ব্রিটেনের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার স্যার মার্ক রাওলি সরকারের অপরাধীদের আগাম মুক্তির পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তার মতে, এই সিদ্ধান্ত পুলিশের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে এবং যথাযথ বিশ্লেষণ ছাড়া এমন পদক্ষেপ জননিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে।
বিবিসি রেডিও ৪-এর ‘টুডে’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্যার রাওলি জানান, অপরাধীদের আগেভাগেই মুক্তি দিলে তার একটি অংশ পুনরায় অপরাধে লিপ্ত হবে, যার দায়ভার নিতে হবে পুলিশকে। তিনি বলেন, “প্রত্যেকবার যখন কাউকে আগাম মুক্তি দেওয়া হয়, তখন আমাদের বুঝতে হয় তাদের মধ্যে কতজন আবার অপরাধে জড়াতে পারে এবং আমাদের সেই অনুযায়ী প্রস্তুত থাকতে হয়।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পুলিশের উপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে, সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও বিশ্লেষণ বা পর্যালোচনা করা হয়নি। রাওলি জানান, তারা ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছেন, কোন ধরনের অপরাধীরা মুক্তি পাবে, কিন্তু এখনও বিস্তারিত তথ্য পাননি।
স্যার রাওলি বলেন, এক দশকের বেশি সময় ধরে ধারাবাহিক বাজেট কাট ও জনবল সংকটের কারণে পুলিশের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। তিনি বলেন, “আমরা এখনো সেই ক্ষতের ভার বহন করছি। জনসংখ্যার অনুপাতে আমাদের বাহিনী এখন অনেক ছোট।”
এই ইস্যুতে স্যার রাওলি এক চিঠিতে এমআই৫ এবং ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির প্রধানদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিচার মন্ত্রণালয়কে জানান, অপরাধীদের আগাম মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত “সামগ্রিকভাবে জননিরাপত্তার ক্ষতি করতে পারে।” তারা সতর্ক করেছেন, যদি পুলিশের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট ও মানবসম্পদ বরাদ্দ না দেওয়া হয়, তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, “আদালতের বাইরে মানেই যেন বিচারবহির্ভূত না হয় এবং কারাগারের বাইরে মানেই যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না হয়ে যায়।” তারা হুঁশিয়ারি দেন, প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ছাড়া সরকার ১৩,০০০ নতুন ফ্রন্টলাইন অফিসার নিয়োগ ও ছুরি হামলা ও নারী নির্যাতনের মতো অপরাধ অর্ধেকে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হবে।
পুলিশ কর্মকর্তারা আরও দাবি করেন, অনলাইন অপরাধের প্রসার, সামাজিক অস্থিরতা এবং সংঘবদ্ধ অপরাধের হুমকি বেড়েছে। ফলে পুলিশ বাহিনীর জন্য আগাম বিনিয়োগ ছাড়া ভবিষ্যতে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া সম্ভব নয়। তারা বলেন, “এই বাজেট রাউন্ড যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তবে এটি পরবর্তী তিন বছরের জন্য পুলিশের কাঠামোগত অদক্ষতা স্থায়ী করে তুলবে এবং পুলিশ সংস্কারের এক অনন্য সুযোগ নষ্ট হবে।”
সরকারি প্রতিক্রিয়ায় হাউজিং মন্ত্রী ম্যাথু পেনিকুক বলেন, বর্তমান সরকার এমন এক প্রিজন ব্যবস্থা পূর্বের সরকারের ব্যর্থতার সূত্রে পেয়েছে, যা ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে। তিনি জানান, আগের সরকার মাত্র ৫০০টি নতুন প্রিজন স্থান যুক্ত করেছে, অথচ সাজা দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে প্রতি বছর প্রায় ৩,০০০ নতুন কয়েদি যুক্ত হয়েছে।
সপ্তাহখানেক আগে প্রকাশিত বিচার মন্ত্রণালয়ের এক পর্যালোচনায় হালকা অপরাধে সাজাপ্রাপ্তদের আগাম মুক্তি, ১২ মাসের কম সাজার ক্ষেত্রে জেল বাতিল, এবং কম সহিংস অপরাধীদের কমিউনিটিতে শাস্তি ভোগের মতো পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়। আইনমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ এ সুপারিশ গ্রহণ করেছেন।
হোম অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা পুলিশকে সমর্থন দিতে ২০২৫ অর্থবছরে £১৭.৬ বিলিয়ন বাজেট বরাদ্দ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় £১.২ বিলিয়ন বেশি। এতে ১৩,০০০ নতুন পিসিও, স্পেশাল কনস্টেবল ও নেবারহুড পুলিশ যুক্ত করার লক্ষ্য রয়েছে।
বিচার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, সরকার ২০৩১ সালের মধ্যে ১৪,০০০ নতুন প্রিজন স্থান তৈরি করবে এবং ২০২৮-২৯ সালের মধ্যে প্রোবেশন ও ইলেকট্রনিক ট্যাগিং ব্যবস্থায় £৭০০ মিলিয়ন অতিরিক্ত বিনিয়োগ করবে, যাতে সমাজে থাকা অপরাধীদের নজরদারির আওতায় আনা যায়।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৮ মে ২০২৫