একসময় মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তার দুই প্রধান স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্পর্ক এখন খাদের কিনারে। মঙ্গলবার ইয়েমেনে আমিরাত-সংশ্লিষ্ট একটি অস্ত্র চালানে সৌদি আরবের বিমান হামলা সেই দূরত্বেরই চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। তেলের উৎপাদন থেকে শুরু করে ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব; সব ক্ষেত্রেই এখন রিয়াদ ও আবুধাবির স্বার্থ ভিন্ন পথে বইছে।
একসময়ের ঘনিষ্ঠ দুই মিত্রের সম্পর্কের এই বিবর্তনের মূল ধাপগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
২০১১: আরব বসন্তের ঢেউ ছড়িয়ে পড়লে ইসলামপন্থিদের ঠেকাতে সৌদি আরব ও আমিরাত ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেয়। বাহরাইনে বিদ্রোহ দমনে তারা যৌথভাবে সেনা পাঠায়। ২০১৩ সালে মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুড সরকারের পতনের ক্ষেত্রেও দেশ দুটি সমন্বিত সমর্থন দেয়।
২০১৫: ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের দমনে দেশ দুটি যৌথ সামরিক অভিযান শুরু করে। সেখানে সংযুক্ত আরব আমিরাত স্থলযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয় এবং সৌদি আরব আকাশপথ নিয়ন্ত্রণ করে।
২০১৭: কাতার সন্ত্রাসবাদে সমর্থন দিচ্ছে, এমন অভিযোগে দেশটির ওপর অবরোধ ও বয়কট শুরু করে সৌদি ও আমিরাত। এই পদক্ষেপ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং আমিরাতের নেতা শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদের মধ্যকার ঘনিষ্ঠতাকে আরও দৃঢ় করে।
২০১৯: ইয়েমেনে রণকৌশল পরিবর্তন করে আমিরাত তার সেনা প্রত্যাহার শুরু করে। তবে সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এসটিসি)-এর ওপর নিজেদের প্রভাব বজায় রাখে। ফলে হুথিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মূল বোঝা একা সৌদি আরবের ওপর পড়ে।
২০২০: যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের প্রধান পবিত্র দুটি স্থানের জিম্মাদার সৌদি আরব ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের শর্তে অনড় থেকে সেই পথে হাঁটেনি।
২০২১: জানুয়ারিতে সৌদি আরবের নেতৃত্বে আল-উলা সম্মেলনে কাতার সংকটের সমাধান হয়। তবে আমিরাত অনেকটা অনিচ্ছাসত্ত্বেও এতে সই করে। একই বছর রিয়াদ ঘোষণা দেয়, ২০২৪ সালের মধ্যে বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের আঞ্চলিক সদর দফতর সৌদি আরবে স্থানান্তর না করলে তারা সরকারি কোনও কাজ পাবে না। এটি সরাসরি দুবাইয়ের বাণিজ্যিক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে।
একই বছরের জুলাইয়ে ওপেক সম্মেলনে তেলের উৎপাদন নিয়ে আমিরাত সৌদি আরবের প্রস্তাব আটকে দেয়, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে প্রকাশ্য করে তোলে।
২০২৩: সুদানের যুদ্ধে সৌদি আরব সরকারি বাহিনীর সমর্থনে শান্তি আলোচনা আয়োজন করে। অন্যদিকে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের মতে, আরব আমিরাত বিদ্রোহী আরএসএফ বাহিনীকে অস্ত্র সহায়তা দেয়, যদিও আবুধাবি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
২০২৫: ডিসেম্বরের শুরুতে ইয়েমেনের হাদরামাউতের তেলক্ষেত্রগুলো আমিরাত-সমর্থিত এসটিসি দখল করে নিলে তা সৌদি আরবের বেঁধে দেওয়া ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করে।
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫: অবশেষে মঙ্গলবার মুকাল্লা বন্দরে একটি জাহাজে সৌদি বিমান হামলা দুই মিত্রের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটালো। জোটের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, জাহাজটি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য ভারী অস্ত্র বহন করছিল। এটি ছিল দুই মিত্রের স্বার্থের সরাসরি সংঘাতের প্রথম বড় ঘটনা।
সূত্রঃ রয়টার্স
এম.কে

