13.1 C
London
October 20, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ব্রিটিশ ভারতীয়দের সমর্থনে রিফর্ম ইউকের উত্থান: তিনগুণ বেড়েছে ফারাজের জনপ্রিয়তা

যুক্তরাজ্যের ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভোটারদের মধ্যে রিফর্ম ইউকের সমর্থন তিনগুণ বেড়েছে। অক্সফোর্ডভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ১৯২৮ ইনস্টিটিউট-এর নতুন জরিপে দেখা গেছে, গত নির্বাচনে মাত্র ৪% ভারতীয় ভোটার রিফর্ম ইউকেকে সমর্থন করলেও এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩%-এ।

দীপাবলির সময় প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বাধীন দলটির প্রতি সমর্থন এখনও জাতীয় গড়ের তুলনায় কম থাকলেও বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি এমন এক সম্প্রদায়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যারা ঐতিহাসিকভাবে লেবার পার্টির অনুগত সমর্থক ছিলেন।

রিপোর্টে বলা হয়, “ব্রিটিশ ভারতীয়দের মধ্যে রিফর্ম ইউকের সমর্থন জাতীয় গড়ের তুলনায় কম, কিন্তু ধারাবাহিকভাবে উর্ধ্বমুখী।” গবেষকরা মনে করছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী নির্বাচনে ফারাজের দল নতুন ভোটভিত্তি গড়ে তুলতে পারে।

দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটিশ ভারতীয়রা লেবার পার্টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ষাট ও সত্তরের দশকে অভিবাসীদের প্রতি সহনশীল মনোভাবের কারণে লেবার ছিল তাদের স্বাভাবিক রাজনৈতিক আশ্রয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সম্পর্ক দুর্বল হয়েছে। অর্থনৈতিক স্থিতি, সামাজিক রক্ষণশীলতা ও জাতীয়তাবাদী মনোভাব—বিশেষত হিন্দু ভোটারদের মধ্যে—তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে ডানদিকে ঠেলে দিয়েছে।

২০২১ সালে কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস জানিয়েছিল, জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে লেবার পার্টির কাশ্মীর ইস্যুতে অবস্থান ব্রিটিশ ভারতীয় ভোটারদের বিরূপ করে তুলেছিল। গবেষকদের মতে, এই ক্ষোভ এখনো কাটেনি।

অন্যদিকে নাইজেল ফারাজ দক্ষিণ এশীয় অভিবাসন নিয়ে মিশ্র মনোভাব পোষণ করলেও তিনি বারবার ভারতীয়দের সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। ২০১৫ সালে তিনি বলেছিলেন, “আমি পূর্ব ইউরোপীয়দের চেয়ে ভারতীয় ও অস্ট্রেলীয় অভিবাসীদের বেশি পছন্দ করি।” তবে সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে হওয়া বাণিজ্যচুক্তিতে ভারতীয় কর্মীদের জন্য সুযোগ বাড়ায় তিনি সমালোচনা করেন।

নতুন জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটিশ ভারতীয়দের মধ্যে লেবার পার্টির সমর্থন নেমে এসেছে ৪৮% থেকে ৩৫%-এ, কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থন ২১% থেকে ১৮%-এ। বিপরীতে, রিফর্ম ইউকের সমর্থন বেড়ে ১৩%-এ পৌঁছেছে। তরুণ ভোটারদের মধ্যে গ্রিন পার্টির জনপ্রিয়তাও দ্বিগুণ হয়েছে—৮% থেকে ১৩%-এ।

নীতিগত অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রেও বড় পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষা আগের মতোই প্রধান উদ্বেগ থাকলেও, দ্বিতীয় স্থানে এখন অর্থনীতি। পাঁচ বছর আগে যেখানে স্বাস্থ্য ছিল দ্বিতীয় স্থানে, এখন তা পিছিয়ে গেছে। তৃতীয় স্থানে এসেছে অপরাধ দমন, যা আগে ছিল পরিবেশ।

গবেষণা রিপোর্টে আরও বলা হয়, ‘সমতা ও মানবাধিকার’ ইস্যু ভোটারদের অগ্রাধিকার তালিকায় নেমে গেছে সপ্তম স্থানে।

রিপোর্টের সহলেখক নিকিতা ভেদ বলেন, “রিফর্ম ইউকের উত্থান ব্রিটিশ ভারতীয় সমাজে ঐতিহ্যবাহী ভোটের ধরনে নাটকীয় পরিবর্তন আনছে। অর্থনৈতিক চাপ ও সামাজিক হতাশা বাড়তে থাকলে, লেবার ও কনজারভেটিভ—দুই প্রধান দলকেই এখন এই প্রভাবশালী কমিউনিটির সঙ্গে নতুনভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। তাদের আনুগত্য আর কোনো দলের জন্য নিশ্চিত নয়।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১৯ অক্টোবর ২০২৫

আরো পড়ুন

ইউরোপের ৩০ দেশে স্বীকৃতি পেল যুক্তরাজ্যের ব্লু ব্যাজ স্কিম

কেয়ার ওয়ার্কারদের পরিবার সাথে না আনতে না দেয়া অমানবিকঃদাতব্য সংস্থা

যুক্তরাজ্যে শ্বেতাঙ্গদের থেকে এগিয়ে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীরা