27.7 C
London
July 13, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ব্রিটেন পাঁচ বছরের মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে পারেঃ সাবেক সেনাপ্রধানের সতর্কবার্তা

আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে জড়াতে পারে ব্রিটেন—এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সদ্য বিদায়ী প্রধান জেনারেল স্যার প্যাট্রিক স্যান্ডার্স। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যেই ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বাধীন রাশিয়ার পক্ষে কোনো একটি ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রে সীমিত আক্রমণ চালানো সম্ভব হয়ে উঠবে, যার জবাবে যুক্তরাজ্যকে সামরিকভাবে জড়াতে হতে পারে।
স্যার প্যাট্রিকের মতে, বর্তমান ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এতটাই ছোট যে কোনো বড় সংঘাত শুরু হলে সেটি মাত্র কয়েক মাসের বেশি টিকতে পারবে না। তিনি বলেন, “যদি রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করে, তাহলে কয়েক মাসের মধ্যেই তারা ন্যাটো অঞ্চলে সীমিত হামলা চালানোর পর্যাপ্ত সামরিক সক্ষমতা অর্জন করবে। আমাদের দায়িত্ব থাকবে সেই আক্রমণের জবাব দেওয়ার, এবং এই পরিস্থিতি ২০৩০ সালের আগেই দেখা দিতে পারে।”

সরকারের নীতির সমালোচনায় বরাবরই সরব থাকা এই জেনারেল বলেন, বারবার সতর্ক সংকেত দেওয়া সত্ত্বেও সরকার জাতীয় প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি আরও বলেন, “আমি জানি না আর কী সিগন্যাল লাগবে আমাদের বোঝার জন্য যে যদি আমরা এখনই কাজ না করি, তাহলে ভবিষ্যতে অনেক দেরি হয়ে যাবে।”

২০২০ সালের পর থেকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে সেনাবাহিনীর আকার ৭২,৫০০-তে নামিয়ে আনা হবে, যা ২০২০ সালের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কম। স্যার প্যাট্রিক এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “বর্তমানে আমাদের সেনাবাহিনী বড় কোনো সংঘাতের শুরুতেই ধসে পড়বে। রিজার্ভ বাহিনীও পর্যাপ্ত নয়। মাত্র ৩০ হাজার রিজার্ভ মিলে মোট সৈন্য সংখ্যা ১ লাখের মতো হলেও, এটা যথেষ্ট নয়। আমি যখন যোগ দিয়েছিলাম, তখন নিয়মিত সৈন্য ছিল ১,৪০,০০০—তার সঙ্গে বড় রিজার্ভ বাহিনীও ছিল।”

গত মাসে প্রকাশিত স্ট্র্যাটেজিক ডিফেন্স রিভিউতেও সেনাবাহিনীকে আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা বা সম্ভাব্য যুদ্ধের ঝুঁকি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। তার মতে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রতিরক্ষা ব্যয়ের গুরুত্ব বুঝছে না।

বর্তমান সরকার অবশ্য সামরিক ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। চ্যান্সেলর র‌্যাচেল রিভস ২০২৭ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা বাজেট জিডিপির ২.৬ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টার্মার বলেছেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তায় জিডিপির ৫ শতাংশ ব্যয় করা হবে, যার মধ্যে ৩.৫ শতাংশ যাবে সরাসরি প্রতিরক্ষা খাতে। তবে স্যার প্যাট্রিক এই প্রতিশ্রুতিকে যথেষ্ট মনে করছেন না।

তিনি জানান, তার দায়িত্বকালীন সময়ে বেসামরিক জনগণের জন্য বোমা শেল্টার ও সামরিক বাহিনীর জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড কমান্ড সেন্টার নির্মাণ নিয়ে সরকারের সঙ্গে বহুবার আলোচনা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তার মতে, হুমকি যথেষ্ট আসন্ন ও গুরুতর না মনে হওয়ায় সরকার এসব পদক্ষেপ নিতে আগ্রহ দেখায়নি। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “ফিনল্যান্ডে ৪৫ লাখ মানুষের জন্য বোমা শেল্টার আছে। তারা রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বা বিমান হামলার মধ্যেও সরকার ও সমাজ হিসেবে টিকে থাকতে পারবে। আমরা সে ধরনের কোনো প্রস্তুতি নেই।”

রাশিয়া ছাড়াও, স্যার প্যাট্রিক ইরানকেও সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইরান তাদের প্রক্সি বাহিনীর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে কিংবা ব্রিটিশ স্বার্থে আঘাত হানতে পারে, যা আমাদের জন্য আরেকটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এই সাবেক সেনাপ্রধানের বক্তব্য ব্রিটেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির দুর্বলতাকে ফের সামনে এনেছে, এবং ভবিষ্যতের ঝুঁকি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জোরালো করছে।

সূত্রঃ দ্য সান

এম.কে
১৩ জুলাই ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ধীরগতি

৫ বছরে লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের যতো অর্জন ও ব্যর্থতা

নিউজ ডেস্ক

বাসাভাড়া বাঁচাতে এক যুবকের লন্ডন শহরে অভিনব ফ্রি হাউস