যুক্তরাজ্যের হোম অফিস শরনার্থী সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা হতে বের হতে পারছে না। নতুন এক প্রতিবেদনে জানা যায়, হোম অফিসের শরনার্থী হোটেল থেকে নিখোঁজ হওয়া শিশুরা পাচার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হতে জানা যায় আশ্রয় আবেদনকারী অনেক শিশুরা এখনও যুক্তরাজ্যের হোম অফিসের শরনার্থী হোটেল থেকে নিখোঁজ রয়েছে। যাদের অনেকেই হয়ত পাচার হয়ে গিয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান হতে দেখা গিয়েছে বারো বছরের কম বয়সী প্রায় ১১৮ জন শিশুর হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শরনার্থী শিশুদের হিসাব নিয়ে ঝামেলা একটি জাতীয় সংকট ও কেলেঙ্কারীতে রুপ নিতে পারে। যার দরুন সরকারী তদন্তের জোর দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল) এবং ইসিপিএটি ইউকে-র প্রতিবেদন গত বছর প্রকাশিত হওয়ার পরে জানা যায় আশ্রয়প্রার্থী প্রায় ১২ জনের মতো বা এরচেয়ে বেশি শিশুদের অপরাধী চক্র কর্তৃক হোম অফিস দ্বারা পরিচালিত হোটেল থেকে অপহরণ করা হয়েছে। শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে মৌলিক নিরাপত্তা দেয়ার ব্যবস্থাও এই হোম অফিস দ্বারা পরিচালিত হোটেলগুলোতে ছিল না, যা ছিল অত্যন্ত লজ্জাজনক।
হোম অফিসের প্রাক্তন একজন হোটেল কর্মী বলেন,
” নিরাপত্তার বিষয়টি ছিল চরম হাস্যকর যার কারণে বেশিরভাগ বাচ্চারা নিখোঁজ হয়েছে।”
উল্লেখ্য যে, ইরিত্রিয়া এবং সুদান সহ আফ্রিকার অনেক দেশ থেকে অনেকেই ছোট নৌকা যোগে চ্যানেল পার হয়ে যুক্তরাজ্যে এসেছিল। পরবর্তীতে আগত আশ্রয়প্রার্থীদের নাবালকদের সাথে হোম অফিস দ্বারা পরিচালিত সাতটি হোটেলে রাখা হয়। হাইকোর্টের রায় দ্বারা এই হোটেল গুলোকে বেআইনী ঘোষণা করার পূর্ব পর্যন্ত এই হোটেল চালু ছিল। তথ্যমতে ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই ধরনের হোটেলগুলিকে চালু রাখা হয়েছিল।
পরিসংখ্যান অনুসারে মোট ৪৪০ জন আশ্রয়প্রার্থী শিশু নিখোঁজ হয়েছিল। গত নভেম্বর মাসে ১৪৪ জনকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়। বাকি শিশুদের কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনের প্রধান লেখক এবং প্রধান তদন্তকারী, ইউসিএল এর ঝুঁকি ও দুর্যোগ হ্রাস বিভাগের সোনজা আইয়েব-কার্লসন বলেছেন, “ এটি একটি জাতীয় কেলেঙ্কারী যার পুনরাবৃত্তি হওয়া উচিত নয়। যারা নিখোঁজ রয়েছে তাদের খুঁজে পাওয়ার জন্য কী প্রচেষ্টা করা হয়েছে এবং তারা নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করার বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। ”
ইসিপিএটি যুক্তরাজ্যের প্রধান নির্বাহী প্যাট্রিসিয়া ডুর যোগ করেছেন: “এই গবেষণাটি আমাদের ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। নিখোঁজ শিশুদের সন্ধান করা অত্যন্ত জরুরি এবং এই শিশুদের সুরক্ষার জন্য স্বাধীন তদন্তের দাবি জানাই।”
হোম অফিসের এক মুখপাত্র বলেন, “এই প্রতিবেদনের অভিযোগগুলি অত্যন্ত গুরুতর। হারিয়ে যাওয়া শিশুরা অত্যন্ত দুর্বল হতে পারে এবং তাদের কল্যাণ ও সুরক্ষা একটি কেন্দ্রীয় উদ্বেগ হওয়া উচিত। আমরা এই অনুসন্ধানগুলি সাবধানতার সাথে বিবেচনা করব। নতুন সরকার আশ্রয় ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। নতুন সরকার সংকল্পবদ্ধ এই সকল সমস্যা সমাধান করার জন্য।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৭ জুলাই ২০২৪