7.2 C
London
December 23, 2024
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ব্রিটেনে সরকার পরিবর্তনের ফলে চ্যানেল পাড়ি দেওয়াতে প্রভাব ফেলবে নাঃ দাতব্য সংস্থা

ফ্রান্সের উত্তরে অবস্থানরত অভিবাসীরা ইংলিশ চ্যানেল পার হওয়ার আগে যুক্তরাজ্যে লেবার সরকারের আসার জন্য অপেক্ষা করছেন। লেবার দলের নেতা স্যার কিয়ার স্টারমারের রুয়ান্ডা স্কিম বাতিলের প্রতিশ্রুতির পর অভিবাসীরা যুক্তরাজ্য যেতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এই চ্যানেল পার হয়ে ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ড পৌঁছান অভিবাসীরা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের সঙ্গে কথা বলার সময় বেশ কয়েকজন অভিবাসী জানিয়েছেন, ব্রিটেনে লেবার পার্টির সরকার গঠন নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা চ্যানেল পার হয়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে চান না। স্যার কিয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমতায় এলে ‘প্রথম দিনেই’ রুয়ান্ডায় প্রত্যর্পণ পরিকল্পনা বাতিল করবেন।

ডানকার্কের নিকটবর্তী গ্র্যান্ড-সিন্থ ক্যাম্পে থাকা বেশিরভাগ অভিবাসী রুয়ান্ডা স্কিম সম্পর্কে জানতেন এবং প্রত্যর্পণের শঙ্কায় ছিলেন। যদিও কেউ কেউ বলছেন, তারা সুযোগ পেলে চ্যানেল পার হওয়ার চেষ্টা করবেন। অনেকেই বলছেন, তারা ৪ জুলাইয়ের নির্বাচনের পর যুক্তরাজ্য যেতে ইচ্ছুক।

প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক সোমবার বলেছিলেন, অভিবাসীরা ক্যালেইসে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে স্টারমার সরকার আসার অপেক্ষায়, যাতে তারা এখানে এসে থাকতে পারেন।

যুক্তরাজ্যের হোম অফিসের তথ্য অনুযায়ী, রুয়ান্ডায় প্রত্যর্পণের শঙ্কার মধ্যেও এই বছরের প্রথম ছয় মাসে চ্যানেল পার হওয়া অভিবাসীর সংখ্যা রেকর্ড ছুঁয়েছে। এ বছর প্রায় ১২ হাজার ৯০১ জন যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন, যা গত বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ এবং ২০২২ সালের আগের রেকর্ডের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি।

দ্য টেলিগ্রাফে এক নিবন্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি লিখেছেন, অভিবাসীরা ও তাদের পাচারকারীরা এখনই কান খাড়া করে আছে লেবার সরকারের আশায়, যারা অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয় নিশ্চিত করবে। তিনি উল্লেখ করেছেন, রুয়ান্ডা পাঠানোর পরিকল্পনার কারণেই নৌকা আটকানো যাবে এবং যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের দাবিতে প্রবেশ ঠেকানো যাবে।

আরেকটি নিবন্ধে ছায়া হোম সেক্রেটারি ইয়েভেট কুপার বলেছেন, রুয়ান্ডা স্কিম কাজে আসবে না। প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করতেন রুয়ান্ডা পরিকল্পনা কাজ করবে, তাহলে কোনও ফ্লাইট নিশ্চিত না করে নির্বাচনের ঘোষণা দিতেন না। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, এই পরিকল্পনা কেবল ১ শতাংশ আশ্রয় প্রার্থীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং এটি বাস্তবিক অর্থে হোটেলগুলোতে অভিবাসীদের অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকার অনুমতি দেবে।

কুপার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, লেবার সরকারের নতুন সীমান্ত নিরাপত্তা কমান্ডে ১ হাজার নতুন পুলিশ, এমআই৫ গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং তদন্তকারী থাকবে। যারা পাচারকারীদের ধরবে এবং নতুন নিরাপত্তা অংশীদারিত্বে ইউরোপের অন্যান্য দেশের পুলিশের সঙ্গে মিলিত হয়ে ফরাসি উপকূলে নৌকাগুলোকে থামাবে এবং পাচারকারীদের আটক করবে।

সোমবার রাতে সুনাক বলেছিলেন, লেবার সরকারের অবৈধ অভিবাসন ‘ক্ষমা’ এবং ইইউ-এর সঙ্গে ‘সুন্দর চুক্তি’ যুক্তরাজ্যে আরও অবৈধ অভিবাসী নিয়ে আসবে।

জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে চ্যানেল পার হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। আগামী সপ্তাহে আয়োজন হচ্ছে যুক্তরাজ্যের নির্বাচন। ২৪ জুলাই রুয়ান্ডায় প্রথম ফ্লাইট পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল সুনাকের। তবে লেবার পার্টি সুনাকের দল থেকে ২০ পয়েন্টে এগিয়ে থাকার কারণে এবং এর বিরুদ্ধে ১২টিরও বেশি আইনি চ্যালেঞ্জ দায়ের হওয়ায় এমন সম্ভাবনা খুব কম।

উত্তর ফ্রান্সে আশ্রয়প্রার্থীদের সহযোগিতা দেওয়া দাতব্য সংস্থা রুটস-এর কোষাধ্যক্ষ সারাহ বেরি বলেছেন, তিনি একমুহূর্তও মনে করেন না যে ব্রিটেনে সরকার পরিবর্তনের ফলে শরণার্থীদের ওপর প্রভাব পড়বে।

তার কথায়, রুয়ান্ডা পরিকল্পনা সফল হয়নি। অন্তত তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। এর প্রমাণ হলো মানুষ এখনও যুক্তরাজ্য পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন, কেউ কেউ মারাও যাচ্ছেন।

ফ্রান্সে কট্টর ডানপন্থি সরকারের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে অভিবাসীদের মধ্যে। তাদের শঙ্কা, এমন সরকার ক্ষমতায় এলে কঠোর অভিবাসীনীতির কারণে চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার সংখ্যা আরও বাড়বে।

দ্য মাইগ্রেন্টস হোস্টেল নামের সংস্থার পিয়েরে রকুয়েস বলেছেন, আমি মনে করি না ব্রিটেনে সরকার পরিবর্তনের ফলে চ্যানেল পাড়ি দেওয়াতে প্রভাব ফেলবে। কিন্তু ফ্রান্সে যদি উগ্র-ডানপন্থি সরকার ক্ষমতায় আসে তাহলে সম্ভব আরও বেশি মানুষ চ্যানেল পার হয়ে যুক্তরাজ্য যেতে চাইবেন। কারণ তখন ফ্রান্সে তারা খারাপ আচরণের মুখোমুখি হতে পারেন।

সূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ

এম.কে
২৬ জুন ২০২৪

আরো পড়ুন

রুয়ান্ডা বিল এবং বিভিন্ন ইস্যুতে চাপে পড়েছে কনজারভেটিভ সরকার

ভ্যাকসিন কর্মসূচিতে ইউরোপের মধ্যে এগিয়ে যুক্তরাজ্য

হেরফের হয়নি বেতনে, চার দিনের অফিস স্থায়ী করেছে অনেক প্রতিষ্ঠান ব্রিটেনে