TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

মাস্কের সরে দাঁড়ানোয় ট্রাম্প প্রশাসনে নীতিনির্ধারণে ফের আধিপত্য মন্ত্রিসভার

যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনকে ছোট করার উদ্দেশ্যে গঠিত বিতর্কিত এক সরকারি দপ্তর থেকে এলন মাস্ক তার সম্পৃক্ততা কমাতে যাচ্ছেন—এমন অবস্থায় ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা আবারও গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত ও বাজেট সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দুইজন অভ্যন্তরীণ সূত্র।

উক্ত দপ্তরটি হলো ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (DOGE), যা ২০২৫ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর পর থেকেই মাস্ক ছিলেন এর নেতৃত্বে। যদিও তাকে কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিযুক্ত করা হয়নি, মাস্ক ছিলেন এই দপ্তরের অনানুষ্ঠানিক নীতিনির্ধারক, যার নেতৃত্বে ব্যাপক খরচ কমানোর কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে। তবে এসব পদক্ষেপ অভিজ্ঞ সরকারি কর্মকর্তাদের সমালোচনার মুখে পড়েছে এবং ট্রাম্পের নিজের মন্ত্রিসভার সঙ্গেও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছে।

মঙ্গলবার মাস্ক সহকর্মীদের জানান, তিনি এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে মাত্র এক বা দুই দিন সরকারি কার্যক্রমে সময় দেবেন, কারণ টেসলায় তার ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জ দিন দিন বাড়ছে। তার এমন সিদ্ধান্ত মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের জন্য DOGE কর্তৃক দখল করা জায়গা পুনরুদ্ধারের সুযোগ তৈরি করেছে।

DOGE দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাপক ছাঁটাই, সরকারি চুক্তি হ্রাস এবং পরিষেবা সীমিতকরণে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। যদিও এসব ট্রাম্পের ‘সরল সরকার’ দর্শনের সঙ্গে মিলে, তবু প্রশাসনের অভ্যন্তরে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক মন্ত্রিসভা সদস্য, যারা ইতোমধ্যে DOGE’র ব্যাপক হস্তক্ষেপে বিরক্ত, এখন নীতিনির্ধারণে নিজেদের কর্তৃত্ব ফেরত পাওয়ার আশায় আছেন।

সূত্র জানায়, মার্চ মাসে মাস্ক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মধ্যে তীব্র কথোপকথন হয়। রুবিও উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, DOGE-এর ব্যয় হ্রাস কার্যক্রম মার্কিন কূটনীতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। অন্যদিকে, পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি বিমান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ছাঁটাই নিয়ে নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ তুলেছেন।

ট্যাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, “মাস্কের জোরালো উপস্থিতি না থাকায় এখন থেকে মন্ত্রীরা হয়তো আরও সূক্ষ্ম ও লক্ষ্যভিত্তিক ব্যয় হ্রাসের দিকে যাবেন। এখন বিভাগীয় প্রধানদের মধ্যে একটি ঐকমত্য তৈরি হচ্ছে, যাতে DOGE-এর একক আধিপত্য কমে আসে।”

যদিও হোয়াইট হাউস বলছে, মাস্ক থাকুক বা না থাকুক, DOGE তার পূর্বনির্ধারিত কাঠামোতেই চলবে, অভ্যন্তরীণ কিছু পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে। বাজেট সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে এখন দপ্তরের অন্যান্য নেতাদের অধিকতর কর্তৃত্ব থাকবে—যা এতদিন মাস্ককেন্দ্রিক ছিল।

DOGE’র সমালোচকরা বলছেন, এই দপ্তরের প্রাথমিক কর্মী দল ছিল মূলত মাস্কের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যুক্ত তরুণ প্রকৌশলীদের নিয়ে গঠিত, যাদের সরকারি অভিজ্ঞতা সীমিত। এখন তাদের যোগ্যতা ও কর্তৃত্ব নিয়ে আরও যাচাই-বাছাই হবে বলে জানা গেছে।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র হ্যারিসন ফিল্ডস বলছেন, “DOGE কখনও এক ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল ছিল না। মন্ত্রিসভাই সবসময় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। DOGE কেবল একটি সহায়ক বাহন ছিল। এটি প্রশাসনের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ অঙ্গ এবং তা এমনই থাকবে।”

তবে মাস্কের ফাঁকা হয়ে যাওয়া জায়গায় কে দায়িত্ব নেবেন—এ নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া অ্যামি গ্লিসন সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। তবে মাস্কের প্রকৃত দায়িত্ব ও ক্ষমতা সম্পর্কে হোয়াইট হাউস ও প্রেসিডেন্টের বিবৃতির মধ্যে অমিল থাকায় রূপান্তর প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়েছে।

তবু অনেক বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন, মাস্কের প্রভাব কমলেও DOGE যে নীতিমালা চালু করেছে তা বহাল থাকবে। মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অধ্যাপক নিক বেদনার বলেন, “এই নীতিমালাগুলো ইতোমধ্যে বিভিন্ন দপ্তরের অভ্যন্তরীণ অগ্রাধিকার নির্ধারণে প্রভাব ফেলেছে—এগুলো সহজে উল্টে দেওয়া সম্ভব নয়।”

মাস্ক নিজেও এই ধারনার প্রতিধ্বনি করেছেন। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “কাজের কঠিন অংশ শেষ হয়ে গেছে।”

এই মুহূর্তে, DOGE’র ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে মন্ত্রিসভার সদস্যদের ওপর—বিশ্বের অন্যতম বিতর্কিত সিইও-র প্রভাব থাকুক বা না থাকুক।

এম.কে
২৫ এপ্রিল ২০২৫

আরো পড়ুন

ইলন মাস্ককে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক কিনে নেওয়ার পরামর্শ

আবাসনে সংকটে আয়ারল্যান্ড, ক্ষোভ বাড়ছে অভিবাসীদের প্রতি

বিশ্বের বিস্ময় যে মসজিদ