যুক্তরাজ্যে বৈধ ভিসা ছাড়া কেউ যাতে বিমানে উঠতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে ইউরোপের ৯,০০০-এরও বেশি এয়ারলাইন কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিমান সংস্থার কর্মীরা এখন যুক্তরাজ্যের সীমান্ত প্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন।
উইজ এয়ার, জেট২ এবং লুফথানসার মতো বড় বড় এয়ারলাইন কোম্পানির কর্মীরা ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্যগামী যাত্রীদের কাগজপত্র যাচাই করছেন। এই কর্মসূচি ৩৯টি দেশে বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অনিয়মিত অভিবাসনের জন্য পরিচিত ট্রানজিট পয়েন্টগুলো—যেমন গ্রিস, মাল্টা, ইতালি ও আলবেনিয়া।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র দপ্তরের যৌথ তত্ত্বাবধানে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে যাত্রীদের যুক্তরাজ্যগামী বিমানে ওঠার আগেই ভিসার যথার্থতা যাচাই করা হচ্ছে। কাগজপত্র ঠিক না থাকলে যাত্রার সুযোগ নেই।
এই প্রকল্প লেবার সরকারের নতুন ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন (ETA) এবং ই-ভিসা পদ্ধতির অংশ। এই ডিজিটাল ব্যবস্থা এখন অনেক ইউরোপীয় নাগরিকসহ ভ্রমণকারীদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশের আগে নিবন্ধনে বাধ্য করছে।
পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি এই ব্যবস্থা নিয়ে বলেন, “আকাশপথে ব্রিটেনে আসতে হলে বৈধ অনুমতি ও নিবন্ধন অপরিহার্য। অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে সীমান্ত ও শিল্প খাতকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
এতসব উদ্যোগ সত্ত্বেও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এতে প্রকৃত আশ্রয়প্রার্থী ও নিরীহ যাত্রীরা বিমানেই ওঠার সুযোগ হারাতে পারেন। তাছাড়া ভিসা যাচাইয়ের মতো গুরুতর দায়িত্ব বেসরকারি কর্মীদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হলে জবাবদিহির অভাব দেখা দেবে।
লেবার সরকার মনে করছে, অভিবাসন নিয়ে জনমনে যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ রয়েছে, তা প্রশমনে কঠোর অবস্থান জরুরি। তারা রিফর্ম ইউকের মতো কট্টর ডানপন্থী দলের চেয়ে শক্ত অবস্থান নিতে চাইছে।
নতুন ই-ভিসা পদ্ধতির ফলে সরকার বাস্তব সময়ে যেকোনো ব্যক্তির অভিবাসন তথ্য পর্যবেক্ষণ করতে পারছে। ওভারস্টে করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং বাড়িওয়ালা, নিয়োগকর্তা ও সেবাদানকারীদের মাধ্যমে যাচাই সহজতর হচ্ছে।
সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে ৩০,০০০ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২৩% বৃদ্ধি পেয়েছে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে এবং ১৪% বেশি হয়েছে বিদেশি অপরাধীদের বহিষ্কার।
ব্রিটিশ কূটনীতিকদের ইউরোপীয় সরকারগুলোর সঙ্গে এই নতুন সীমান্ত নীতি নিয়ে আলোচনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চালু হয়েছে জনসচেতনতা বাড়াতে একটি প্রচার অভিযান।
ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ জানিয়েছে, ETA ও ই-ভিসা পদ্ধতির প্রশিক্ষণ কর্মীদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। তবে যাত্রী বোর্ডিংয়ে ভুল হলে দায়ভার কে নেবে, সে প্রশ্ন এখনো অনুত্তরিত।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২২ জুন ২০২৫