ব্রিটেনের সরকারি অভিবাসী আটককেন্দ্রে ডিপোর্ট বা নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর অপেক্ষায় থাকা অভিবাসীদের ওপর শারিরীক নির্যাতন ও বর্ণবাদী আচরণ করা হয় বলে একটি তদন্তে উঠে এসেছে৷ ‘কারাগারের মতো’ এসব আটককেন্দ্রে কোনো অভিবাসীকে ২৮ দিনের বেশি সময় না রাখারও জোর সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে৷
তদন্ত দলের প্রধান কেট ইভস বলেন, লন্ডনের দক্ষিণে গ্যাটউইক বিমানবন্দরের কাছে ব্রুক হাউস ইমিগ্রেশন রিমুভাল সেন্টারে অভিবাসীদের সঙ্গে ‘ভয়ঙ্কর আচরণ’ করা হয়েছে৷
ইভস বলেন, এই অভিবাসী আটককেন্দ্রটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা এক ধরনের ‘বিষাক্ত সংস্কৃতি’ গড়ে তুলেছেন৷ ফলে, সেখানে অবস্থানরত অভিবাসীদের বর্ণবাদী আলাপ, অবমাননাকর ভাষা, অমানিবক মন্তব্য শুনতে হয়৷ একইসঙ্গে তাদের ওপর বলপ্রয়োগ বা শারিরীক নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে৷
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘এসব ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর ছিল, একজন অভিবাসী যখন ঘাড় ব্যথা নিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন, তখন ব্যথার স্থানে তাকে চাপ দিয়ে ধরা হয়৷’’
এর আগে দেয়া সংস্কার প্রস্তাবের আহ্বানও সরকার উপেক্ষা করেছে বলে উল্লেখ করেন ইভস৷ সংস্কার প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করতে আবারও কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান রাখেন তিনি৷
ব্রুক হাউস এবং অভিবাসন আটককেন্দ্রের সংস্কৃতি পরিবর্তনে সংস্কার প্রস্তাবগুলোতে রাখা ৩৩টি সুপারিশের মধ্যে, ২৮ দিনের বেশি কাউকে আটক না রাখার বিষয়ে বেশি জোর দিয়েছেন তদন্তকারী দল৷ কারণ, যুক্তরাজ্যের সাতটি অভিবাসী অপসারণ কেন্দ্রে প্রায় ২০ হাজার অভিবাসী নিজ দেশের ফেরত পাঠানো বা যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছেন৷
কিন্তু যুক্তরাজ্য ইউরোপের একমাত্র দেশ, যেখানে একজন অভিবাসীকে কত দিন আটকে রাখা যেতে পারে তার কোনো সীমারেখা নেই৷ অথচ যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে কাউকে ডিপোর্ট বা ফেরত পাঠানো না গেলে, তাকে আটকে রাখা সাধারণত বেআইনি৷
২০১৭ সালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম একটি প্রামাণ্যচিত্রে ব্রুক হাউসের আটককেন্দ্রটিতে অভিবাসীদের প্রতি অকথ্য ব্যবহারের গোপন ফুটেজ তুলে ধরে৷ তার দুই বছর পর অর্থাৎ ২০১৯ সালে কেট ইভসের নেতৃত্বে এই তদন্তটি শুরু হয়৷
যুক্তরাজ্যে অভিবাসনের দায়িত্বে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান স্বীকার করেছেন যে ‘‘আটকে থাকা অভিবাসীদের ব্যবস্থাপনায় এবং সামগ্রিকভাবে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ছিল৷’’
এই প্রতিবেদনের ফলাফলকে যুক্তরাজ্য সরকার ‘সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করবে’ বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি৷
এদিকে, এনজিও শরণার্থী কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এনভার সলোমন বলেছেন, ‘‘তদন্তে স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে যে হোম অফিস আটকে রাখা অভিবাসীদের ন্যূনতম যত্ন এবং মানবতা নিশ্চিত করতে সক্ষম নয়৷’’
ব্রিটিশ হোম অফিস অর্থাৎ দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালেয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শেষ ১২ মাসে অনিয়মিত পথে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসীদের মধ্যে ৭৮ হাজার ৭৬৮ জন আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন৷ আগের ১২ মাসের তুলনায় যা অন্তত ১৯ শতাংশ বেশি৷
সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা এক লাখ ৩৪ হাজার৷ আর নির্ভরশীলদের অন্তর্ভুক্ত করা হলে সেই সংখ্যাটি হয় এক লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৭৷ গত ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছিলেন, ২০২৩ সালের মধ্যেই এই ব্যাকলগ শেষ করতে চান তিনি৷
কারণ, আগামী বছর যুক্তরাজ্যে জাতীয় নির্বাচন৷ তার আগেই অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার হিসেবে নিয়েছেন রক্ষণশীল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক৷
এম.কে
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩