চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) শেষে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দেখিয়েছিল যুক্তরাজ্য। তখন বৈশ্বিক মহামারির কারণে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা শিথিল করায় অর্থনীতির সব সূচকে বেশ চাঙ্গাভাব দেখা যায়। এপ্রিলের শুরুর দিকে খুচরা পণ্যের দোকান ও রেস্তোরাঁ খুলে দেয়ার পর শক্তিশালী গৃহস্থালি ব্যয়েরও দেখা পায় দেশটি। তবে সে ধারা খুব বেশিদিন অব্যাহত থাকেনি।
রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীরা এখন দুর্বল ভোক্তা চাহিদা, কাঁচামাল সরবরাহ অসুবিধা ও কর্মী সংকট নিয়ে লড়াই করছে।
আইএইচএস মার্কিট ও চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড সাপ্লাই (সিপস) জানিয়েছে, সম্প্রতি কোভিডের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবং তাদের সংস্পর্শে যাওয়ার কারণে হাজার হাজার কর্মীকে আইসোলেশনে যেতে হয়েছে। কর্মী সংকটের কারণে মার্চের পর থেকেই যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।
২১ জুলাই পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, অর্থনীতি এখনো প্রসারিত হচ্ছে। তবে প্রবৃদ্ধির গতি উল্লেখযোগ্যভাবে ধীর। এ কারণে ব্রিটিশ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আইএইচএস মার্কিটের প্রধান বাণিজ্য অর্থনীতিবিদ ক্রিস উইলিয়ামসন বলেন, কোভিডের সংক্রমণের কারণে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আবারো সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ভোক্তাদের চাহিদা কমে গেছে, সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হয়েছে এবং কর্মীদের ঘাটতি তৈরি করেছে।
দেশটির উৎপাদন ও পরিষেবা খাতে মন্দা দেখা দেয়ায় আইএইচএস মার্কিট ও সিপসের পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) ৬২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে জুলাইয়ে ৫৭ দশমিক ৭ শতাংশ পয়েন্টে নেমেছে। যদিও এ সূচক ৫০-এর উপরে থাকার বিষয়টি বৃদ্ধির নির্দেশ করে।
তিনি বলেন, ব্রেক্সিটের কারণে এমনিতেই যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। এর মধ্যে কভিড ভয়াবহ মন্দা নিয়ে হাজির হয়েছে। এখন আবার কভিডের ডেল্টা ধরন নিয়ে আশঙ্কা ভোক্তাদের মনোবল দুর্বল করে দিচ্ছে।
এদিকে বিভিন্ন সংকটের কারণে ব্যবসায়ের ব্যয়ও বেড়ে গেছে। পিএমআই জরিপের ২৩ বছরের ইতিহাসে ব্যবসায়ের জন্য গড় ব্যয় সবচেয়ে দ্রুত বেড়েছে। মজুরি বৃদ্ধি, উচ্চ পরিবহন বিল এবং সরবরাহকারীরা দাম বাড়িয়ে দেয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
যদিও ইউরোজোনের পিএমআইয়ে যুক্তরাজ্যের চেয়ে আলাদা চিত্র দেখা গেছে। অঞ্চলটিতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ২১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। সম্প্রতি ব্রিটিশ সরকার মূল কর্মীদের একটি গ্রুপকে আইসোলেশন এড়িয়ে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে ছয় লাখেরও বেশি কর্মীকে আইসোলেশনে থাকার সতর্কতা দেয়া হয়েছিল।
সরকারি পরিসংখ্যানে খুচরা বিক্রি জুনে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছিল। এটি বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। তবে খাবারের ব্যয় বৃদ্ধি না হলে এ হার আরো বেশি হতো বলে মনে করা হচ্ছে। টেলিভিশনে ইউরো ফুটবল উপভোগের কারণে খুচরা বিক্রি বেড়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
২৬ জুলাই ২০২১
নিউজ ডেস্ক