ব্রিটেনে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে (কাজিন ম্যারেজ) শিশুমৃত্যুর একটি বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক সরকারি বিশ্লেষণে। ন্যাশনাল চাইল্ড মর্টালিটি ডাটাবেস (NCMD)–এর সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে এক বছরের কম বয়সী শিশুর ৭৩টি মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থতার সঙ্গে আত্মীয় বিয়ে সম্পর্কিত। একই সময়ে গর্ভাবস্থায় মাদক ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল মাত্র ২৭।
এছাড়া, ১ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের আরও ৫৫টি মৃত্যুর ঘটনাও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের সঙ্গে যুক্ত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যান প্রকাশের পর যুক্তরাজ্যে কাজিন বিয়ে নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যসচিব ওয়েস স্ট্রিটিং এনএইচএসকে ক্ষমা চাইতে বলেন, কারণ সংস্থাটি এক নির্দেশনায় কাজিন বিয়ের “সম্ভাব্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা” উল্লেখ করেছিল। কিন্তু চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের বিয়েতে জিনগত ত্রুটির ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়, যা নবজাতকের প্রাণঘাতী রোগের কারণ হতে পারে।
ছায়া বিচারমন্ত্রী রবার্ট জেনরিক বলেন, “প্রথম কাজিনদের মধ্যে বিয়ে এখন জনস্বাস্থ্য সংকটের রূপ নিয়েছে। নরওয়ে ও যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ রাজ্যে এটি নিষিদ্ধ। যুক্তরাজ্যেও সময় এসেছে এই প্রথা বন্ধ করার।”
একই মত দেন কনজারভেটিভ এমপি রিচার্ড হোল্ডেন, যিনি বলেন, “এই ৭৩টি মৃত্যুর পেছনে লুকিয়ে আছে প্রতিরোধযোগ্য মানবিক ট্র্যাজেডি।”
ইউগভ পরিচালিত এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ৭৭ শতাংশ ব্রিটিশ নাগরিক মনে করেন প্রথম কাজিনদের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। লেবার, কনজারভেটিভ, লিবারেল ডেমোক্র্যাট—সব প্রধান দলের ভোটারদের মধ্যেই এর বিরোধিতা প্রায় সমান।
তবে দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত কিছু সম্প্রদায়ের মধ্যে এই প্রথা এখনো প্রচলিত। বর্ন ইন ব্র্যাডফোর্ড গবেষণায় দেখা গেছে, শহরের তিনটি অভ্যন্তরীণ ওয়ার্ডে পাকিস্তানি মায়েদের ৪৬ শতাংশই তাদের প্রথম বা দ্বিতীয় কাজিনের সঙ্গে বিবাহিত। একইভাবে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশদের মধ্যেও এই প্রথার উপস্থিতি আছে।
জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর (ONS) জানায়, নবজাতকের জন্মগত ত্রুটিজনিত মৃত্যুর হার পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি মায়েদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ, যেখানে শ্বেত ব্রিটিশ মায়েদের মধ্যে তা মাত্র ২৯ শতাংশ।
NCMD–এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আত্মীয় বিয়ে নিজে থেকে “পরিবর্তনযোগ্য কারণ” নয়, তবে সাংস্কৃতিকভাবে উপযুক্ত জেনেটিক পরামর্শ ও সচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো সম্ভব। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “৯০ শতাংশ আত্মীয় বিবাহিত পরিবারের শিশু কোনো জিনগত সমস্যায় আক্রান্ত হয় না, তাই সার্বিকভাবে নিরুৎসাহিত করার বদলে সচেতনতা ও সেবা নিশ্চিত করা দরকার।”
একই সময়, মাতৃমদ্যপান সংশ্লিষ্ট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৪, মায়ের বয়স-সংক্রান্ত কারণে মৃত্যু ৭৯ এবং গর্ভাবস্থায় ধূমপানজনিত মৃত্যু ২০৮।
সরকার এই পরিসংখ্যানের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি, তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন—কাজিন বিয়ের ঝুঁকি এখন কেবল সাংস্কৃতিক নয়, বরং তা জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ
এম.কে
০৮ অক্টোবর ২০২৫