21.4 C
London
July 16, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যের ইপিংয়ে অভিবাসী হোটেলে কর্মীদের ওপর বর্বর হামলাঃ পুলিশ বলছে বর্ণবাদী অপরাধ

ইংল্যান্ডের এসেক্স কাউন্টির ইপিং শহরে অবস্থিত ‘দ্য বেল হোটেল’-এ শিফটে যোগ দিতে আসা দুই নিরাপত্তাকর্মীর ওপর বর্ণবিদ্বেষী হামলার ঘটনা দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। রবিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যায় হোটেলের পাশে একটি বাসস্টপে এই বর্বর হামলা চালায় একদল উগ্র স্থানীয় বাসিন্দা, যারা অভিবাসীদের উপস্থিতি নিয়ে বিক্ষোভে নেমেছিল।

দুই নিরাপত্তাকর্মী বাস থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে হামলাকারীরা তাদের ঘিরে ধরে—তাদের অভিবাসী বা হোটেলের বাসিন্দা মনে করে। এক হামলাকারী একজন রক্তাক্ত কর্মীকে উদ্দেশ্য করে গালাগাল করে চিৎকার করে বলে, “ঘরে ফিরে যাও কুত্তা।” অপর এক নারী চেঁচিয়ে বলে, “অবৈধ অভিবাসী হলে এমনটাই হওয়া উচিত।” ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

হামলার শিকার কর্মীরা কোনও মতে বিক্ষোভকারীদের মধ্য দিয়ে হোটেলে ঢুকে নিরাপত্তা গ্রহণ করেন। তাদের সাদা ইউনিফর্ম রক্তে ভিজে গিয়েছিল। পরে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যদিও আঘাতগুলো প্রাণঘাতী নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, এক হামলাকারী হোটেলের ছাদে উঠে বিশাল একটি ঘণ্টা বাজায়, আর জনতা তা দেখে উল্লাসে ফেটে পড়ে। পাল্টা প্রতিবাদ জানাতে আসা বর্ণবাদবিরোধী সংগঠন ‘ওয়ালথাম ফরেস্ট স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম’-এর সদস্যদের পুলিশ এলাকা থেকে সরিয়ে নেয় উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায়।

এসেক্স পুলিশ জানিয়েছে, হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং এ ঘটনাকে ‘বর্ণবিদ্বেষমূলক সহিংসতা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। পুলিশ বলেছে, “আমরা এই হামলার ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ব্যাপক তদন্ত করছি। এই ধরণের সহিংসতা একেবারেই বরদাস্ত করা হবে না।”

স্থানীয় কাউন্সিল নেতা ক্রিস হুইটব্রেড বলেন, “ছোট শহরের প্রাণকেন্দ্রে হোটেলকে অভিবাসী আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তর করাটা অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত। এটা স্থানীয়দের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং আশ্রয়প্রাপ্তদের জন্যও অমানবিক পরিবেশ তৈরি করছে।”

স্থানীয় বাসিন্দা ও বিক্ষোভে উপস্থিত অ্যাডাম ব্রুকস জানান, “আমার উপস্থিতি কোনো রাজনৈতিক কারণে নয়। আমি একজন উদ্বিগ্ন বাবা হিসেবে এসেছিলাম, কারণ অনেক নারী বলেছেন তারা হোটেলের বাসিন্দাদের দ্বারা উত্যক্ত হয়েছেন।” তবে তিনি স্পষ্ট করে দেন, “সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

ঘটনার পটভূমিতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, ওই হোটেলের বাসিন্দা ইথিওপীয় নাগরিক হাদুশ গারবারস্লাসি কেবাটুর (৩৮) বিরুদ্ধে তিনটি যৌন নিপীড়নের অভিযোগসহ এক কিশোরীকে যৌন কার্যকলাপে প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন, তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এ ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয় গত বছর রদারহ্যামে ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনার কথা, যেখানে ডানপন্থী দাঙ্গাকারীরা একটি অভিবাসী হোটেলে হামলা চালায়। সেই সময়ও পুলিশের ওপর ইট-পাথর নিক্ষেপ, জানালাভাঙা ও হোটেলে জোরপূর্বক প্রবেশের মতো ভয়াবহ দৃশ্য দেখা গিয়েছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ধারাবাহিকতা স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে, কীভাবে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও ভীতিজনক প্রচারণা অভিবাসন-সংক্রান্ত ইস্যুতে সহিংসতা উসকে দিচ্ছে এবং সমাজে বিভাজন তৈরি করছে।

সূত্রঃ দ্য মেট্রো

এম.কে
১৬ জুলাই ২০২৫

আরো পড়ুন

স্কটল্যান্ডে তুষারপাত, শীতল হয়ে উঠছে যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া

নিউজ ডেস্ক

ফ্রান্স সীমান্তে যুক্তরাজ্যের নীতিমালার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের প্রতিবাদ সমাবেশ

টিউলিপকে লন্ডনের ফ্ল্যাটদাতা কে এই মোতালিফ, কীভাবে তিনি হাসিনা ঘনিষ্ঠ