ভারতের রাজধানী দিল্লিতে আদালত কক্ষের ভেতর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। দেশের প্রধান বিচারপতি বি. আর. গাভাইয়ের দিকে এক আইনজীবী জুতা ছুড়ে মারেন। ধর্মীয় মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে এমন কাজ করেছেন বলে জানা গেছে। ঘটনার সময় আদালতে চলছিল নিয়মিত শুনানি।
জানা যায়, সোমবার দিল্লিতে আদালত কক্ষে রাকেশ কিশোর নামের এক আইনজীবী আচমকাই প্রধান বিচারপতির দিকে জুতা নিক্ষেপ করেন। আদালতে উপস্থিত তিনজন আইনজীবী বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন যে জুতাটি বিচারপতির গায়ে না লেগে পিছনে পড়ে যায়। এ সময় তিনি চিৎকার করে বলেন, “ভারত সনাতন ধর্মের অপমান সহ্য করবে না।” নিরাপত্তা কর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে তাকে আটক করে আদালত থেকে বের করে দেন।
আদালতে উপস্থিত আইনজীবী রবি শঙ্কর ঝা বলেন, “তিনি জুতা ছুড়ে মারেন এবং হাত তুলে জানান যে তিনিই ছুড়েছেন।” আটক হওয়ার পর প্রধান বিচারপতি আইনজীবীদের শান্ত থাকতে বলেন ও শুনানি অব্যাহত রাখতে নির্দেশ দেন। অন্য এক আইনজীবী আনাস তানভির জানান, বিচারপতি গাভাই পুরো সময়ই অত্যন্ত সংযমী ও শান্ত ছিলেন।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, রাকেশ কিশোরের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অভিযোগ আনা হবে না। তবে তাকে আইনজীবী হিসেবে কাজের অধিকার থেকে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি কোনো মন্তব্য করেননি।
আইনজীবী রাকেশ কিশোর ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট-কে বলেন, এই ঘটনার সূত্র ১৬ সেপ্টেম্বরের একটি মামলায়। সেই মামলায় প্রধান বিচারপতি গাভাই মধ্যপ্রদেশের এক মন্দিরে ভগবান বিষ্ণুর সাত ফুট উচ্চতার মূর্তি পুনর্নির্মাণের আবেদন খারিজ করে মন্তব্য করেছিলেন, “এটি পুরোপুরি প্রচারমূলক মামলা, যান দেবতাকেই বলুন যেন তিনি নিজে কিছু করেন।”
এই মন্তব্যে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। অনেকে বিচারপতির বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিশ্বাসকে উপহাস করার অভিযোগ তোলেন। পরে বিচারপতি গাভাই জানান, তিনি “সব ধর্মকেই সম্মান করেন”। কিন্তু রাকেশ কিশোর অভিযোগ করেন, “তিনি শুধু আবেদন খারিজ করেননি, ভগবান বিষ্ণুকেও উপহাস করেছেন।” তিনি আরও বলেন, “১৬ সেপ্টেম্বর থেকে আমি ঘুমাতে পারিনি। তার মন্তব্যে আমি ব্যথিত।”
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘটনাটিকে ‘অত্যন্ত নিন্দনীয়’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বিচারপতি গাভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং বলেন, “এই হামলায় প্রতিটি ভারতীয় ক্ষুব্ধ। আমাদের সমাজে এমন নিকৃষ্ট কাজের কোনো স্থান নেই।”
ভারতসহ অনেক দেশে প্রকাশ্যে কাউকে জুতা নিক্ষেপ করা গভীর অপমান ও অসম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। ফলে এ ঘটনা শুধু আদালত নয়, দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
০৭ অক্টোবর ২০২৫