ব্রিটেনে ছোট নৌকা, লরি বা অন্যান্য “অনিয়মিত” উপায়ে আসা শরণার্থীদের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ বন্ধ করার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রথম আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে সরকার।
এই চ্যালেঞ্জটি এনেছেন এক ২১ বছর বয়সী আফগান শরণার্থী, যিনি ১৪ বছর বয়সে তালেবানদের হাত থেকে পালিয়ে লরির পেছনে লুকিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছিলেন। তিনি শরণার্থী মর্যাদা পান এবং পাঁচ বছর পর অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকার অনুমতি (Indefinite Leave to Remain) লাভ করেন। তিনি ১ মার্চ ব্রিটিশ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ভাবছিলেন।
তবে, গত সপ্তাহে প্রকাশিত সরকারি পরিকল্পনার কারণে এখন তিনি আবেদন করতে পারবেন না। নতুন এই বিধিতে বলা হয়েছে, যারা “বিপজ্জনক যাত্রার” মাধ্যমে বা অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে, তারা কোনো অবস্থাতেই ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পাবেন না। এমনকি তারা বহু বছর ধরে দেশটিতে বসবাস করলেও নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য হবেন না। এই পরিবর্তনের ফলে সম্ভাব্যভাবে লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
আইনি চ্যালেঞ্জের (একটি প্রি-অ্যাকশন প্রোটোকল) নথি অনুযায়ী, নাগরিকত্ব বিধির এই পরিবর্তন ওই ব্যক্তির জন্য ” উদ্বেগের” কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তাকে যুক্তরাজ্যে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে অভিবাসন আইনগুলোর পরিবর্তনশীলতার কারণে তিনি আশঙ্কা করছেন যে তিনি ব্রিটিশ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন, ভোট দিতে পারবেন না এবং স্বাধীনভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন না।
শরণার্থীর আইনজীবী, ডানকান লুইস সলিসিটরসের তৌফিক হোসেন বলেন, “এটি অত্যন্ত হতাশাজনক যে অনেকেই নতুন সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা করেছিলেন, কিন্তু এখন দেখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগের সরকারগুলোর মতো একই ভুলগুলো পুনরাবৃত্তি করছেন। রাজনৈতিক সুবিধার জন্য, ইভেট কুপার অবৈধ নীতি চালু করতে প্রস্তুত, যার একমাত্র লক্ষ্য হলো অভিবাসী ও শরণার্থীদের শাস্তি দেওয়া—যারা আসলে সৎ চরিত্রের এবং নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য।”
এই পরিবর্তন সরকারি নির্দেশিকায় “সৎ চরিত্রের” (good character) শর্তাবলীর নতুন ব্যাখ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, যাদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশের পদ্ধতি অনিয়মিত ছিল, তারা ভালো চরিত্রের বিবেচিত হবেন না, যদিও তাদের অন্য কোনো বিকল্প ছিল না।
নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে: “১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে, যেকোনো ব্যক্তি যিনি অতীতে অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছেন, সাধারণত নাগরিকত্বের জন্য প্রত্যাখ্যাত হবেন।”
নতুন বিধি চালুর আগে, মামলাকারী আফগান শরণার্থী “ভালো চরিত্র” পরীক্ষায় সহজেই উত্তীর্ণ হতে পারতেন। তার কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই, তিনি যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নিয়ম মেনে চলেছেন, ইংরেজিতে দক্ষ এবং একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে প্রশিক্ষণ নিতে চান, যাতে তিনি ব্রিটিশ সমাজ ও অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেন।
সরকারের পাস করা আইন অনুযায়ী, এখন অনুমতি ছাড়া যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। যদিও যুক্তরাজ্য ১৯৫১ সালের জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী দেশ, যেখানে বলা হয়েছে যে শরণার্থীদের অবৈধ প্রবেশের জন্য শাস্তি দেওয়া উচিত নয়। এই কনভেনশন আরও বলে যে, শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য রাষ্ট্রগুলোকে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
আইনি চ্যালেঞ্জে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, নতুন নীতি ১৯৮১ সালের ব্রিটিশ ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের “সৎ চরিত্র” শর্তের প্রকৃত আইনি অবস্থানকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে এবং এটি অবৈধ। এটি ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশন এবং সমতার আইনকেও লঙ্ঘন করে।
এই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে শরণার্থী সংস্থাগুলো এবং কিছু লেবার পার্টির এমপিরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এমপি স্টেলা ক্রিসি বলেছেন, এই পরিবর্তনের ফলে “শরণার্থীরা আজীবন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে থাকবেন।”
হোম অফিসের সাথে আইনকে চ্যালেঞ্জ করে মামলার করার প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে মতামত নেয়ার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে। যদিও হোম অফিস এই বিষয়ে মতামত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫