TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)শীর্ষ খবর

মর্গেজ অ্যাপ্লিকেশনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

মোস্তাফিজুর রহমান

বিলেতে মর্গেজ নিয়ে প্রপার্টি কিনতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। তবে যদি আপনার ভালো প্রস্তুতি থাকে তাহলে কোনো ঝামেলা ছাড়াই ক্রয় প্রক্রিয়াটা দ্রুত সম্পন্ন করা যায়।
মর্গেজের আবেদন করার আগে যেসব বেসিক ডকুমেন্ট আপনার সংগ্রহে রাখা উচিৎ।
  • পরিচয়পত্র: প্রথমেই দেখে নিন আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ আছে কি-না। প্রয়োজনে রিনিউ (নবায়ন) করে নিন। আপনার যদি বৃটেনে জন্ম হয়ে থাকে তাহলে পাসপোর্টের পরিবর্তে ফুল ড্রাইভিং লাইসেন্স আইডি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। আপনি যদি বৈধ ভিসা নিয়ে এদেশে থাকেন, তাহলে মর্গেজের আবেদন দাখিলের সময় ভিসার কাগজ বা কার্ড সাথে থাকতে হবে।
  • ঠিকানার প্রমাণপত্র: আপনার ঠিকানার প্রমাণপত্র হিসেবে কাউন্সিল ট্যাক্স বিল, ইউটিলিটি বিল অথবা ব্যাংকের স্টেটমেন্ট ব্যবহার করতে পারবেন।
  • ইনকাম ডকুমেন্টস: আপনি যদি পার্ট টাইম অথবা ফুল টাইম চাকরি করেন, তাহলে নূন্যতম সর্বশেষ তিন মাসের পে-স্লিপ এবং সর্বশেষ পি-৬০ এর কপি সংগ্রহে রাখুন। আপনি যদি সেলফ এমপ্লয়েড অথবা কোনো কোম্পানির ডাইরেক্টর হয়ে থাকেন, তাহলে নূন্যতম দুই বছরের ট্যাক্স রিটার্নের কাগজ সংগ্রহ রাখতে হবে।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট: যে ব্যাংক একাউন্টে আপনার বেতন আসে এবং যে একাউন্টে আপনার নিয়মিত লেনদেন হয়, সেই একাউন্টের সর্বশেষ তিন মাসের স্টেটমেন্ট সাথে রাখুন।
  • ডিপোজিট স্টেটমেন্ট: আপনার ডিপোজিট এর টাকা যে ব্যাংক একাউন্টে রাখেন, তার ছয় মাসের স্টেটমেন্টস সংগ্রহে রাখুন। আপনি যদি আপনার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন অথবা অন্য কারো কাছ থেকে ডিপোজিটের টাকা গিফট হিসেবে নেন, তাহলে দাতাদের কাছ থেকে তাঁর আইডি, গিফট ডিক্লারেশন স্টেটমেন্ট এবং তাঁর ব্যাংকের স্টেটমেন্টস এর কপি সংগ্রহে রাখুন।
  • ক্রেডিট রিপোর্ট: প্রত্যেক মর্গেজ অ্যাপলিকেশন এর বিপরীতে ব্যাংক আবেদনকারীর ক্রেডিট হিস্ট্রি চেক করে থাকে। একটি ক্রেডিট রিপোর্ট এ মূলত-নাম,জন্ম তারিখ, বর্তমান ঠিকানা, পূর্বের ঠিকানা, ইলেক্টোরাল নিবন্ধন এবং বিগত ৬ বছরের ক্রেডিট হিষ্ট্রি লিপিবদ্ধ থাকে। কারও যদি কোন কোর্ট জাজমেন্ট অথবা লেনদেন ডিফল্ট থাকে, সেটিও ক্রেডিট রিপোর্ট এ রেকর্ড থাকে, কেউ যদি ক্রেডিট কার্ডের অথবা লোন এর নিয়মিত পেমেন্ট দিতে কখনও দেরি করেন অথবা কোন মাসে মিসড্ করেন তাহলে সেটিও ক্রেডিট রিপোর্ট এ রেকর্ড থাকে। অনেক সময় এই ক্রেডিট রিপোর্ট এ ভুল থাকতে পারে, যার দরুন আপনার মর্গেজ অ্যাপলিকেশন বাতিল হতে পারে। মর্গেজ অ্যাপলিকেশন করার আগে প্রত্যেকের উচিৎ নিজের ক্রেডিট রিপোর্ট একবার হলেও দেখে নেওয়া। আপনার ক্রেডিট রিপোর্টের জন্য এক্সপেরিয়ান, ইকুইফেক্স, CheckMyFile অথবা এ জাতীয় ক্রেডিট রেটিং অ্যাজেন্সির সাথে রেজিস্ট্রেশন করে আপনার রিপোর্টের একটি কপি নিয়ে নিয়ে নিতে পারেন।
  • ইলেক্ট্ররাল রোল: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি আপনার নাম স্থানীয় কাউন্সিলের ভোটার তালিকায় আপ-টু-ডেট রাখবেন। তাহলে ব্যাংক এর ক্রেডিট চেক করার সময় তারা খুব সহজেই আপনার বর্তমান ঠিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবে।
  • বেনিফিট ইনকাম: আপনার যদি চাইলড বেনিফিট ইনকাম থাকে, তাহলে এই ইনকামও আপনি মর্গেজ পাওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখ করতে পারেন। প্রমাণ স্বরূপ আপনার চাইলড বেনিফিটের কাগজ অথবা ৬ মাসের ব্যাংক স্ট্যাটমেন্টস সংগ্রহে রাখুন। অন্যান্য বেনিফিট ইনকামের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
মর্গেজ অ্যাপ্লিকেশনের জন্য আপনাদের ইনকাম ডকুমেন্টস (আয়ের কাগজপত্র) প্রয়োজন হবে । মূলত ইনকাম ডকুমেন্টস বলতে আমরা পে-স্লিপ, P-60, এমপ্লয়মেন্ট লেটার, SA302 এবং ট্যাক্স ইয়ার ওভারভিউ বুঝে থাকি।
এমপ্লয়মেন্ট ডকুমেন্টস 
  • পে-স্লিপ ও পি-৬০: মর্গেজের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো মূল বেতন, বোনাস ও ওভারটাইম আলাদাভাবে হিসেব করে। মূল বেতন বা বেসিক বেতন হচ্ছে গ্যারান্টেড ইনকাম। আর ওভারটাইম হিসেব করার ক্ষেত্রে সর্বশেষ তিন মাসের পে-স্লিপ এবং সর্বশেষ পি-৬০ এর ইনকাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • বোনাস ডকুমেন্টস: আপনি যদি গ্যারান্টেড বোনাস পান, সেক্ষেত্রে আপনার এমপ্লয়মেন্ট লেটারের প্রয়োজন হতে পারে। আর বোনাস যদি পারফরমেন্স ভিত্তিক হয়, সেক্ষেত্রে বিগত দুই বছরের সব কয়টি বোনাসের পে-স্লিপ লাগবে।
  • সেকেন্ড জব: আপনার যদি সেকেন্ড জব অর্থাৎ দ্বিতীয় আরো একটি চাকরি থাকে, তাহলে অনেক ব্যাংক সেকেন্ড জবের ৬ মাসের ইনকামের প্রমান অর্থাৎ পে-স্লিপ দেখতে চাইতে পারে।
  • ‘জিরো’ আওয়ার এমপ্লয়মেন্ট: আপনার এমপ্লয়মেন্ট কন্ট্রাক্ট যদি ‘জিরো’ আওয়ার ভিত্তিক হয়ে থাকে, তাহলে আপনার নূন্যতম এক বছরের পে-স্লিপ লাগবে। অনেক ব্যাংক দুই বছরের পে-স্লিপ চাইতে পারে। ‘জিরো’ আওয়ার জব এমপ্লয়ার আপনাকে প্রতি সপ্তাহে কাজ দিতে বাধ্য নয়, এজন্য এ ধরনের জবের ক্ষেত্রে একজন চাকরিজীবীর নূন্যতম ইনকামের গ্যারান্টি নেই, তাই মর্গেজ পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক দীর্ঘ সময়ের নিয়মিত ইনকাম প্রুফ দেখতে চায়।
  • মর্গেজ অ্যাপ্লিকেশন করার আগে আপনার এমপ্লয়ারকে অ্যাপ্লিকেশন করার কথা জানিয়ে রাখুন। তাহলে ব্যাংক থেকে যদি কোন ইনকোয়েরি আসে তাহলে আপনার এমপ্লয়ার হয়ত সঠিকভাবে যেকোনো ইনকোয়েরির উত্তর দিতে পারবেন।
সেলফ এমপ্লয়েড ডকুমেন্টস 
  • ট্যাক্স রিটার্ন ডকুমেন্টস: আপনি যদি সেলফ এমপ্লয়েড অথবা কোনো কোম্পানির ডাইরেক্টর হয়ে থাকেন, তাহলে নূন্যতম দুই বছরের ট্যাক্স রিটার্নের কাগজ সংগ্রহ রাখতে হবে। অবশ্য আপনার সেলফ-এমপ্লয়েড অথবা কোম্পানির ডাইরেক্টরশীপের মেয়াদ যদি পূর্ণ দুই বছর না হয়ে থাকে, তাহলে আপনি এক বছরের ট্যাক্স রিটার্নের উপর ভিত্তি করেও মর্গেজ আবেদন করতে পারবেন।ট্যাক্স রিটার্নের কাগজ বলতে, আপনাকে সর্বশেষ দুই বছরের SA302 এবং ট্যাক্স ইয়ার ওভারভিউ সংগ্রহে রাখতে হবে।
  • ট্যাক্স রিটার্নের জন্য যদি আপনার কোনো একাউন্টেন্ট থাকে, তাহলে একাউন্টেন্ট কোম্পানীর একটি ভিজিটিং কার্ড আপনার সংগ্রহে রাখুন।
ভিসা হোল্ডারদের জন্য প্রপার্টি মর্গেজ:
বর্তমানে Tier 1, Tier 2, Tier 4 ভিসা হোল্ডারগণ কিছু শর্ত সাপেক্ষে বিলেতে মর্গেজ নিয়ে রেসিডেন্সয়াল প্রপার্টি কিনতে পারবেন।  ভিসা হোল্ডারদের জন্য মর্গেজ দেয়ার ক্ষেত্রে সাধারনত সকল মর্গেজ ল্যান্ডাররা যে সব তথ্যাবলী জানতে চায়।
  • ভিসা হোল্ডারকে অবশ্যই বিলেতে কমপক্ষে ৬ মাস বসবাস করতে হবে।
  • মর্গেজ এর জন্য অ্যাপলিকেশন করার সময় ভ্যালিড ভিসা থাকতে হবে।
  • পার্মানেন্ট এমপ্লয়মেন্ট কন্ট্রাক থাকে হবে। প্রুফ অফ ইনকাম হিসেবে বেশ কয়েক মাসের পে-স্লিপ থাকতে হবে। সেলফ এমপ্লয়েড হলে কমপক্ষে ২ বছরের ট্যাক্স ডকুমেন্ট থাকতে হবে।
  • লোন টু ভ্যালু সর্বোচচ ৯০%
  • হাতে গোনা কিছু ল্যান্ডার Tier 4—এডাল্ট স্টুডেন্টদের বেশ কিছু শর্ত সাপেক্ষে রেসিডেন্সয়াল প্রপার্টির জন্য মর্গেজ দিয়ে থাকে।
  • স্পাউস ভিসা হোল্ডারগণ তাদের পার্টনার(স্বামী/স্ত্রী) এর সাথে একত্রে মর্গেজ এর জন্য অ্যাপলিকেশন করতে পারবেন।
  • এছাড়াও ভিসা হোল্ডারদের মর্গেজ দেবার ক্ষেত্রে প্রতিটি ল্যান্ডারের নিজস্ব কিছু শর্তাবলি রয়েছে।
বিলেতে মর্গেজ নিয়ে প্রপার্টি কিনতে চাইলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ মর্গেজ এডভাইজার এর সাথে পরামর্শ করা উত্তম। কারণ প্রপার্টি বায়ার এর সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে মর্গেজ এডভাইজার তার ক্লায়েন্ট বা প্রপার্টি বায়ার এর জন্য সর্বোত্তম মর্গেজ প্রোডাক্টটি রেকমেন্ড করে থাকে।
 
প্রপার্টি মার্কেট এবং মর্গেজ সম্পর্কে আপনাদের কোন মতামত বা জিজ্ঞাসা থাকলে নিন্মের ই-মেইল অথবা টেলিফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।

Tel: 02080502478

আরো পড়ুন

এক মাসে দুই বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা

অনলাইন ডেস্ক

ঋষি সুনাকের ‘শিকড়’ ভারতে, নাকি পাকিস্তানে?

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনঃ এক্সিট পোল লেবার পার্টির ভূমিধস বিজয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে