মেটার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য নীতিমালার ব্যাপক পরিবর্তন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের আইন প্রণেতাদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক করেছে বলে বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা মন্তব্য করেছেন।
ব্রাসেলস এবং লন্ডনের আইনপ্রণেতারা মার্ক জাকারবার্গের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন, যেখানে মার্ক যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং থ্রেডস হতে ফ্যাক্টচেকারদের বাদ দিয়েছেন। একজন বিশেষজ্ঞ এই সিদ্ধান্তকে “খুবই ভীতিকর” বলে উল্লেখ করেছেন।
মেটার নতুন বৈশ্বিক নীতিমালায় এখন ঘৃণাসূচক কনটেন্টের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের “ইট(it)” বলে উল্লেখ করার। যা চরম অবমাননাকর করে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া গাইডলাইনে বলা হয়েছে, “লিঙ্গ বা যৌন অভিমুখিতার ভিত্তিতে মানসিক অসুস্থতা বা অস্বাভাবিকতার অভিযোগ করার অনুমতি দেওয়া হবে।”
হাউস অফ কমন্সের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমিটির চেয়ার চি ওনওয়ারাহ বলেছেন, পেশাদার ফ্যাক্টচেকারদের বাতিল করে দেয়া “উদ্বেগজনক” এবং “খুবই ভীতিকর।”
তিনি বলেন, “মেটার ফ্যাক্টচেকার সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত শোনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। মানুষকে ভুল তথ্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার থাকা উচিত।”
মেটা বলেছে, তারা এখন “কমিউনিটি নোটস” সিস্টেম ব্যবহার করবে, যেখানে ব্যবহারকারীরা একে অপরের পোস্ট চেক করবে, যা এলন মাস্কের প্ল্যাটফর্ম X-এ অনুসরণ করা হয়।
তবে এই পরিবর্তন ভোট, স্বাস্থ্য, মহামারি, এবং সশস্ত্র সংঘাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি করেছে। বিশ্বব্যাপী মেটার তিন বিলিয়নের বেশি ব্যবহারকারী এই ভুল তথ্যের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী আমেরিকান-ফিলিপিনো সাংবাদিক মারিয়া রেসা বলেছেন, “এটি সাংবাদিকতা, গণতন্ত্র এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক সময় বয়ে আনতে চলেছে।”
মেটার সিদ্ধান্তকে ইউরোপের আইনপ্রণেতারাও কড়া সমালোচনা করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিজিটাল সেবার আইন (ডিএসএ)-এর কথা উল্লেখ করে জাকারবার্গ ইউরোপের বিরুদ্ধে “সেন্সরশিপ প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের” অভিযোগ আনেন।
ইউরোপীয় কমিশন তার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, “ডিজিটাল সেবার আইনে এমন কিছু নেই যা বৈধ কনটেন্ট সরানোর জন্য কোনো প্ল্যাটফর্মকে বাধ্য করে।”
যুক্তরাজ্যের শিশু সুরক্ষা দাতব্য সংস্থা NSPCC এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেটার পরিবর্তন শিশুদের জন্য ক্ষতিকর কনটেন্ট আরও সহজলভ্য করে তুলতে পারে।
মেটার নীতিমালা পরিবর্তন যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কঠোর তদন্তের সম্মুখীন হবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
মেটার নীতিমালার পরিবর্তন বৈশ্বিক স্তরে বিভ্রান্তি এবং ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য এই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৯ জানুয়ারি ২০২৫