TV3 BANGLA
ফিচার

যুক্তরাজ্যের ইমিগ্রেশন আইনে অতিরিক্ত আবেদন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের সুপারিশ

UNHCR যুক্তরাজ্যের অতিরিক্ত আবেদন প্রক্রিয়া এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি নিয়ে একটি নিরীক্ষার (audit) পর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। অতিরিক্ত আবেদন প্রক্রিয়া মূলত তখন ব্যবহৃত হয় যখন একজন ব্যক্তি পূর্ববর্তী প্রত্যাখ্যানের পর নতুন করে আশ্রয়ের আবেদন করতে চান।

এই নিরীক্ষাটি ২০২৩ ও ২০২৪ সালে পরিচালিত হয় এবং এতে লিভারপুলের “Further Submissions Unit”-এ একটি পরিদর্শন, ৪০টি নির্ধারিত মামলার নিরীক্ষা, ৯ জন আইনজীবী ও ৭ জন আবেদনকারী ও শরণার্থীর সাক্ষাৎকার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৪০টি মামলার মধ্যে ২২টি পূর্ববর্তী দাবির ভিত্তিতেই করা হয়েছিল। ২০টি ক্ষেত্রে আশ্রয় মঞ্জুর করা হয়, যার মধ্যে ১২টি ছিল শরণার্থী মর্যাদা, ১টি মানবিক সুরক্ষার জন্য এবং ৭টি ব্যক্তিগত জীবনের ভিত্তিতে। বাকি ২০টি ক্ষেত্রে আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়, যার মধ্যে ১৩টি নতুন দাবি হিসেবে গৃহীত হয় (যার ফলে আপিলের অধিকার ছিল), এবং ৭টি সরাসরি বাতিল করা হয়, যেগুলোর কোনো আপিলের অধিকার ছিল না। ২৮টি মামলার সিদ্ধান্ত আসতে এক বছরের বেশি সময় লেগেছে।

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (Home Office) অতিরিক্ত আবেদনের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে না, তাই UNHCR-এর এই তথ্য মূল্যবান। ২০২২ সালে ৫,৯১৭টি অতিরিক্ত আবেদন করা হয়েছিল, যা ২০২৩ সালে বেড়ে ৬,৬৯৯-এ দাঁড়ায়। উভয় বছরেই আবেদনকারীদের শীর্ষ পাঁচটি জাতীয়তা ছিল—ইরাক, আলবেনিয়া, চীন, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান।

প্রতিবেদনে কিছু সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হল আবেদনকারীদের সরাসরি উপস্থিত হতে বাধ্য করা। এটি বিশেষ করে তাদের জন্য মানসিক চাপ ও ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, কারণ অনেকে একা লিভারপুলে যেতে বাধ্য হন এবং আটক হওয়ার আশঙ্কা করেন। এক আইনজীবীর তথ্য অনুযায়ী, কিছু ক্ষেত্রে এটি সত্যিই ঘটেছে।

সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের নির্ধারিত মানদণ্ডের চেয়ে উচ্চতর প্রমাণের মান প্রয়োগ করার প্রবণতার কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যা সরকারি নির্দেশিকার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। ২০২২ সালের “Nationality and Borders Act”-এর আগে ও পরে বিভিন্ন মানদণ্ড থাকায় সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের জন্য প্রক্রিয়াটি জটিল হয়ে পড়েছে।

UNHCR-এর সুপারিশসমূহ (সংক্ষেপে)

আবেদন প্রক্রিয়াটি ইমেইল বা অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করা উচিত, যাতে আবেদনকারীদের সরাসরি লিভারপুল, কার্ডিফ, গ্লাসগো বা বেলফাস্টে যেতে না হয়।

মামলাগুলো দক্ষতার সাথে বাছাই করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা, যাতে সিদ্ধান্তের গুণগত মান উন্নত হয়।

সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের আইনি প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগের উৎসাহ প্রদান এবং দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজন হলে সাক্ষাৎকার নেওয়ার ব্যবস্থা করা।

সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে তারা সঠিকভাবে প্রমাণ মূল্যায়ন করতে পারেন এবং অযৌক্তিক কারণে আবেদন প্রত্যাখ্যান না হয়।

সিদ্ধান্তের চিঠিগুলোর গুণমান উন্নত করতে প্রুফরিডিং ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পর্যালোচনা ব্যবস্থা জোরদার করা।

যদি কোনো আবেদনকারী শুধুমাত্র প্রমাণ হিসেবে চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য জমা দেন (থাকার অনুমতি পাওয়ার জন্য নয়), তাহলে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের উচিত চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়গুলোর বিস্তারিত মূল্যায়ন না করা।

আশ্রয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিশ্বাসযোগ্যতার (credibility) ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার পরিবর্তে অন্যান্য বিষয়কেও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

যেসব মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে, সেগুলোকে নতুন দাবি হিসেবে বিবেচনা করার একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রক্রিয়াগুলো আরও ডিজিটালাইজড হওয়ার পরও আবেদনকারীদের সরাসরি উপস্থিত হতে বাধ্য করা আরও পিছিয়ে যাওয়ার মতো একটি সিদ্ধান্ত বলে মনে হচ্ছে। এটি পরিবর্তনের জন্য ইতিবাচক মনোভাবের অভাব দেখায়, যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে অনেকেই মনে করেন এটি কার্যকর পদ্ধতি নয়।

সূত্রঃ ফ্রি মুভমেন্ট

এম.কে
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আরো পড়ুন

এক রাতের জন্য ভাড়া দেওয়া হত পুরো দেশ

মোবাইল ফোনের বিকল্প হতে যাচ্ছে ‘ইলেক্ট্রনিক ট্যাটু’

শ্রীমঙ্গলের তৈরি পুতুল যাচ্ছে ইউরোপ আমেরিকায়