বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠালের জনপ্রিয়তা ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছেই না! মূলত মাংসের বিকল্প হিসেবে বিশেষ উপযোগিতার কারণে নিরামিষাশী লোকেদের কাছে ফলটি ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। ফলটি প্রশংসিত ব্রিটেনেও।
যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি ইউরোপের সুপারমার্কেটগুলোতে অহরহ মেলে কাঁঠালের বিভিন্ন আইটেম। এমনকি কিছু মেইনস্ট্রিম ব্রিটিশ রেস্তোরাঁতেও কাঁঠালের আইটেম পরিবেশন করা হয়। বিশেষ করে ভেগান বা নিরামিষাশীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কাঁঠালের বার্গার। মাংসের বদলে কাঁঠাল দিয়ে সুস্বাদু বার্গার পরিবেশনের জন্য এরইমধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে লন্ডনের মার্বেল আর্কে অবস্থিত মুশিজ হার্ড রক ক্যাফে।
মেন্যুতে কাঁঠালের আইটেম রাখা রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে রয়েছে: লন্ডনের প্যাভিলিয়ন রোডে উলফ অ্যান্ড ল্যাম্ব, কুইন ক্যারলাইন স্ট্রিটের দ্য গেট হ্যামারস্মিথ, কারনাবির স্ট্যাক্স ডাইনারসহ আরও অনেকে। রান্নার সুবিধার্থে কাঁঠালকে বিশেষভাবে প্রসেসিং ও প্যাকেজিংয়ের পর বাজারে ছেড়েছে টেস্কো।
মাংসের বিকল্প হিসেবে কাঁঠালের এই উপযোগিতা নিয়েও চলছে পুষ্টিবিদদের গবেষণা।
ফলটিতে রয়েছে চমৎকার স্বাদ ও সুগন্ধের পাশাপাশি মানব শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নানাবিধ পুষ্টিগুণ। কাঁঠালে বিদ্যমান নানা ভিটামিন ও মিনারেলস বা খনিজ পদার্থ স্বাস্থ্যের নানারকম উপকার সাধন করে। তাছাড়া কাঁঠালে রয়েছে আইসোফ্ল্যাভেনস, অ্যান্টিঅক্রিডেন্ট ও ফাইটো-নিউট্রিয়েন্টসের আধিক্য যা মানব শরীরে ক্যান্সারের রোধ ও প্রতিরোধে ব্যাপক সহায়তা করে। কাঁঠালে বিদ্যমান খাদ্য উপাদান আলসার নিরাময় করে।
কাঁঠালের পুষ্টিমান-
বিবিসির গুডফুড ম্যাগাজিনে কাঁঠালের মধ্যে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে যে উপাদানগুলো পাওয়া যায়:
প্রোটিন ১ গ্রাম
শর্করা ৯.৯ গ্রাম
চর্বি- ০.৩ গ্রাম
ক্যালসিয়াম- ২০ মি. গ্রাম
এতে আরও থাকে:
বায়াটারি ফাইবার, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, ভিটামিন বি, ক্যারেটিন, অশ এবং জল।
কাঁঠাল এর ২০টি উপকারিতা
১। কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ নিতান্ত কম। এই ফল খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধির আশংকা কম।
২। কাঁঠাল পটাশিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস। ১০০ গ্রাম কাঁঠালে পটাশিয়ামের পরিমাণ ৩০৩ মিলিগ্রাম। যারা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এ জন্যে কাঁঠালে উচ্চ রক্ত চাপের উপশম হয়।
৩। কাঁঠালে প্রচুর ভিটামিন এ আছে, যা রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
৪। কাঁঠালের অন্যতম উপযোগিতা হল ভিটামিন সি। প্রাকৃতিকভাবে মানবদেহে ভিটামিন “সি” তৈরি হয় না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে ভিটামিন “সি”।
৫। কাঁঠালে বিদ্যমান ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস- আলসার, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সক্ষম।
৬। কাঁঠালে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রির্যাডিকেলস থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও আমাদেরকে সর্দি-কাশি রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
৭। টেনশন এবং নার্ভাসনেস কমাতে কাঁঠাল বেশ কার্যকরী।
৮। বদহজম রোধ করে কাঁঠাল।
৯। কাঁঠাল গাছের শেকড় হাঁপানী উপশম করে। শেকড় সেদ্ধ করলে যে উৎকৃষ্ট পুষ্টি উপাদান নিষ্কাশিত হয় তা হাঁপানীর প্রকোম নিয়ন্ত্রণে সক্ষম।
১০। চর্মরোগের সমস্যা সমাধানেও কাঁঠালের শেকড় কার্যকরী। জ্বর এবং ডায়রিয়া নিরাময় করে কাঁঠালের শেকড়।
১১। কাঁঠালে আছে বিপুল পরিমাণে খনিজ উপাদান ম্যাঙ্গানিজ যা রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
১২। কাঁঠালে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়ামের মত হাড়ের গঠন ও হাড় শক্তিশালী করণে ভূমিকা পালন করে।
১৩। কাঁঠালে আছে ভিটামিন বি৬ যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
১৪। কাঁঠালে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম কেবল হাড়ের জন্য উপকারী নয় রক্ত সংকোচন প্রক্রিয়া সমাধানেও ভূমিকা রাখে।
১৫। ছয় মাস বয়সের পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে কাঁঠালের রস খাওয়ালে শিশুর ক্ষুধা নিবারণ হয়। অন্যদিকে তার প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব পূরণ হয়।
১৬। চিকিৎৎসা শাস্ত্র মতে প্রতিদিন ২০০ গ্রাম তাজা পাকা কাঁঠাল খেলে গর্ভবতী মহিলা ও তার গর্ভধারণকৃত শিশুর সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হয়।
১৭। গর্ভবতী মহিলারা কাঁঠাল খেলে তার স্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকে এবং গর্ভস্থসন্তানের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়।
১৮। দুগ্ধদানকারী মা তাজা পাকা কাঁঠাল খেলে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
১৯। এই ফল আঁশালো বিধায় কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করে।
২০। কাঁঠালে রয়েছে খনিজ উপাদান আয়রন যা দেহের রক্তাল্পতা দূর করে।
২২ ডিসেম্বর ২০২২
এনএইচ