যুক্তরাজ্যে ২০২৫ সাল থেকে বেসরকারি স্কুলের জন্য করছাড় বাতিল হতে যাচ্ছে। যা যুক্তরাজ্যের শিক্ষা খাতে উন্নত বিনিয়োগে সহায়তা করবে বলে ২০২৪ সালের বাজেটে চ্যান্সেলর নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা এই করছাড় বাতিল করছি, যার ফলে জানুয়ারি ২০২৫ থেকে বেসরকারি স্কুলের শিক্ষাব্যয় এবং আবাসন ফি-তে ২০% ভ্যাট যোগ করা হবে এবং এপ্রিল থেকে চ্যারিটেবল ব্যবসার হারছাড় অপসারণ করা হবে।
ট্রেজারির মতে, এই কর থেকে প্রতি বছর £১.৭২৫ বিলিয়ন পাউন্ড আয় হবে। যা পাবলিক ফিন্যান্সে অবদান রাখবে এবং তরুণদের শিক্ষাগত উন্নতিতে সহায়তা করবে।
এপ্রিল ২০২৫ থেকে চ্যারিটি হিসেবে নিবন্ধিত বেসরকারি স্কুলগুলো চ্যারিটেবল ব্যবসার হারছাড় হারাবে। যা তাদের স্থানীয় করের ওপর ৮০% ছাড় প্রদান করত।
পূর্ব লন্ডনের দারুল হাদিস লতিফিয়াহ স্কুলের গভর্নর বোর্ডের চেয়ার মোহাম্মদ ফরিদ চৌধুরী বলেন, “সরকার সবাইকে বোঝাতে চায় প্রাইভেট স্কুলের উপর ভ্যাট বাড়িয়ে ধনীদের হতে অতিরিক্ত অর্থ চার্জ করা হচ্ছে যা গরিবদের সাহায্য করছে। কিন্তু আমাদের স্কুলের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলো ধনী নয়!”
তার স্কুলও নতুন বছরের ভ্যাট আইন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা তিনি অন্যায় মনে করেন।
তিনি আরো বলেন, ” আমি একদমই বুঝতে পারছি না কেন তারা আমাদের মতো স্কুলগুলোকে এলিট স্কুলের মতো বিবেচনা করবে। আমাদের অনেক কিছু হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। আমাদের অভিভাবকেরা বেশিরভাগই কর্মজীবী মধ্যবিত্ত। যারা তাদের সন্তানদের এখানে পাঠানোর জন্য কষ্ট করে অর্থ সঞ্চয় করেন।”
তথ্যমতে জানা যায়, যুক্তরাজ্যের বেসরকারি ইসলামি ধর্মীয় স্কুল সমূহে বছরে গড়ে ৩,০০০ হাজার পাউন্ড ফি নেওয়া হয়। এটি অবশ্যই দেশের সবচেয়ে অভিজাত বেসরকারি স্কুলগুলোর তুলনায় অনেক কম। যেমন, ইটন কলেজ—যা প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্বনেতাদের মতো ব্যক্তিদের গড়ে তোলার জন্য বিখ্যাত—তারা বছরে £৫২,৭৪৯ পাউন্ড পর্যন্ত ফি নিয়ে থাকে।
তারপরও দারুল হাদিস লতিফিয়াহ এবং ইটনকে লেবার সরকারের সংস্কারের অধীনে একই হারে ভ্যাট দিতে হবে।
দারুল হাদিস লতিফিয়া’র সহ-প্রধান শিক্ষক মারুফ আহমেদ, যিনি নিজেও একসময় এই স্কুলের ছাত্র ছিলেন, উল্লেখ করেন যে দারুল হাদিস পুরোপুরি ফি এবং কমিউনিটি দানের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং স্কুল নিয়ন্ত্রক অফস্টেড দ্বারা বেশ কয়েকটি মানদণ্ডে “অসাধারণ” হিসেবে মূল্যায়িত হয়েছে। তিনি আইটিভি নিউজকে বলেন, “আমাদের স্কুল বহু দশক ধরে কমিউনিটির একটি স্তম্ভ।” এবং এই ভ্যাট প্রয়োগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানকে “ধ্বংসের মুখে” ঠেলে দিতে পারে।
দারুল হাদিস লতিফিয়ার কর্তৃপক্ষ জানায়, অতিরিক্ত খরচ সরাসরি অভিভাবকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই।
১৭ বছর বয়সী সাফওয়ান জাহান, স্কুলটির সেরা শিক্ষার্থীদের একজন। তার একাডেমিক কৃতিত্ব সম্প্রতি একটি পুরস্কার অর্জন করেছে। তবে এখনও তিন বছরের পড়াশোনা বাকি, যা এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
বাড়িতে, সাফওয়ানের বিধবা মা, যিনি তাকে বড় করার জন্য চাকরি ছেড়েছিলেন, উদ্বিগ্ন যে অতিরিক্ত অর্থ কোথা থেকে পাবেন।
সাফওয়ানের মা রেহানাজ নূর বলেন,” দারুল হাদিস লতিফিয়া আমার ছেলের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমি আমার বিল বা মর্টগেজে কাটছাঁট করতে পারব না। তাই হয়তো আমার ছেলের শিক্ষায় কাটছাঁট করতে হবে। ভ্যাট বৃদ্ধি আমার ছেলের শিক্ষাজীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।”
ইন্ডিপেনডেন্ট স্কুলস কাউন্সিল (ISC) বলছে, ইংল্যান্ডে প্রায় ১০০০ বেসরকারি ধর্মীয় স্কুল রয়েছে, যেখানে ৩,৭০,০০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।
অ্যাসোসিয়েশন অফ মুসলিম স্কুলস (AMS) সতর্ক করছে যে কর নীতির পরিবর্তনের ফলে ৭৫% পর্যন্ত বেসরকারি ইসলামিক ধর্মীয় স্কুল “আর্থিকভাবে অচল” হয়ে যেতে পারে।
ধর্মীয় স্কুলগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী একদল সংগঠন, যার মধ্যে খ্রিস্টান, ইহুদি এবং মুসলিম শিল্প সংস্থাগুলি অন্তর্ভুক্ত, সরকারের কাছে কর অব্যাহতি চেয়েছে।
তারা অনুমান করছে, কম-ফি বেসরকারি ধর্মীয় স্কুলগুলোর জন্য কর অব্যাহতি দেওয়া হলে তহবিল বিভাগে কেবল £৩২ মিলিয়ন পাউন্ড ঘাটতি হবে, যা স্কুল থেকে প্রাপ্ত ভ্যাটের £১.৫ বিলিয়নের মাত্র ২.১%।
তারা আরও বলছে, একজন শিক্ষার্থীর জন্য গড় বার্ষিক ব্যয় প্রায় £৭,৬৯০ পাউন্ড। এমনকি নতুন ভ্যাট নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৫৪,০০০ শিক্ষার্থীর একটি ছোট অংশও যদি সরকারি স্কুলে চলে যায়, তবে সরকারের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় যেকোনো আর্থিক লাভকে মুছে ফেলতে পারে।
তবুও, সরকার বেসরকারি স্কুলগুলোর ওপর ভ্যাট নীতিতে কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে না।
সূত্রঃ আইটিভি নিউজ
এম.কে
০৪ জানুয়ারি ২০২৫