আশ্রয়প্রার্থীদের তৃতীয় দেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে ব্রিটেন এখন এমন এক অন্ধকার সময় অতিক্রম করছে, যা এক দশক আগেও অকল্পনীয় ছিল—এমন মন্তব্য করেছেন আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এডি রামা।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার গত মাসে আলবেনিয়া সফরকালে যে “রিটার্ন হাব” পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, তার আওতায় আশ্রয় প্রত্যাখ্যাতদের তৃতীয় দেশে পাঠিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া চালানো হবে। তবে এই পরিকল্পনায় অংশ নিতে স্পষ্টভাবে ‘না’ বলে দিয়েছে আলবেনিয়া।
রামা জানান, স্টারমার ছাড়াও বরিস জনসন ও ঋষি সুনাক একই অনুরোধ করেছিলেন এবং সবার কাছেই তার জবাব ছিল একই—“না”। তিনি বলেন, “এটা কল্পনাতীত ছিল যে ব্রিটেন কোনো দেশে গিয়ে অভিবাসীদের ‘ফেলে’ আসার জায়গা খুঁজবে। আজ সেটাই ঘটছে।”
তিনি বলেন, ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্যে এমন সব কথা, মতবাদ ও নীতি স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে যা আগে লজ্জাজনক বলেই বিবেচিত হতো। “আজকের যুক্তরাজ্যে ৮০ শতাংশ মতামত এমন, যা ব্রেক্সিটের আগে কখনোই গ্রহণযোগ্য হতো না,” বলেন রামা।
যুক্তরাজ্যের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে স্টারমারের সফর হলেও, আলবেনিয়া পরিস্কার করে দিয়েছে তারা যুক্তরাজ্যের অভিবাসন বোঝা বহন করবে না। তবে ইতালির সঙ্গে আলাদা সমঝোতা রয়েছে, কারণ ঐতিহাসিকভাবে দেশ দুটি গভীর সম্পর্ক ভাগ করে।
রামা ব্যাখ্যা করেন, ইতালি ১৯৯১ সালে আলবেনিয়ার কমিউনিস্ট সরকারের পতনের পর থেকেই সব সংকটে পাশে থেকেছে। “আমরা যেন এক দেশ, দুই রাষ্ট্রে বিভক্ত,” বলেন তিনি। সেজন্যই ইতালির অনুরোধে তারা সম্মত হয়েছে, কিন্তু ব্রিটেনের প্রস্তাব তারা গ্রহণ করেনি।
আলবেনিয়া বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নে সদস্যপদের পথে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। রামার আশা, ২০২৭ সালের মধ্যেই আলোচনা শেষ হবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটি ইইউ সদস্যপদ পাবে।
রামা বলেন, রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন ইউরোপকে একত্রীকরণের দিকে ঠেলে দিয়েছে এবং ট্রাম্পের নির্বাচনের পর ইউরোপ নিজেকে নতুনভাবে চিনতে শুরু করেছে। তিনি বিশ্বাস করেন, “ট্রাম্প শুধু আমেরিকার জন্য নয়, ইউরোপকেও জাগিয়ে তুলেছে।”
সম্প্রতি নিরঙ্কুশ জয় পাওয়া রামা এবার প্রবাসী আলবেনীয়দের ধন্যবাদ জানাতে আন্তর্জাতিক সফরের পরিকল্পনা করছেন। তার আশা, উন্নত জীবনমান দেখে তারা নিজ দেশে ফিরে আসবে।
তবে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে রামা সমালোচিতও। দুর্নীতির অভিযোগ এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের সমালোচনা থাকলেও ইউরোপের অনেক রাজনীতিবিদের চোখে তিনি একজন “বড় মাপের” নেতা।
তিনি বলেন, আলবেনিয়া যদি ইইউতে যোগ দেয়, তাহলে সেটাই হবে তার জন্য সঠিক সময় ক্ষমতা হস্তান্তরের। এটি শুধু ব্যক্তিগত বিজয় নয়, বরং “একটি প্রাণবন্ত, রৌদ্রোজ্জ্বল ইউরোপের প্রতিচ্ছবি” হবে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৬ জুন ২০২৫