ম্যানচেস্টারের সিনাগগে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের ওপর প্রো-প্যালেস্টাইন মিছিল নিষিদ্ধের চাপ বাড়ছে। কনজারভেটিভ ও রিফর্ম পার্টির নেতারা এসব বিক্ষোভকে “ঘৃণা মিছিল” আখ্যা দিয়ে বলছেন, এগুলো সমাজে বিভাজন বাড়াচ্ছে এবং ইহুদি বিদ্বেষকে উস্কে দিচ্ছে।
হিটন পার্ক হিব্রু কংগ্রেগেশনে ইয়ম কিপুর প্রার্থনার সময় ব্রিটিশ নাগরিক জিহাদ আল-শামি গাড়ি হামলা ও ছুরিকাঘাত চালালে দুইজন নিহত ও কয়েকজন গুরুতর আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থলেই তাকে গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনার পর থেকেই বিক্ষোভ নিষিদ্ধের দাবি তীব্র হয়েছে।
কনজারভেটিভ এমপি লুই ফ্রেঞ্চ বলেন, “এসব মিছিল ঘৃণা ছড়াচ্ছে, পুলিশের সম্পদ নষ্ট করছে এবং করদাতার কোটি কোটি টাকা অপচয় করছে।” লন্ডন অ্যাসেম্বলির সদস্য সুসান হল মন্তব্য করেন, “এটা লন্ডনের জন্য লজ্জার। এসব ঘৃণা মিছিল এখনই বন্ধ করতে হবে।”
বিক্ষোভ ঘিরে সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে আয়োজিত এক প্রো-প্যালেস্টাইন মিছিল থেকে চল্লিশজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ছয়জন পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার দায়ে অভিযুক্ত। এ ছাড়া বিক্ষোভে এক নারীর বক্তব্য নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে, যিনি ইহুদি সম্প্রদায় নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন।
রিফর্ম অ্যাসেম্বলি সদস্য অ্যালেক্স উইলসন বলেন, “ইহুদি বিদ্বেষকে এতদিন সহ্য করার কারণেই এ ধরনের হামলা ঘটছে। যারা হোয়াইটহলে জড়ো হয়েছিল, তারা প্রতিবাদ করছিল না, তারা হত্যার উল্লাস করছিল।” তিনি সাদিক খানকে আহ্বান জানান, অবিলম্বে মিছিল নিষিদ্ধ করার জন্য।
তবে এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিভাজনও তৈরি হয়েছে। লন্ডনের লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেত্রী হিনা বোখারি বলেন, “যুক্তরাজ্য পুতিনের রাশিয়া নয়। প্রতিবাদের অধিকার ব্রিটিশ গণতন্ত্রের একটি মৌলিক অংশ।” তিনি কনজারভেটিভ ও রিফর্ম নেতাদের অবস্থানকে “গভীরভাবে উদ্বেগজনক” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এদিকে সিটি হল জানিয়েছে, মিছিল নিষিদ্ধের কোনো পরিকল্পনা নেই। সাদিক খানের মুখপাত্র বলেছেন, “প্রতিবাদ গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি, তবে তা অবশ্যই শান্তিপূর্ণ, আইনসম্মত ও নিরাপদ হতে হবে।” তিনি আহ্বান জানান, সাম্প্রতিক ভয়াবহ হামলার প্রেক্ষাপটে বিক্ষোভকারীরা যেন তাদের কর্মকাণ্ডে সংযমী হন এবং অন্যদের অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন।
আগামী সপ্তাহান্তে লন্ডনে নতুন বিক্ষোভের পরিকল্পনা রয়েছে। মেয়রের দপ্তর জানিয়েছে, “এখন সময় ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবার, যাতে সন্ত্রাসীরা যারা সমাজে বিভক্তি আনতে চায় তারা কোনোভাবেই সফল হতে না পারে।”
সূত্রঃ দ্য এক্সপ্রেস
এম.কে
০৩ অক্টোবর ২০২৫