লন্ডনের মেয়র ব্রেক্সিট নিয়ে সমালোচনা করেছেন।সাদিক খানের মতে ইউরোপের সাথে ইয়ুথ মবিলিটি প্রোগ্রাম চালু থাকলে অর্থনীতির জন্য উপকার হতো।
সাদিক খান ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের উদ্দেশে বলেন, “ব্রেক্সিট ছিল একটি ভুল”, এবং তিনি নতুন করে ইয়ুথ মবিলিটি প্রকল্পের পক্ষে তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করবেন বলে জানান। লন্ডন মেয়রের মতে, ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় হলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য শুল্ক নীতির প্রভাব কমানো সম্ভব হবে।
মঙ্গলবার এক বৈঠকে লন্ডনের মেয়র প্রতিনিধি দলকে এই বিষয়ে তার মতামত জানাবেন বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়। ব্রিটেনের ইউরোপীয় বাণিজ্য ব্লক থেকে বেরিয়ে আসা এখনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তিনি ইইউর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির উদ্যোগে সাহসী হওয়ার আহ্বান জানাবেন।
কিয়ার স্টারমারের সরকার ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নির্মাণকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, তবে একক বাজারে ফিরে যাওয়া, কাস্টমস ইউনিয়ন বা চলাচলের স্বাধীনতা পুনঃস্থাপনের বিষয়টি বারবার নাকচ করেছে লেবার সরকার।
এই সীমারেখা অতিক্রম করতে পারে এমন যেকোনো চুক্তি নিয়ে সাবধানী থাকার কারণে, সরকার ব্রাসেলসের একটি নতুন প্রস্তাব—যার আওতায় ৩০ বছরের নিচের ইইউ নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে বসবাস, কাজ এবং পড়াশোনার অনুমতি দেওয়ার পরিকল্পনা—গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
তবে ইইউর ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের দূতদের সঙ্গে এক বৈঠকে সাদিক খান তার যুক্তি দিয়ে বলবেন, ইউরোপীয় স্কুলশিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ সহজ করার উপায় খুঁজে দেখতে তিনি আগ্রহী বলে প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে।
সাদিক খানের বক্তব্যে তিনি জানাবেন, ” মেয়র হিসেবে, আমি নতুন ইয়ুথ মবিলিটি প্রকল্পকে জোরালোভাবে সমর্থন করি। এটি ইউরোপ জুড়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে, পাশাপাশি তরুণ লন্ডনবাসী ও ইইউ নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ জীবন অভিজ্ঞতা দেবে—যেমন বিদেশে কাজ করার সুযোগ, এবং আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ।”
তিনি আরও জানান,
“এর অংশ হিসেবে, আমি চাই যে আমরা কীভাবে ইইউর স্কুলশিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যে আসা সহজ করতে পারি তা নিয়ে ভাবি, যাতে তারা আমাদের অভিন্ন বন্ধন ও ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানতে পারে।”
ট্রাম্পের শুল্ক নীতির বিপরীতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাদিক খান। সাদিক খান ইউরোপীয় মিত্রদের আহ্বান জানাবেন বিভিন্ন যৌথ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একত্রিত হতে, যার মধ্যে রয়েছে:
“সহিংস ও অগণতান্ত্রিক পপুলিজমের উত্থান”
“আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে হুমকি সৃষ্টি করা শুল্ক নীতি”
সাদিক খান বলেন, “আমি গর্বিত ইউরোপীয় এবং আমার বিশ্বাস, ব্রেক্সিট ছিল একটি ভুল যা এখনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে—শুধু আমার শহর ও দেশেই নয়, বরং সমগ্র ইউরোপীয় সম্প্রদায়ের ওপর নেগেটিভ প্রভাব ফেলছে।”
যদিও এর আগে, লেবার পার্টির সরকার সাদিক খানকে “একটি নির্দিষ্ট সময়কাল” নিরব থাকার পরামর্শ দিয়েছিল। এর আগে সাদিক খান সতর্ক করেছিলেন যে ট্রাম্প পুনরায় প্রেসিডেন্ট হলে “ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান” ঘটতে পারে।
লর্ডস হুইপ সনি লিয়ং বলেন,
“আমি সাদিক খানের সঙ্গে একমত নই। ট্রাম্পের জনগণের ম্যান্ডেট রয়েছে, এবং আমাদের তার সঙ্গে কাজ করতেই হবে।”
তিনি আরও বলেন:
“আমি বলব, কখনও কখনও নীরব থাকার একটা সময়ও থাকে, যা এখানে বেশ দরকারি।”
এর আগে, সাদিক খান জার্মানির আফডি পার্টি, ফ্রান্সের ন্যাশনাল র্যালি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পকে “সুবিধাবাদী” বলে অভিহিত করেছিলেন, যারা রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থে জনগণকে বিভক্ত করতে চায়।
সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন:
“আমরা ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে ব্রিটিশ জনগণের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও সমৃদ্ধি বাড়ানো যায়। তবে আমরা পরিষ্কার করে দিয়েছি যে, চলাচলের স্বাধীনতা, কাস্টমস ইউনিয়ন বা একক বাজারে ফিরে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা যুক্তরাজ্যের নেই।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫