যুক্তরাজ্যে ২০২৫ সালে কয়েক লাখ মানুষ ডিজিটাল ইমিগ্রেশন সিস্টেমে পরিবর্তিত হতে বাধ্য হবে। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে ফিজিক্যাল ইমিগ্রেশন ডকুমেন্টস বাতিল হয়ে ডিজিটাল সিস্টেমে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে বহুলোকের ফিজিক্যাল ইমিগ্রেশন ডকুমেন্টসের মেয়াদও শেষ হবে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে যুক্তরাজ্যের হোম অফিস ফিজিক্যাল ইমিগ্রেশন ডকুমেন্ট বাতিল করে পুরোপুরি ডিজিটাল সিস্টেমে রূপান্তরিত হবে। বিদেশি বা ভিনদেশী নাগরিকদের ভ্রমণ, কাজের অধিকার প্রমাণ বা বাসা ভাড়া নিতে ডিজিটাল রেকর্ডের ওপর নির্ভর করতে হবে।
এয়ারলাইন্স, ফেরি এবং আন্তর্জাতিক ট্রেন অপারেটররা ভ্রমণ ডকুমেন্ট দেখানোর সময় যাত্রীদের ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস স্বয়ংক্রিয়ভাবে চেক করতে পারবে।
কিছু অধিকার কর্মী এবং বিশেষজ্ঞরা হোম অফিসকে নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে সরকার ই-ভিসার “মসৃণ স্থানান্তর” নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ৩১ মার্চ পর্যন্ত ফিজিক্যাল ডকুমেন্টের জন্য তিন মাসের গ্রেস পিরিয়ড ঘোষণা করেছে।
২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে, ফিজিক্যাল ইমিগ্রেশন ডকুমেন্টের পরিবর্তে ই-ভিসা ব্যবহার করতে হবে। সরকারি ওয়েবসাইটে “View and Prove” ব্যবহার করে ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস প্রমাণ করতে হবে। তাছাড়া একটি শেয়ার কোড দেওয়া হবে, যা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করে ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস জানানো সম্ভব হবে।
যাদের ফিজিক্যাল ভিসা ডকুমেন্ট আছে, তাদের ৩১ ডিসেম্বরের আগে একটি UKVI অ্যাকাউন্ট সেটআপ করতে হবে এবং তাদের ই-ভিসার সঙ্গে ট্রাভেল ডকুমেন্ট (যেমন পাসপোর্ট) সংযুক্ত করতে হবে।
এয়ারলাইন্স এবং অন্যান্য ভ্রমণ সংস্থাগুলো চেক-ইন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস চেক করবে।
কোনো সমস্যার ক্ষেত্রে যে কেউ “View and Prove” ওয়েবসাইট ব্যবহার করে স্ট্যাটাস যাচাই করতে পারবে। যাত্রীদের অবশ্যই তাদের ট্রাভেল ডকুমেন্ট UKVI অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
ডিসেম্বরের শুরুতে হোম অফিস জানায়, ইতোমধ্যে ৩.১ মিলিয়ন মানুষ ফিজিক্যাল ডকুমেন্ট থেকে ই-ভিসায় পরিবর্তিত হয়েছে। তবে ৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে এই পরিবর্তন করতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ১ মিলিয়ন মানুষ এখনও তাদের আবেদন জমা দেয় নাই বা ই-ভিসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই।
তবে ৩১ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত ফিজিক্যাল ডকুমেন্টস ব্যবহার করা যাবে। এই গ্রেস পিরিয়ডটি দেওয়া হয়েছে যাতে মানুষ সমস্যাগ্রস্ত না হয় এবং তারা বিপদে না পড়ে।
অধিকার কর্মী এবং বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন হোম অফিসের পূর্ববর্তী ডিজিটাল সিস্টেমে ত্রুটি থাকার কারণে মানুষ সমস্যায় জর্জরিত হতে পারে। নানা ধরনের বিপত্তির সম্মুখীন হতে পারে ই-ভিসা সম্বলিত লোক। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ব্যক্তির নাম, ছবি বা স্ট্যাটাস ভুলভাবে যুক্ত হয়ে এসেছে সিস্টেমে।
“Merged identities” সমস্যার ফলে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির তথ্য ভুলভাবে একত্রিত হয়েছে।
যাদের ভিসা নবায়নের জন্য অপেক্ষমাণ অবস্থায় রয়েছে অর্থাৎ 3C লিভ স্ট্যাটাস যুক্ত আছে, তাদের ডিজিটাল ডকুমেন্ট না থাকার কারণে সমস্যার মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে।
ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ ড. কুবা জাব্লোনোস্কি এই পরিবর্তন সম্পর্কে বলেন, ই-ভিসা সিস্টেম সহজ হতে পারে, তবে সিস্টেমে ত্রুটি হলে ব্যবহারকারীরা সমস্যায়ও পড়তে পারেন।
বিদেশি বা ভিনদেশিদের ই-ভিসা বাধ্যতামূলক লাগবে তা নিশ্চিত করেছে হোম অফিস। তাই সকল ভিনদেশিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে দ্রুত UKVI অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে এবং সময়মতো তথ্য আপডেট করতে।
যারা ই-ভিসা সম্পর্কে এখনও জানতে পারে নাই বা জানলেও অ্যাকাউন্ট তৈরি করেনি তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। ইউকে হতে ভ্রমণের সময় তাদের বোর্ডিং প্রক্রিয়া পরিচালনা করা ব্যক্তিরা অনেকক্ষেত্রে তাদে যুক্তরাজ্যে প্রবেশে বাঁধা প্রদান করতে পারে।
এমনকি কেউ যদি ই-ভিসায় স্থানান্তর করেও থাকেন, তবুও ‘মার্জড আইডেন্টিটি’ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন, যা আগেও হোম অফিসের সিস্টেমে দেখা গিয়েছে।
“সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো, ভ্রমণ সেবাদানকারী সংস্থাগুলো এই পরিবর্তন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকলেও তাদের সকল কর্মীরা হয়তো এই নতুন নিয়ম সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন নয়। এর ফলে অনেক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।”
সূত্রঃ দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট
এম.কে
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪