবচেয়ে বড় পরিবেশগত হুমকি দিচ্ছে। বিগত তিন দশকে দূষণ কিছুটা কমলেও এটি এখনও অকাল মৃত্যুর বড় কারণ।”
RCP-এর সভাপতি ডা. মুমতাজ প্যাটেল বলেন, “এটি আর কেবল পরিবেশগত সমস্যা নয়, বরং একটি বিশুদ্ধ জনস্বাস্থ্য সংকট। আমরা এমন একটি বিপর্যয় মেনে নিচ্ছি, যা প্রতিরোধযোগ্য এবং যার জন্য আমরা বিশাল মূল্য দিচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “পরিষ্কার বাতাসকে যেমন আমরা বিশুদ্ধ পানি বা নিরাপদ খাদ্যের মতো গুরুত্ব দিই, তেমন গুরুত্ব দিতে হবে এটিকেও। এটি মৌলিক মানবাধিকার এবং আমাদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ।”
অ্যাজমা অ্যান্ড লাং ইউকে জানিয়েছে, বায়ু দূষণের কারণে প্রতি পাঁচজন ফুসফুসের রোগীর একজন গুরুতর শ্বাসকষ্ট বা প্রাণঘাতী অ্যাজমার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী সারাহ স্লিট বলেন, “সরকার এখনো রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অথচ এটি একটি জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
বৃহস্পতিবার চিকিৎসক, নার্স ও রোগীরা লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতাল থেকে হেঁটে ডাউনিং স্ট্রিট যাবেন এবং সরকারের প্রতি কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি প্রদান করবেন।
আগামী মাসে সংসদে ফের উত্থাপিত হবে “এলার আইন”, যা নয় বছরের শিশু এলা অ্যাডু-কিসি-ডেবরাহর নামে। বায়ু দূষণের কারণে অ্যাজমায় মৃত্যুবরণকারী তিনিই প্রথম ব্যক্তি যার মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক কারণ হিসেবে দূষণকে উল্লেখ করা হয়।
সরকার বলছে, তারা ইতিমধ্যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে ৫৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দিয়েছে এবং দূষণ কমাতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি যথেষ্ট নয়।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৯ জুন ২০২৫