TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ব্রেক্সিট ব্যর্থতার পর নতুন পথঃ ইইউর সঙ্গে যুব মোবিলিটি স্কিমে এগোচ্ছে যুক্তরাজ্য

ইইউ–যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক পুনরায় ঘনিষ্ঠ করার অংশ হিসেবে উভয় পক্ষের তরুণ–তরুণীদের জন্য বড় ধরনের সুযোগ উন্মোচন করতে যাচ্ছে লেবার সরকার। আসন্ন যুব মোবিলিটি স্কিমের আওতায় ‘দশ-হাজারের ঘরে’ ইউরোপীয় ও ব্রিটিশ তরুণদের পারস্পরিকভাবে বসবাস ও কাজের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে চলছে চূড়ান্ত আলোচনা।

যুক্তরাজ্য সরকার ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি সময়সীমাবদ্ধ যুব মোবিলিটি স্কিম চূড়ান্ত করতে চায়। ব্রেক্সিটের ছয় বছর পর লেবার সরকারের এ উদ্যোগকে দেখা হচ্ছে ব্রিটেন–ইউরোপ সম্পর্ক পুনর্গঠনের বাস্তবধর্মী প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে। স্কিমটি কার্যকর হলে দুই বছরের জন্য তরুণদের পারস্পরিকভাবে অভিবাসন, চাকরি, পড়াশোনা ও ভ্রমণের সুযোগ তৈরি হবে।

লেবার নেতৃত্ব মনে করছে—ব্রেক্সিটের ব্যর্থতার বাস্তবতা এখন জনমতের বড় অংশেই স্পষ্ট, এবং ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পক্ষে জোরালো রাজনৈতিক ‘উইন্ডো’ তৈরি হচ্ছে। সাম্প্রতিক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টার্মার ব্রেক্সিট প্রচারকারীদের “অবাস্তব প্রতিশ্রুতি”র সমালোচনা করেন এবং বলেন—যুক্তরাজ্য এখনো অর্থনীতি ও জনআস্থার ক্ষেত্রে এর প্রতিক্রিয়া বহন করছে। তিনি জানান, গণভোটের সম্মান বজায় রেখেই বাস্তবতার ভিত্তিতে নতুন পথ খুঁজছে সরকার।

ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন—ব্রেক্সিট যে দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তা এখন স্পষ্ট। আংশিক কাস্টমস ইউনিয়নে থাকা তুরস্কের অর্থনৈতিক সাফল্যের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি যুক্তরাজ্যের জন্য আরও বাস্তবসম্মত পথ অনুসন্ধানের পরামর্শ দেন। যদিও বর্তমানে কাস্টমস ইউনিয়নে ফিরে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই, লেবার সরকার বলছে—ধাপে ধাপে বাস্তব চুক্তি করেই ইইউ–যুক্তরাজ্য সম্পর্কের নতুন কাঠামো দাঁড় করানো হবে।

সরকারী সূত্রগুলো জানাচ্ছে—নাইজেল ফারাজসহ ব্রেক্সিটপন্থী নেতারা এখন রাজনৈতিকভাবে চাপের মুখে, কারণ সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে ভোটারদের অধিকাংশই ইইউর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চান। ৭০ শতাংশেরও বেশি ভোটার একটি নিয়ন্ত্রিত, সময়সীমাবদ্ধ যুব মোবিলিটি স্কিম সমর্থন করছেন।

স্কিমটির আলোচনায় যুক্তরাজ্য দুই বছরের সীমা ও ‘দশ-হাজারের ঘরে’ ক্যাপের ওপর জোর দিচ্ছে। পরিকল্পনা হলো—২০২৭ সালে স্কিম চালু হলে প্রথম ব্যাচের ইউরোপীয়রা ২০২৯ সালের নির্বাচনের আগেই দেশে ফিরবে, ফলে সরকার ভোটারদের কাছে দেখাতে পারবে—স্কিমটি নেট মাইগ্রেশনে চাপ তৈরি করছে না। অপরদিকে, যত ইউরোপীয় আসবেন, তত সংখ্যক ব্রিটিশ তরুণও ইউরোপে গিয়ে ভারসাম্য তৈরি করবে।

ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট মারোশ শেফচোভিচের সঙ্গে বুধবার বৈঠকে মিলিত হবেন যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী নিক থমাস-সাইমন্ডস। যদিও আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে, ইইউ চার বছরের সময়সীমা চায় বলে জানা গেছে। এছাড়া ইইউ চাইছে স্কিমের আওতায় ব্রিটিশ তরুণরা একাধিক দেশে ঘোরাফেরা না করে একটি দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করুক। একই সঙ্গে সব ২৭টি দেশ যেন সমানভাবে সুবিধা পায়, এটাই ব্রাসেলসের লক্ষ্য।

যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে—স্কিমটি হবে দেশের বিদ্যমান মোবিলিটি চুক্তিগুলোর (অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড) আদলে। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে—নিম্ন–মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও ফি কম রাখার বিষয়টিতে।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন—প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনার ব্যর্থতা দেখিয়েছে—ইইউ–যুক্তরাজ্য সম্পর্ক উন্নয়ন কোনো সহজ পথ নয়। ইইউ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে কেন্দ্র করে আরও বড় কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যস্ত। ফলে যুক্তরাজ্যের এজেন্ডা সবসময়ই প্রাধান্য পাবে—এমন আশা করা যাচ্ছে না।

সরকার বলছে—সময়সীমাবদ্ধ ও সীমাবদ্ধ সংখ্যার এই স্কিম তরুণদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে এবং ইইউ–যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক পুনর্গঠনে কার্যকর প্রথম ধাপ হবে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

ব্রিটিশ এমপি স্যার ডেভিড অ্যামেস ছুরিকাঘাতে নিহত

অনলাইন ডেস্ক

ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি ঠেকাতে যুক্তরাজ্য-ফ্রান্স ‘একজন আসবে, একজন যাবে’ চুক্তির পথে

যুক্তরাজ্যে লেবার দলে বিদ্রোহের ঝড়ঃ চার এমপিকে বহিষ্কার, তিনজন হারালেন বাণিজ্য দূতের পদ