দেশ থেকে ফেরার পরে হোটেল কোয়ারেন্টিনে অস্বাস্থ্যকর ও আবদ্ধ পরিবেশে রাখার জন্য বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি দুটি পরিবার ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও এই দুটি মুসলিম পরিবারকে ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী যথাযথ খাবার দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তাদের আইনজীবী।
বুধবার (২১ এপ্রিল) ইন্ডিপেন্ডেন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কোয়ারেন্টিনের জন্য নির্ধারিত একটি হোটেলে নিম্নমানের সেবা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেখানে পানির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা ও অনুপযুক্ত খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। হিথরো এয়ারপোর্টের নিকটবর্তী হলিডে ইন নামের ওই হোটেলকে পরিস্থিতির উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হলেও তা অবজ্ঞা করা হয়েছে।
একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, হলিডে ইন এক্সপ্রেসে পাঁচ জনের একটি পরিবার ১০ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য উঠেন। তাদেরকে পাশাপাশি সংযুক্ত দুটি রুম দেয়া হয় যা একদম আবদ্ধ। রুমে একটি চেয়ার ও একটি টেবিল রয়েছে।
কোর্টে দেয়া তাদের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সেখানে রুমের জানালা খোলার কোন ব্যবস্থা নেই, বাইরে ময়লা নেয়ারও কোনো ব্যবস্থা নেই; যা একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। এমনকি তাদেরকে বেকন এবং পর্ক এর বাগার্র খেতে দেয়া হয়েছে।
কোয়ারেন্টিন থেকে বের হওয়ার আগের দিন এই পরিবারের সদস্য নাহিদা খান (৪৭) বলেন, এটি ছিল একটি দু:স্বপ্নের মতো। খাবার ছিল খুবই খারাপ, অরুচিকর, যা সম্পুর্ণ খাওয়ার অযোগ্য। পর্ক বাগার্র এবং পানিনি দেয়া হয় যা মুসলমান হিসাবে তারা খেতে পারেন না। তিনি জানান তাদের সন্তানেরা কেবল সিরিয়াল এবং চিপস খেয়ে থেকেছে।
তিনি আরও বলেন, রুমে কেবল একটি চেয়ার ছিল। তাই বাধ্য হয়ে বিছানাতে বসেই খেতে হয়েছে আমাদের। তাই বেডশিট নোংরা হয়ে যায়। তিন-চার দিন পর তারা পরিষ্কার বেডশিট নিয়ে আসে। বাধ্য হয়েই আমাদেরকে নোংরা বেডশিটে ঘুমাতে হয়েছে।
তাদের সাথে মানুষের মতো ব্যবহার করা হয়নি অভিযোগ করে বলেন, তাদের সন্তানেরা শুধ কেঁদেই সময় কাটিয়েছে। হোটেলে পৌছানোর পর জানানো হয়েছিল, তারা কারপার্কে ব্যায়ামের জন্য হাঁটতে পারবেন। কিন্তু সেটিও করতে দেওয়া হয়নি। রুমের জানালা খোলা যায়না, তাই একেবারে বন্দি জীবন কাটিয়েছেন।
এই প্রতিবেদনে একটি বাংলাদেশি পরিবারের ভোগান্তির কথাও তুলে ধরা হয়। ব্রিটিশ বাংলাদেশি শফিউল আজম (৩৯) হিথরোর ক্রাউন প্লাজা হোটেলে ১৪ এপ্রিল থেকে তার ৯ বছর ও ৭ বছরের দুই ছেলেকে নিয়ে কোয়ারেন্টিনে আছেন। একসঙ্গে ছয়জনের হোটেল ব্যয় বহন করা কঠিন বলে স্ত্রী এবং আরও দুই সন্তানকে বাংলাদেশে রেখে এসেছেন তিনি।
শফিউল আজম জানান, পৌঁছানোর পরে তার ছেলেরা ক্ষুধার্ত ছিল এবং বলা সত্বেও প্রায় তিন ঘণ্টা পরে তাদের রাত সাড়ে ন’টায় খাবার দেয়া হয় যা ছিলো খাওয়ার অযোগ্য। পরের দিন তার ছেলের ডায়রিয়া হয়ে যায় এবং বমি করতে থাকে, যা কয়েকদিন স্থায়ী হয়। কিন্তু তাদেরকে মুক্ত বাতাস গ্রহণ করতে দেয়া হয়নি।
শফিউল আজম অভিযোগ করেন, রোজার দিনে তাকে রোজা ভাঙ্গার জন্য খেজুর দেয়া হয় এবং এতে তিনি পোকা রয়েছে দেখতে পান। খাবার পানি পেতেও তাদের দেরি হয়। রাতের বেলা খুব ঠাণ্ডা থাকা সত্বেও তাদের হিটার কাজ করেনি।
শফিউল জানান, তিনি বিকাল ৫টায় তিন বোতল পানি চেয়েছিলেন যা হাতে পেয়েছেন রাত ১০টায়। এই ধরনের সার্ভিস কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এই দুই পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী জানান, তারা ব্রিটিশ নাগরিকদের এবং বাসিন্দাদের কাছ থেকে অসংখ্য অভিযোগ পাচ্ছেন কোয়ারেন্টিন হোটেলগুলোর বিরুদ্ধে। এগুলো মধ্যে রয়েছে ঠাণ্ডা এবং অনুপযুক্ত খাবার, হিটিং না থাকা এবং পরিষ্কার বেডশিট ও টাওয়াল না দেয়া।
ইম্পেরিয়াম চেম্বারের ব্যারিস্টার পল টার্নার বলেন, মুসলমানদের রোজা ভাঙ্গতে পর্ক বা পোকাযুক্ত খেজুর দেওয়া শুধু অনৈতিকই নয় বৈষম্যমুলকও বটে।
সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, তারা চলতি কোনো আইনি বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে পারবেন না। তবে তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো, জনসাধারণের সুরক্ষা এবং যাতে যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাসের নতুন কোন ধরন না আসে সে ব্যাপারে সরকারের শক্ত বর্ডারনীতি বহাল রাখা।
এই দুই হোটেল গ্রুপের মালিক ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল গ্রুপ এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে নারাজ। কারণ হোটেল পছন্দ এবং কোয়ারেন্টিন এর বিষয়গুলো ডিপার্টমেন্ট ফর হেলথ অ্যান্ড সোশ্যাল কেয়ারের দায়িত্ব। তারা গেস্টদের গোপনীয়তা রক্ষার্থে কোনো সুনির্দিষ্ট বুকিং নিয়েও মন্তব্য করেনি।
২২ এপ্রিল ২০২১
নিউজ ডেস্ক